নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২৪ নভেম্বর। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন ইয়ান বোথামের জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের এই দিনে ধরিত্রি পেয়েছিল এই ইংলিশ যাদুকরকে।
২৪ নভেম্বর। ২০১২ সালের এই দিনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে নিজের শততম উইকেট উদযাপন করেছিলেন সাকিব আল হাসান।
২৪ নভেম্বর। ৬ বছর পর সেই একই দিন আবারো ফিরে এলো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের জীবনে। আরো বড় খুশির বারতা নিয়ে। সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সাদা পোষাকের দুইশ’তম উইকেটের দেখাও পেলেন সাকিব। সেবার ভেন্যু ছিল খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, এবার উপলক্ষটি এনে দিয়েছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। সেই জহুর আহমেদ, যেখানেই ‘বোলার সাকিব’কে খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ!
দিনটি আরো মহিমান্বিত হবার কারণ, এই বোথামের জন্মদিনেই তাকে ছাপিয়েই টেস্টে দ্রæততম ২০০ উইকেট আর তিন হাজার রানের মাইলস্টোন স্পর্ষ করলেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। এই কীর্তি গড়তে ইংলিশ অলরাউন্ডারের যেখানে লেগেছিল ৫৫ টেস্ট, সাকিব সেখানে খেলেছেন এক ম্যাচ কম। পেছনে ফেললেন গতকালই ৬৩ বছর পূর্ণ করা বোথামকে।
বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে দুইশ টেস্ট উইকেটের মাইলফলকের দিন সাকিব একটি রেকর্ডে ছাড়িয়ে গেলেন ক্রিকেট ইতিহাসের সবাইকে। ৩ হাজার রানের ক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন বেশ আগেই। ২০০ উইকেট তাকে জায়গা করে দিল অভিজাত ক্লাবে, যে ক্লাবের সদস্য সাকিবকে নিয়ে হলো ১৪ জন। তবে সবচেয়ে কম টেস্ট খেলে সেখানে পৌঁছালেন সাকিব। বাংলাদেশের হয়ে ১০০ টেস্ট উইকেট আছে সাকিব ছাড়া আর কেবল মোহাম্মদ রফিকের।
২০০ উইকেট থেকে ৪ উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে শুরু করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট। প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে গতকাল শুরু করলেন নতুন বল হাতে। তার দ্বিতীয় ওভারে স্টাম্পড কাইরান পাওয়েল। ব্যাস হয়ে গেল ইতিহাস!
দেশের হয়ে সবার আগে ২০০ ছুঁলেন যিনি, প্রথম টেস্ট উইকেটের জন্য তার অপেক্ষা করতে হয়েছে চতুর্থ টেস্ট পর্যন্ত। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ওয়েলিংটন টেস্টে ক্রেইগ কামিংকে ফিরিয়ে শুরু করেন উইকেট শিকার অভিযান। প্রথম ৬ টেস্ট শেষেও কেবল উইকেট ছিল ৩টি। তখনও পর্যন্ত একটু বোলিং আর একটু ব্যাটিং দিয়েই ছিলেন টেস্ট দলে। ২০০৮ সালেই অক্টোবরে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে সেই সময়ের কোচ জেমি সিডন্স হুট করেই ঘোষণা করলেন ‘দলের সেরা স্পিনার সাকিব’। তার বোলিং ভাগ্যও যেন বদলে গেল রাতারাতি। সেই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটি বগলদাবা করলেন ৩৬ রানে ৭ উইকেট নিয়ে।
এরপর আর থামাথামি নেই। ১০ বছর আগে যে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বোলার হিসেবে তার নবযাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই মাঠেই এবার রচনা হলো নতুন অর্জনের গল্প। সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ারের ৫০তম উইকেটও ছিল এই মাঠে। ভারতের ভিভিএস লক্ষনকে আউট করে ৫০ ছুঁয়েছিলেন ১৫তম টেস্টে। উইকেটের সেঞ্চুরি হয় ২৮তম টেস্টে, খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্যারেন স্যামিকে ফিরিয়ে। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে সাকিব দেখা পান ১৫০ উইকেটের। ক্যারিয়ারে সেটি তার ৪৩তম টেস্ট, জো রুট ছিলেন দেড়শতম শিকার। দেড়শ থেকে দুইশ আসতে লাগল মাত্র ১১ টেস্ট।
সাকিবের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে দুইশ’ উইকেট ছুঁয়েছেন টেস্ট ইতিহাসের ৪৫ জন বোলার। তবে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে তার চেয়ে দ্রæততম কেবল দু’জন। ৪৭ টেস্টে দুইশ’ ছুঁয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথ, ৫১ টেস্টে ভারতের বিষেন সিং বেদি।
টেস্টে ২শ’ উইকেট ও ৩ হাজার রান
অলরাউন্ডার ম্যাচ
সাকিব আল হাসান ৫৪
ইয়ান বোথাম ৫৫
ক্রিস কেয়ার্নস ৫৮
অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ৬৯
কপিল দেব ৭৩
ইমরান খান ৭৫
গ্যারি সোবার্স ৮০
রিচার্ড হ্যাডলি ৮৩
শন পোলক ৮৭
ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ৮৯
জ্যাক ক্যালিস ১০২
চামিন্দা ভাস ১০৮
স্টুয়ার্ট ব্রড ১২১
শেন ওয়ার্ন ১৪২
টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী
বোলার ম্যাচ ইনিংস উইকেট
সাকিব আল হাসান ৫৪ ৯১ ২০১*
মোহাম্মদ রফিক ৩৩ ৪৮ ১০০
তাইজুল ইসলাম ২২ ৪০ ৯৪
মাশরাফি মুর্তজা ৩৬ ৫১ ৭৮
শাহাদাত হোসেন ৩৮ ৬০ ৭২
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১ম টেস্ট ৩য় দিন
টস : বাংলাদেশ, জহুর আহমেদ (চট্টগ্রাম)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৩২৪
উইন্ডিজ ১ম ইনিংস ২৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস (২য় দিন শেষে ১৭ ওভারে ৫৫/৫, ইমরুল ২, সৌম্য ১১, মুমিনুল ১২, মিঠুন ১৭, সাকিব ১, মুশফিক ১১*, মিরাজ ০*; ওয়ারিকান ২/২২, চেস ১/১৬, বিশু ১/৫)
রান বল ৪ ৬
মুশফিক বোল্ড গ্যাব্রিয়েল ১৯ ৩৯ ১ ০
মিরাজ ক ডরিচ ব বিশু ১৮ ৩৫ ৩ ০
মাহমুদউল্লাহ ক হোপ ব বিশু ৩১ ৪৬ ১ ১
নাঈম ক হোপ ব বিশু ৫ ২৭ ০ ০
তাইজুল ক ওয়ারিকান ব চেস ১ ৫ ০ ০
মুস্তাফিজ অপরাজিত ২ ৩ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ২, লেবা ১, নো ৩) ৬
মোট (অলআউট, ৩৫.৫ ওভার) ১২৫
উইকেট পতন : ১-১৩ (ইমরুল), ২-১৩ (সৌম্য), ৩-৩২ (মুমিনুল), ৪-৩৫ (সাকিব), ৫-৫৩ (মিঠুন), ৬-৬৯ (মুশফিক), ৭-১০৬ (মিরাজ), ৮-১২২ (নাঈম), ৯-১২৩ (মাহমুদউল্লাহ), ১০-১২৫ (তাইজুল)।
বোলিং : রোচ ১-০-১১-০, ওয়ারিকান ১৬-২-৪৩-২, চেস ৬.৫-১-১৮-৩, বিশু ৯-০-২৬-৪, গ্যাব্রিয়েল ৩-০-২৪-১।
উইন্ডিজ ২য় ইনিংস (লক্ষ্য ২০৪) রান বল ৪ ৬
ব্রাফেট এলবি ব তাইজুল ৮ ২৩ ০ ০
পাওয়েল স্ট্যাম্প ব সাকিব ০ ১ ০ ০
হোপ ক মুশফিক ব সাকিব ৩ ৬ ০ ০
আমব্রিস ক মুশফিক ব তাইজুল ৪৩ ৬২ ৪ ০
চেস এলবি ব তাইজুল ০ ৪ ০ ০
হেটমায়ার ক নাঈম ব মিরাজ ২৭ ১৯ ৩ ১
ডরিচ এলবি ব তাইজুল ৫ ১৪ ০ ০
বিশু বোল্ড তাইজুল ২ ২১ ০ ০
রোচ এলবি ব তাইজুল ১ ৭ ০ ০
ওয়ারিকান ক সাকিব ব মিরাজ ৪১ ৫৫ ৩ ১
গ্যাব্রিয়েল অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৯) ৯
মোট (অলআউট, ৩৫.২ ওভার) ১৩৯
উইকেট পতন : ১-৫ (পাওয়েল), ২-১১ (হোপ), ৩-১১ (ব্রাফেট), ৪-১১ (চেস), ৫-৪৪ (হেটমায়ার), ৬-৫১ (ডরিচ), ৭-৬৯ (বিশু), ৮-৭৫ (রোচ), ৯-১৩৮ (ওয়ারিকান), ১০-১৩৯ (আমব্রিস)।
বোলিং : সাকিব ৭-০-৩০-২, নাঈম ৭-১-২৯-০, তাইজুল ১১.২-২-৩৩-৬, মিরাজ ৮-১-২৭-২, মুস্তাফিজ ২-০-১১-০।
ফল : বাংলাদেশ ৬৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মুমিনুল হক (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : ২ ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ তে এগিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।