Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনগণের মূল্যায়ন নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থীদের মধ্যে দৌঁড় ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারনা না থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা জানিয়েছেন। প্রকাশ্যে মিটিং মিছিল দেখা না গেলেও পাড়া মহল্লায় অফিস-আদালত চত্বরসহ চা-দোকান সব জায়গাতেই নির্বাচনী আলোচনা। মহাজোট প্রার্থীরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিনাজপুরের ৬টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পাটির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশি থাকলেও বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট ভুগছে প্রার্থী সঙ্কটে।
দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসন থেকে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের পক্ষে মনোনয়ন ক্রয় করে জমা দিয়েছেন বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মনোরঞ্জন শীল গোপাল এর পাশাপাশি বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা, ছাত্রলীগ নেতা আবু হোসাইন বিপু, এড, হামিদুল হক উল্লেখযোগ্য। আরো কয়েকজন মনোনয়ন কিনলেও বড় দলগুলির মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর এদের অধিকাংশকেই দেখা যাবে না। তবে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপালকে মনোনয়ন দেয়া হলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের প্রকাশ্যে না হলেও বিরোধীতা থাকবে একশ’ ভাগ। যা কিনা মহাজোট প্রার্থীর পরাজয়ের কারণও হতে পারে। কেননা মনোরঞ্জন শীল গোপাল এর দুর্নীতির বিষয়টি ওপেন সিক্রেট ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন ক্রয় করেছেন বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি শিল্পপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, কাহারোল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী, যুবদল নেতা মেহেদী হাসান সুমন ও রেজওয়ানুল ইসলাম। জামায়াতের শক্ত অবস্থান হিসাবে পরিচিত এই আসনে বিএনপির সম্মতি সাপেক্ষে বর্তমান বীরগঞ্জ পৌর মেয়র মো. হানিফ স্বতন্ত্র হিসাবে মনোনয়ন কিনেছেন বলে একটি সুত্র দাবি করেছে। পৌর মেয়র যদি ঐক্যফন্ট্রের একক ছাড় পায় তাহলে আসনটি এবার আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একইভাবে বিএনপির মঞ্জুরুলও এগিয়ে আছেন। এক্ষেত্রে জামায়াতের সমর্থন অবশ্যই দরকার হবে।
দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ও কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পাশাপাশি সাবেক এমপি সতিষ চন্দ্র রায়ের পুত্র আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ মানবেন্দ্র রায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। পিতার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি মানবেন্দ্র রায়ের শোডাউন ভোটারদের ভাবিয়ে তুলেছে। আছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জুলফিকার হোসেন। আওয়ামী লীগের এমপির অত্যন্ত ঘনিষ্টজন হিসাবে যারা রয়েছেন তারা ১৯৭১ সালের পিস কমিটির সভাপতি পরিবারের সন্তান হওয়ায় সচেতন ভোটারদের মনে ক্ষোভ রয়েছে। এমনই একজন রয়েছেন তিনি বিএনপির সময় সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে এখন ব্যাংকের উচচপদস্থ কর্মকর্তা। যদিও বিএনপির উপরমহলের সাথে তার যোগাযোগ এবং সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। কেবলমাত্র ক্ষমতার কারনেই বর্তমান এমপির সাথে প্রকাশ্যে রয়েছে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হওয়ায় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েেেছ।
অপরদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লেঃ জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের পৈত্রিক আবাসস্থল এই আসনে তিনি নির্বাচনী দৌঁড়ে আসেননি। তার জায়গায় সাবেক ছাত্র নেতা এম এ জলিল, বিরল উপজেলা চেয়ারম্যান আ ন ম বজলুর রশিদ, সাদের রিয়াজ চৌধুরী পিনাক ও অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম মনোনয়ন নিয়েছেন। এই আসনটিতে আওয়ামী বিজয় নিশ্চিত মনে করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন মনোভাবটিকে আমলে না আনায় মিরাকেল কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, সংবিধান প্রণেতা কমিটির অন্যতম সদস্য আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ এম ইকবালুর রহিম এর পাশাপাশি আরো যারা মনোনয়ন দৌঁড়ে অংশ নিয়েছেন তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি বাম নেতা হিসাবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আশফাক হোসেন, ফারুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল ও মোমেনা আক্তার লিপি। যদিও নির্বাচনী মাঠে প্রকাশ্যে ইকবালুর রহিম ছাড়া কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে একটি সুত্র বলেছে, মনোনয়ন জমা দিলেও সদরে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মী ইকবালুর রহিমের নেতৃত্বেই নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এগিয়ে যাচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা জাতীয় পাটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফী রুবেল।
অপরদিকে, বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন নিয়েছেন তারা হলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন সাবেক এমপি মরহুমা খুরশিদ জাহান হক এর ছেলে শাহারিয়ার আক্তার ডন, বিএনপি নেতা এডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, শিল্পপতি হাফিজুর রহমান (দিনাজপুর-৪ আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাশি) লুতফর রহমান মিন্টু (দিনাজপুর-৬ আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাশি)। মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন শাহারিয়ার আক্তার ডন। একইভাবে মোফাজ্জল হোসেন দুলালও কৌশলী প্রচারনায় ব্যস্ত রয়েছেন।
দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনে বর্তমান এমপি পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলীর পাশাপাশি যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তারা হলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং চিরিরবন্দরের সন্তান ও শিক্ষানুরাগী আমেনা বাকি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এম আমজাদ হোসেন, সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানু, এডভোকেট সাইফুল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম।
অপরদিকে, এই আসনে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান মিঞা এবং শিল্পপতি হাফিজুর রহমান সরকার। জামায়াতের ঘাটি হিসেবে বিবেচিত খানসামা চিরিরবন্দর আসনটিতে জোটের কাছে জামায়াতের দাবি থাকলেও থাকতে পারে।
দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসনে বর্তমান এমপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমানের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাকারিয়া জাকির, এডভোকেট শান্তুনু সফেদ আকতার তুহিন, মাহদুননবী নাবী ডাঃ তোফাজ্জল হোসেন। নির্বাচনী মাঠে বর্তমান এমপির পাশাপাশি ব্যাপক জন সমর্থন নিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিজের জন্য প্রচারনা ও শোডাউন করে চলেছেন তরুন নেতা জাকারিয়া জাকির চমক সৃষ্টি করেছেন। এই আসনে জাতীয় পাটি প্রার্থী সোলায়মান সামিতো মনোনয়ন দাখিলের অনেক আগে থেকেই মাঠ কাঁপিয়ে চলেছেন।
মহাজোটের অন্যতম প্রার্থী হচ্ছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক ব্যবসায়ী পরীক্ষিত বিএনপি নেতা এ জেড এম রেজওয়ানুল হক, ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপি সভাপতি খুরশীদ আলম মতি ও হাসানুজ্জামান উজ্জল। এই আসনে বর্তমান আওয়ামী এমপির বিরুদ্ধে গোত্রীয় দ্ব›দ্বই ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের উজ্জীবিত করে রেখেছে।
দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-হাকিমপুর-বিরামপুর-ঘোড়াঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি সিবলি সাদিকের পাশাপাশি প্রচারনা ও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তারা হলেন, সাবেক এমপি আজিজুল হক চৌধুরী, আলতাফুজ্জামান মিতা, আতাউর রহমান, মিজানুর রহমান মন্ডল, আক্কাস আলী, পারভেজ কবীর, খায়রুল আলম রাজু, লিয়াকত আলী সরকার টুটুল, সামসুল আলম, শাহনাজ পারভীন আমির হোসেন, ডাঃ মো. মোশাররফ হোসেন, আয়নাল হক চৌধুরী, এডভোকেট আবদুল হাকিম, জামিল হোসেন চলন্ত, এমদাদুল হক চৌধুরী, আবদুর রহমান লিটন, রাফে খন্দকার শাহ, মাকসুদুর রহমান লাভু চৌধুরী ও সুলতানা আকতার বর্ষ। মনোনয়ন প্রত্যাশি রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের আশির্বাদপুষ্ট জাপার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপূরীর মালিক দেলওয়ার হোসেন। বর্তমান এমপি ও দেলওয়ার হোসেন একই বংশধ্বর হওয়ায় আসনটিকে মামা ভাগিনার আসন বলেই মহাজোটে পরিচিতি লাভ করেছে।
এই আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন কিনেছেন তারা হলেন লুৎফর রহমান মিন্টু ও ড্যাব নেতা ডাঃ জাহিদ হোসেন। তবে এই আসনটি দাবি করেছে জামায়াত। ২০০৮ এর নির্বাচনে এই আসনে অল্প ভোটে হেরে যাওয়া আসনটি থেকে জেলা জামায়াতের আমীর এডভোকেট আনোয়ারুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে গণ সংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে।
রংপুরের ৬টি আসনে জাতীয় পার্টির
চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য বেশি
রংপুর থেকে হালিম আনসারী : রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) : এ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা (এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী)। আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রয় শতভাগ। এই আসনে বিএনপির তেমন কোন প্রার্থী নেই।
রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) : এই আসনের বর্তমান এমপি আহসানুল হক ডিউক চৌধুরী। আসন্ন নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে একাধিক এবং আওয়ামী লীগ থেকেও একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছেন। আসনটিতে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে আ.লীগ প্রার্থী বিজয়ী হবেন। এখানেও বিএনপির শক্তিশালী কোন প্রার্থী নেই।
রংপুর-৩ (সদর) : এই আসনের বর্তমান এমপি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই আসনে আ.লীগের একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে এখানে জাতীয় পার্টি থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রার্থী হলে তিনিই বিজয়ী হবেন।
রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) : এই আসনে বর্তমান এমপি আ.লীগের টিপু মুন্সী। এবারও এখানে আ.লীগের প্রার্থী হবেন টিপু মুন্সী। তবে জাতীয় পার্টি থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। এখানে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে এমদাদুল হক ভরসা। তিনি প্রার্থী হলে এখানে আ.লীগের সাথে তার প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) : এই আসনের বর্তমান এমপি এইচ এন আশিকুর রহমান। এবারও তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। তবে আ.লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এখানেও বর্তমানে বিএনপির শক্তিশালী কোন প্রার্থী নেই। এখানে জাতীয় পার্টির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। তবে আ.লীগ-জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে তাদের প্রার্থীই বিজয়ী হবে।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) : এই আসনের বর্তমান এমপি স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। আসন্ন নির্বাচনে তিনিই এখানে আ.লীগের প্রার্থী হবেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টির তেমন কোন শক্তিশালী প্রার্থী নেই। বিধায় আ.লীগ প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির প্রার্থী হবেন সাইফুল ইসলাম।
লালমনিরহাটের ৩ টি আসনে ২:১
মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া, লালমনিরহাট থেকে : লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারে যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন তারা হলেন মহাজোট প্রার্থী (আওয়ামী লীগ)সমর্থিত মো. মোতাহার হোসেন, সাবেক এমপি ও মেজর অবঃ খালেদ হাসান, অপরদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ব্যারিস্টার রাজিব হাসান, সব দলের অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন হলে মহাজোট প্রার্থী মো. মোতাহার হোসেন বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারে যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন তারা হলেন মহাজোট প্রার্থী (আওয়ামী লীগ)সমর্থিত নুরুজ্জামান আহমেদ সাবেক এমপি ও রুহুল আমিন বাবুল (জাতীয় পার্টি) অপরদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী (বিএনপি) সমর্থিত সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলাল। সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে এ আসনে মহাজোট প্রার্থী নুরুজ্জামান আহম্মেদ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
লালমনিরহাট-৩ (সদর) এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন তারা হলেন মহাজোট প্রার্থী (জাতীয় পার্টি)সমর্থিত গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। অপরদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী (বিএনপি)সমর্থিত প্রিন্সিপাল আসাদুল হাবিব দুলূ। সব দলের অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন হলে এ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী প্রিন্সিপাল আসাদুল হাবিব দুলূ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
নীলফামারীর ৪টি আসনে মহাজোট
শিবিরে জ্বলতে পারে আশার আলো
সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে নজির হোসেন নজু : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে নীলফামারীর ৪ সংসদীয় আসনে পুরাতন প্রার্থীদের সাথে নতুন প্রার্থীদের আনা গোনা বাড়ছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ এবং ১ টিতে জাতীয় পার্টি। তবে বিএনপি পিছিয়ে নেই।
নীলফামারী -১ (ডোমার-ডিমলা) এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার। তার সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হতে পারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভগ্নিপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী অথবা বড়বোন সেলিনা ইসলাম বিউটির। এছাড়াও রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করতে পারে। ডোমার ও ডিমলা উপজেলায় রয়েছে ২০টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা। ডিমলার ১০ ইউনিয়নে ভোটার এক লাখ ৭৫ হাজার ৮১৮। ডোমারের ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় আছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৫১ ভোট। এই আসনে ভোটার মোট তিন লাখ ৩২ হাজার ৮৬৯ ।
নীলফামারী-২ (সদর) একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নীলফামারী জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও ব্যতিক্রম শুধু নীলফামারী-২ আসন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর পর পর তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে বিএনপির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মো. সামসুজ্জামান। তবে প্রতিদ্বন্দিতা হতে পারে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী নীলফামারী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মনিরুজ্জামান মন্টু। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করতে পারে।
নীলফামারী -৩ (জলঢাকা) এ আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা। তার সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হতে পারে জেলা বিএনপির মো. সামসুজ্জামান শামুর। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মহাজোটের প্রার্থী জয়লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
নীলফামারী -৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় হুইপ জাতীয় পার্টির মো. শওকত চৌধুরী। জোটগত নির্বাচন হলে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হবেন। তার প্রতিদ্ব›িদ্বতা হতে পারে সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকারের। এছাড়াও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এই নির্বাচনী এলাকায় সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। ভোটার সংখ্যা তিন লাখ লাখ ৭৯ হাজার ১০২ জন।
পঞ্চগড়ের দুটি আসনেই এগিয়ে
থাকতে পারে ঐক্যফ্রন্ট
এস এম লায়েক আলী, পঞ্চগড় থেকে : পঞ্চগড়-১(তেতুলিয়া-সদর-আটোয়ারী) এ আসনে বর্তমান এমপি জাসদ (ইনু) নজমুল হক প্রধান। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি অনেকেই রয়েছেন। অর্থাৎ নজমুলকে দিলে আভ্যন্তরীণ বিরোধীতা কাজ করবে। পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টে প্রার্থী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। বিএনপি প্রার্থীর জয়লাভ প্রায় নিশ্চিত বলা চলে।
পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) এ আসনে আওয়ামী লীগের এডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বর্তমান এমপি। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা রয়েছে। মরহুম শফিউল আলম প্রধান এর মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জুই ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশি। মনোনয়ন পেলে লড়াই হবে এবং মানবিক কারণে তার জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে তিনটি আসনে ৩
দলের সম্ভাবনা
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন। এবারও মনোনয়ন তিনি পাচ্ছেন। তবে আভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব রয়েছে। এই আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর জয় নিশ্চিত।
ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গি-হরিপুর) আসনে বর্তমান এমপি দবিরুল ইসলাম। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে অনেকেই মনে করছেন তাকে মনোনয়ন দেয়া নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে তার ছেলে জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম সুজন মনোনয়ন পেতে পারে। এই আসনে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর অথবা তার ছোট ভাই মির্জা ফয়সাল প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে। রয়েছে জামায়াতের আমির সাবেক এমপি মাওলানা আবদুল হাকিম। ফখরুল বা তার ছোট ভাই দাঁড়ালে জয়লাভের সম্ভাবনা বেশী। আর তা না হলে আওয়ামী প্রার্থী জয়লাভ করবে।
ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) এবার এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দিনকে জোটগতভাবে মনোনয়ন দেয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহেদুল ইসলাম ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পাওয়ার কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে জাপার প্রার্থীর পাল্লা ভারী হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ