Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ.লীগ-জাসদ শীতল যুদ্ধ

ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প ভাবছে না বিএনপি

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম) আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন এমন প্রশ্ন এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে ঘুরছে। শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই নন। ফেনী জেলার শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি জানার জন্য উদগ্রীব। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপাসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফেনী-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ভলান্টিয়ার্স অব আমেরিকান কমিউনিটি (বাংলাদেশ)-ইউএস’র প্রেসিডেন্ট আবুল হাসেম বুলবুল, ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূর আহাম্মদ মজুমদার ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুসহ ১৩ জন।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘আপিল করায় নিম্ন আদালতের রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত হয়ে গেছে। এখন এ মামলার কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা নেই’। সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সাংবাদিকদের জানান, বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন। এতে করে ফেনী-১ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয়।
অনেকেই বলছেন, আইনি জটিলতায় দলের চেয়ারপারসন কিংবা অন্য কোন কারনে তার পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি নির্বাচেন অংশ নিতে না পারেন তাহলে স্থানীয় নেতাদের বেঁচে নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না। কারাবন্দি জীবন থেকে মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়েই আগামী নির্বাচনে ওই আসনে নির্বাচন করতে চায় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
ঐক্যফ্রন্ট থেকে এখনো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই ধানের শীর্ষ প্রতীকের প্রার্থী বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচন না করতে পারলে সেই ক্ষেত্রে কারা প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সে ব্যাপারেও কেউ খালেদা জিয়ার বাইরে কারো নাম বলতে চাননি। তবে ফেনী-১ আসনে আপাতত বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়ার বিকল্প ভাবছে না বিএনপি। তারা আশাবাদী নেত্রীকে প্রার্থী হিসেবে পাবেন। অবাধ নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে ফেনী-১ আসনে ধানের শীর্ষ প্রতীককে বিজয়ী করে আনবেন তারা।
ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পৈত্রিক বাড়ির এ আসন থেকে তিনি ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দু’বার বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ছাড়াও যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তারা হলেন- ভলান্টিয়ার্স অব আমেরিকান কমিউনিটি (বাংলাদেশ)-ইউএস’র প্রেসিডেন্ট আবুল হাসেম বুলবুল, ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূর আহমেদ মজুমদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, সাবেক যুবদল নেতা মশিউর রহমান খোকন, কারাগারে থাকা চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদের পক্ষে তার স্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি অ্যাডভোকেট আমিনুল হক মজুমদার, ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জিয়া হায়দার স্বপন, আনোয়ারুন নবী বাবলা, মাহতাব উদ্দিন মিনার, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন ও নূর নবী ভূইয়া মানিক ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন কেনায় নেতাকর্মীরা মাঝে আনন্দ উচ্ছাস বিরাজ করছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমদ বলেন, ফেনী-১ আসনে শুধু বিএনপি নয় সর্বস্তরের মানুষের কাছে খালেদা জিয়ার বিকল্প ভাবনা নেই। আমরা মনে করি তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারবেন। তাকে কারাগারে রেখে আমার মনোনয়নপত্র কেনার প্রশ্নই উঠে না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল সভাপতি রফিকুল আলম মজনু ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়াই একমাত্র প্রার্থী বলে জানান। তবে কোন কারণে যদি তিনি নির্বাচন করতে না পারলে বিএনপির কে প্রার্থী হবেন তা ম্যাডামই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।
খালেদা জিয়া কোন কারনে নির্বাচন না করতে পারলে সেক্ষেত্রে এ আসনে বিএনপির নতুন চমক ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু, নূর আহাম্মদ মজুমদার ও আবুল হাসেম বুলবুল। আবুল হাসেম বুলবুল বলেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দলের জন্য কাজ করেছি। খালেদা জিয়া যদি নির্বাচন না করেন তাহলে আমিই এ আসনে নির্বাচন করবো। যদি তিনি নির্বাচন করেন তাহলে আমার প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া খালেদা জিয়া নির্বাচন করলে আমি সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী। তবে এ আসনে বাইরের কোন লোক বিএনপি মনোনয়ন দিলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে না।
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমকে ঘিরে ফেনী-১ আসনে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী অনেকেই তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। অনেক মনোনয়ণপ্রত্যাশী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। যারা প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচার চালিয়েছেন তারা এখন নাসিমের সঙ্গে এক হয়ে দলের প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে নাসিমের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা একাত্ম হয়েছে।
আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম ফেনী আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকলেও এর আগে কখনো ভোটে প্রার্থী হননি। এবার তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন আশা করছেন। এ লক্ষ্যে গত ৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তিনি ভোটের মাঠে নামায় ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগের অন্যসব মনোনয়নপ্রত্যাশীর সরে দাঁড়ানো এবং তার সঙ্গে একাত্মতার মধ্য দিয়ে ফেনীর রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন মেরুকরণ।
তবে আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হচ্ছে জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি শিরীন আখতার। জোটগতভাবে নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক জাসদকে যদি ফেনী-১ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে নাসিমের জন্য নির্বাচন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে শিরীন আখতার। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং জাসদের মধ্যে চলছে শীতল যুদ্ধ। এদিকে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার ইকবাল রিয়াদ জানান, মহাজোট থেকে আমিই মনোনয়ন পাবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ