Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লবণের বাম্পার উৎপাদন : সিন্ডিকেট রুখতে হবে

প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চলতি মওসুমে লবণের বাম্পার উৎপাদনে কক্সবাজারের লবণচাষীরা বেজায় খুশি। তারা আশা করছে, মওসুম শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি লবণ তারা উৎপাদন করতে পারবে, যাতে অতিরিক্ত লবণ রফতানির একটা সুযোগ তৈরি হবে। এবার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ লাখ টনের কিছু বেশি। বিসিকের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ লাখ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় প্রতিদিন যে পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হচ্ছে, তাতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন সম্ভবপর হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লবণের বাম্পার উৎপাদন হলেও লবণচাষীরা যথাযথ সুফল লাভ করতে পারেনি। তারা ভালো দাম পায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত, হতাশ ও নিরাশ হয়েছে। অনেকে লবণ চাষ ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয়েছে। লবণে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করেও আমদানিকারক সিন্ডিকেটের কারসাজি ও দেশবৈরী তৎপরতার কারণে চাষীরা লবণের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সিন্ডিকেট ভারত থেকে ব্যাপকভাবে লবণ আমদানি করে বাজারে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। উপেক্ষিত হয়েছে দেশীয় লবণ ও লবণচাষীরা। এবারই এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, লবণ আমদানি নয়, প্রয়োজনে রফতানি করা হবে। সরকার লবণ আমদানি নিষিদ্ধ করায় লবণচাষীরা দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নেমে পড়ে, যার ফল এখন চয়ন করা সম্ভব হচ্ছে। ইনকিলাবের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া ছাড়াও সাত উপজেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতেই রয়েছে লবণ উৎপাদন উপযোগী জমি। এই জমির পরিমাণ বিসিকের হিসাবে ৯৪ হাজার একর হলেও বাস্তবে এর পরিমাণ দু’লাখ একরের মতো। সঙ্গতকারণেই বলা যায়, এই পরিমাণ জমিতে ঠিকমত লবণ উৎপাদিত হলে জাতীয় চাহিদা পূরণের পরও বিপুল পরিমাণ লবণ রফতানি করা সম্ভব।

এই সম্ভাবনা এতদিন কাজে লাগাতে না পারার বড় কারণ, লবণ আমদানির সুযোগ অবারিত থাকা। প্রতি বছরই এ নিয়ে কথা ওঠে। লবণচাষীদের পক্ষ থেকে লবণ আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়। বিভিন্ন মহল থেকেও একই দাবি জানানো হয়। সংবাদপত্রে এ নিয়ে রিপোর্ট ও লেখালেখি হয়। কিন্তু লবণ আমদানিকারক সিন্ডিকেট ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের যুথবদ্ধ দৌরাত্ম্য ও দাপটের মুখে এ দাবি প্রতি বছরই অনার্জিত থেকে যায়। এবারে সিদ্ধান্ত বহুল আকাক্সিক্ষত ও ইতিবাচক বলে প্রশংসিত হলেও খবর পাওয়া গেছে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জভিত্তিক পরিতোষ গ্যাং নামের ছয় মিল মালিকের সিন্ডিকেট সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে লবণ আমদানির পাঁয়তারা করছে। এই সিন্ডিকেট সরকারকে প্রভাবিত করে ও কৃত্রিমভাবে লবণ সংকট সৃষ্টি করে ভারত থেকে লবণ আমদানি করে আসছিল। সিন্ডিকেটটির অপতৎপরতা রুখে দেয়ার দাবি জানিয়েছে লবণচাষীরা। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ সাদা লবণ ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এরপর লবণে আয়োডিন মেশানো, প্যাকেজিং ও অনুষঙ্গিক খরচ হিসাব করলে প্রতিকেজি লবণ বর্তমান বাজারদরের অনেক কমে ক্রেতাসাধারণ কিনতে পারে। ২০১০-১১ সালে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বলা হয়েছিল, প্রতি কেজি লবণের দাম আট টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এখন তার চেয়ে কিছু বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ লবণচাষী কল্যাণ পরিষদের ক্রেতারা বলেছেন, প্রতি কেজি প্যাকেট লবণ তারা ১০ টাকায় সরবরাহ করতে পারবেন। অথচ এখন প্রতি কেজি প্যাকেট লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আমদানিরকারক মিলারদের সিন্ডিকেট এভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। তারা একদিকে চাষীদের ঠকাচ্ছে, অন্যদিকে ক্রেতাদের কাছ থেকে অধিক মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছে। লবণ আমদানি নিষিদ্ধ থাকলে স্বভাবতই চাষী আরো কিছুটা বেশি দাম পেতে পারে। অন্যদিকে ক্রেতারাও ন্যায়সঙ্গত দামে লবণ কিনতে পারে।
লবণচাষী কল্যাণ পরিষদের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকারের একজন উপসচিব কথিত পরিতোষ গংয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে লবণ আমদানির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এই অভিযোগের বিষয়টি অবিলম্বে খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। লবণচাষীদের কল্যাণ, ন্যায়সঙ্গত মূল্য এবং লবণখাতের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অবশ্যই লবন আমদানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে হবে। আমদানির যে কোনো উদ্যোগ ও তৎপরতা প্রতিহত করতে হবে। সরকারের দায়িত্ব উৎপাদিত লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা মসৃণ ও নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। চাষীদের দায়িত্ব উৎপাদন পর্যন্তই সীমিত। এরপর ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছতে যে প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থা প্রয়োজন সরকারকেই তা করতে হবে। এবার লবণের বাম্পার ও অতিরিক্ত উৎপাদনের প্রেক্ষাপটে লবণ রফতানির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ-পদক্ষেপ এখনই নেয়া যেতে পারে। লবণ খাতের সঙ্গে চাষী, ব্যবসায়ী মিলে কয়েক লাখ পরিবার যুক্ত। তাদের সামনে সম্ভাবনার যে হাতছানি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাকে অবশ্যই কার্যকর করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লবণের বাম্পার উৎপাদন : সিন্ডিকেট রুখতে হবে
আরও পড়ুন