নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
১৯৪ রানে ব্যাট করছেন মুশফিকুর রহিম। হঠাৎ বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ডোরাকাটা জ্যাকেট গায়ে হাজির সাকিব আল হাসান। ইনজুরি কাটাতে আছেন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায়। হাতের অবস্থা জানাতে কোচ স্টিভ রোডসের পাশে বসলেন খানিকটা সময়। মুশফিক, মুশফিক ধ্বনিতে মুখরিত মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট। সাকিবকে সাক্ষী রেখে একমাত্র উইকেটরক্ষক বাটসম্যান হিসেবে খেললেন টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি, টপকে গেলেন সাদা পোষাকে সাকিবের করা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটিও। থেমে থাকলেন না সেখানেই। মাহমুদউল্লাহ যখন ডেকে নিলেন ইনিংস ঘোষনার ইঙ্গিতে তখন মুশির নামের পাশে জ্বলজ্বলে অপরাজি ২১৯ রান। অসাধারণ ইনিংসে আরও দারুণ কিছু কীর্তি দিয়ে মুশফিক সাজালেন রেকর্ডের মালা।
টেস্টে কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে তার খেলা দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি। সেই ভূমিকাতেই মুশফিক গড়ে ফেললেন ইতিহাস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন সকালেই উইকেটে গিয়েছিলেন মুশফিক। গতকাল দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিলেন ১১১ রান নিয়ে। দুপুর ৩টা ৭ মিনিটে ইনিংস ঘোষণার সময়ও ছিলেন অপরাজিত। শের-ই-বাংলার ২২ গজে কাটিয়ে দিয়েছেন ৫৮৯ মিনিট! বলের হিসেবে সবচেয়ে বড় ইনিংসের রেকর্ড খুব পুরোনো ছিল না। গলে যে ইনিংসে দ্বিশতক করেছিলেন মুশফিক, সেটিতেই ১৯০ রানের ইনিংসটিতে মোহাম্মদ আশরাফুল খেলেছিলেন ৪১৭ বল। এবার মুশফিক খেলেছেন ৪২১ বল।
ম্যাচের প্রথম দিনে মুমিনুল হককে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে জুটির রেকর্ড গড়েছিলেন মুশফিক। দ্বিতীয় দিনে জুটির রেকর্ড হলো আরও একটি। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেট জুটিতে তুলেছেন ১৪৪ রান। বাংলাদেশের হয়ে অষ্টম জুটিতে আগের রেকর্ডেও ছিল মুশফিকের নাম। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে নাঈম ইসলামের সঙ্গে মিলে তুলেছিলেন ১১৩ রান।
টেস্টে কিপার ব্যাটসম্যানদের নবম ডাবল সেঞ্চুরি এটি। একমাত্র মুশফিকই করলেন দুটি। টেস্ট কিপারদের সবশেষ ডাবল সেঞ্চুরিটিও করেছিলেন তিনিই, ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে। কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম দু’টি ডাবল সেঞ্চুরিই পাকিস্তানীদের দখলে। ১৯৫৫ সালে ইমতিয়াজ আহমেদের ২০৯ রানের পর ১৯৮০ সালে তাসলিম আরিফ খেলেছিলেন ২১০ রানের ইনিংস। এরপর ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কান ব্রান্ডন কুরুপ্পু (২০১), ২০০০ সালে জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (২৩২), ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (২০৪), একই বছর শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা (২৩০) এবং ২০১৩ সালে ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি খেলেছেন ২২৪ রানের ইনিংস।
এদের মধ্যে সবচেয়ে দূর্ভাগা বুঝি সাঙ্গাকারা। টেস্টে এই কিংবদন্তী কিপারের আছে ১১টি ডাবল সেঞ্চুরি। কিন্তু তার নামের পাশে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি আছে কেবল একটি ম্যাচে! মুশির হাতছানি ছিল আরও একটি দারুণ রেকর্ডের। টেস্টে কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে অপরাজিত ছিলেন ২৩২ রানে। এবার দল ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ায় মুশফিককে থামতে হলো ১৩ রান দূরে।
গলে মুশফিকের সেই ডাবল সেঞ্চুরি ছিল টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিশতক। তার রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০১৫ সালে তামিম ইকবাল পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ২০৬। গত বছর নিউ জিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটন টেস্টে তামিমকে পেছনে ফেলে সাকিব আল হাসান করেছিলেন ২১৭ রান। এবার মুশফিক আবার নিজের করে নিলেন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড।
নিজ দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড দুইবার গড়ে মুশফিক ঢুকে গেছেন ছোট্ট আরেকটি তালিকায়। টেস্ট ইতিহাসে এই কীর্তি গড়তে পেরেছেন আগে কেবল পাঁচজন- অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হেডলি ও ব্রায়ান লারা, ভারতের ভিনু মানকড় ও বিরেন্দর শেবাগ।
বাংলাদেশের হয়ে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটসম্যানও মুশফিক। টেস্টে বাংলাদেশের চারটি ডাবল সেঞ্চুরির দুটিই এখন মুশফিকের। শুধু রানেই সবার ওপরে নয়, মিনিট আর বলের স্থায়িত্বেও মুশফিকের ইনিংসটি এখন বাংলাদেশের টেস্ট ইনিংসগুলোর চূড়ায়। সময়ের হিসেবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম ইনিংসের রেকর্ডটির বয়স ছিল প্রায় টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বয়সের সমান। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেই ১৪৫ রানের সেই ইতিহাস গড়া ইনিংসটি আমিনুল ইসলাম খেলেছিলেন ৫৩৫ মিনিট উইকেটে থেকে। দেড় যুগ পর সেটিকে পেছনে ফেললেন মুশফিক।
মাহমুদউল্লাহ ইনিংস ঘোষণা না করলে সম্ভবত টেস্টে উইকেটরক্ষক হিসেবে এন্ডি ফ্লাওয়ারের খেলা সর্বোচ্চ ২৩২ রানের ইনিংসটিও টপকে যেতেন মুশফিক। হয়তো এতশত রেকর্ডের ভিড়ে কেউ খেয়ালই করেন নি! তা না হলেও ২০১৮ সালে ডাবল সেঞ্চুরির খরা তো কাটালেন মুশফিক! হ্যাঁ, মুশফিকের এই ডাবল টেস্টে এ বছরের প্রথম ডাবলও। সেটি না হলে কিন্তু টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিহীন বছর যাওয়ার শঙ্কাই ভর করেছিল ক্রিকেট বিশ্বে!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।