Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লড়াই আ.লীগ-বিএনপির

রাজনীতিতে নিত্যনতুন মেরুকরণ

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে খুলনার রাজনীতিতে নিত্য-নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃতরাও সরকারি দলের আশীর্বাদ পেতে আয়োজন করছেন নানা অনুষ্ঠান। বিরোধী দল-মতের প্রার্থীরা প্রকাশ্যে না থাকলেও শোডাউনে ব্যস্ত ক্ষমতাসীনরা।
বর্তমান সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি সাবেক ও নতুন প্রার্থীরা সর্বশেষ চেষ্টাটাই করছেন দলীয় মনোনয়নের। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ব্যবসায়ী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলকে খুলনা-২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে স্থানীয় আ.লীগ। সমর্থন রয়েছে আ.লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বলা যায় দলটির চূড়ান্ত প্রার্থী। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত আ.লীগ-বিএনপির! পদ্মার এ পাড়ের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ খুলনা-২ আসনে ভোটের লড়াই হবে ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষ’-এ। বিজয়ের আশাবাদী দু’শিবিরেই। প্রধান এ দু’দলের নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত। তবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এছাড়া নির্বাচনের সময়ে বিএনপির সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে কেসিসি’র কাউন্সিলর, পৌরসভা মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হিড়িক লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে ভিড় জমাতে শুরু করেছে এই সুবিধাবাদী নেতারা। অথচ দু:সময় দলটির পাশে ছিল না এই সুবিধাবাদীরা। এতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা বেশ ক্ষুব্ধ।
অন্যদিকে, বিএনপির দুর্গখ্যাত খুলনা-২ আসনটি পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ ও স্বতঃস্ফূর্ত দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঘরোয়া কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হয়েছেন। গত ১৫ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বেলা ১০টা পর্যন্ত এক লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ ভোট পান নজরুল ইসলাম মঞ্জু। পরে জাল ভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এক লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তবে এ নির্বাচনের ফলাফল বিএনপির ভোটের আসল চিত্র নয় বলে দাবি দলটির তৃণমূলে। দলমত নির্বিশেষে খুলনাতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে দাবি তাদের। এ কারণেই দলীয় মনোনয়নের জন্যে লবিং বা দুশ্চিন্তায় না থেকে সংসদীয় আসনে ঘরোয়া কর্মসূচিতে ফুরফুরে মেজাজে অংশ নিচ্ছেন তিনি। তবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় বিএনপির কেন্দ্রীয় এ সাংগঠনিক সম্পাদক। দলীয় কার্যালয়ে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সূত্রমতে,বিগত দিনে খুলনা-২ আসনে বিএনপিরই প্রাধান্য দেখা গেছে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ রাজ্জাক আলী বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিজয়ী হন এ আসনটিতে। পরে তাঁর ছেড়ে দেয়া আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আসগর লবী। তারপর নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে পরাজিত করেছিলেন এক হাজার ৬৭০ ভোটের ব্যবধানে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ফলে বিজেপির তৎকালীন নগর সভাপতি রাশিদা করিমকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান। এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্রই সংগ্রহ করেননি তিনি। মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু পূর্বেই গত ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে খুলনা-২ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন নগর আ.লীগের সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তারপর থেকেই ঘরোয়া কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হয়েছেন শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। গত ২৬ অক্টোবর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে খুলনা-২ আসনে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেন তিনি। যা চলমান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল; এ দলটি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের বিশাল প্ল্যাটফর্ম। সকলকে সব কর্মসূচিতে আসার প্রয়োজনও হয় না। তবে প্রয়োজনে খুলনা বিএনপি নেতাকর্মীরা ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ। দুঃসময়ে যারা দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, করছে ও ভবিষ্যতে করবে নিশ্চিয় ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। খুলনাবাসী তাদের ক্ষমা করবে না। আমরাও তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বয়কট করবো।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ