২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আমাদের দেশে বছরের সব সময়ই কম-বেশি শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি জন্মে। তবে পুষ্টি আর স্বাদের দিক দিয়ে এসবের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে বলা যায়। শীতের সময় বেশি পাওয়া যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, মূলা, গাজর, শালগম, সিম, টমোটো, পেঁয়াজ পাতা (পেঁয়াজের হাই), মটরশুঁটি, লালশাক, পালংশাক ইত্যাদি। তবে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগাতে প্রায় সব ধরনের তরিতরকারি সব সময়ই কম-বেশি পাওয়া যায়। অর্থাৎ শীতের সময়েও গরমের সময়ের তরিতরকারি পাওয়া যায়, আবার গরমের সময়ে পাওয়া যায় শীতের তরিতরকারি, শাক ইত্যাদি। তবে সিজনের সময় এসবের স্বাদ যেমন বেশি থাকে তেমনি পুষ্টিগুণও থাকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যেসব শাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো লালশাক। এই শাক শিশুদের অতি প্রিয়। কারণ এই শাক দিয়ে ভাত মাখলে ভাত লাল হয়। ওদের কাছে এই শাক স্বাদেরও। বলা হয়ে থাকে, লাল শাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্যান্য শাকের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম লাল শাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৩৮০ মিলিগ্রাম। যেখানে মুলো শাকে রয়েছে প্রায় ২৮ মিলিগ্রাম, পুঁইশাকে প্রায় ১৬৫ মিলিগ্রাম, ডাটা শাকে প্রায় ৮০ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম ছাড়া লাল শাকে অন্যান্য যে পুষ্টি উপাদান আছে তাও অন্যান্য শাকসবিজর তুলনায় বেশি। এক সময় দেশে প্রচুর পরিমাণে টক পালং পাওয়া যেত। তা এখন আর ততটা পাওয়া যায় না। তবে এই শাক এ অঞ্চলে প্রচুর উৎপাদিত হয়। এই শাক কাঁচাও খাওয়া যায় লবণ মিশিয়ে। এই শাকে প্রচুর ফলিক অ্যসিড, ভিটামিন সি ইত্যাদি আছে। এই শাকের পরিপূরক হিসেবে আমাদের প্রচুর পরিমাণে পালং ও লালশাক খাওয়া দরকার। মটরশুঁটির প্রতি ১০০ গ্রামে আছে প্রায় ৭০ ক্যালরি। অথচ অন্য সবজিতে ৪০ ক্যালরির বেশি থাকে না। কোন কোন সবজিতে ১০০ গ্রামে ক্যালরি আছে প্রায় ২০। মিষ্টি আলুতে প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরি আছে প্রায় ১০। এদিকে ফুলকপিকে বলা হয় উচ্চমাত্রার পুষ্টিকর সবজি।
এতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, পানি। এছাড়া এতে এমন কিছু উপাদান আছে যা ক্যানসারের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করে। এর গুণ এতই বেশি যে, কিডনির পাথর গলিয়ে দেয়ারও জাদুকরি ক্ষমতা আছে। শীতকালীন সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আছে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যসিড, অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ইত্যাদিও। সবজির আঁশ রক্তের ক্ষতিকর এলডিএল হ্রাস করে। টমেটো ও টমেটোজাত খাদ্য, পালং শাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এসব শাকসমজি অস্থিক্ষয় রোধেও পালন করে ব্যাপক ভূমিকা। উন্নত বিশ্বে মানুষ বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে এসব খাচ্ছে। কারণ, ওইসব দেশের মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বা জটিলতা বাড়ছে। নারীর গর্ভকালীন সময়ে এসব খাবার মা ও নবজাতক শিশুর জন্য খুবই উপযোগী। এসব খাবার শরীরের রক্তকণিকা বা পাটিলেট গঠনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। শীতকালীন শাকসবজি পর্যাপ্ত খেলে মুটিয়ে যাওয়া বা মেদ-ভূড়ি সমস্যাও কমায়। এক্ষেত্রে কাজ করে এসবের ভিটামিন ‘ই’। এ জাতীয় ভিটামিন মানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এসব উপাদান বার্ধক্য রোধেও কাজ করে। অনেক দেশের মানুষ বার্ধক্য রোধে এসব প্রাকৃতিক খাবার খুব বেশি খাচ্ছে। আজকাল বার্ধক্য রোধে যেসব ভেষজ ওষুধ তৈরি হচ্ছে যে সবে থাকে এসব উপাদান। তবে বুদ্ধিমানরা ভেষজ ওষুধ না খেয়ে সরাসরি খাচ্ছে এসব শাকসবজি এবং পাচ্ছেন কাক্সিক্ষত ফল। এসব শাকসবজি দামেও ওষুধের তুলনায় যথেষ্ট কম। এসবের ভিটামি ‘সি ’ মাড়ি ও দাঁত সুস্থ রাখে। এর ভিটামিন‘কে ’ রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। বিটা ক্যারোটিন থেকে তৈরি হয় ভিটামিন ‘এ’ যা চক্ষু ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ উপযোগী। আমেরিকান জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যারোটিনোয়েড সমৃদ্ধ খাবার করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এদিকে সুইডিস গবেষকরা বলেছেন, এই উপাদান অর্ধেক কমিয়ে আনে পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি।
পুঁই, পালং ইত্যাদি শাকে এসব মিলে প্রচুর পরিমাণে। গাজর, বিট আর শশার স্যালাড শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্যই বিশেষ হিতকর। লাউশাক, নটোশাক, মিষ্টিকুমড়ো প্রভৃতি শাকেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও এ জাতীয় শাকসবজি প্রচুর খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। এসব খাবার রাতকানা সমস্যাও দূর করে। শিশু জন্মের পর তার শরীরে ভিটামিন ‘এ’-এর খুব একটা ঘাটতি হয় না, কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে খাদ্যের নানা উপাদানের ঘাটতি বাড়তে থাকে। তখন এসব খাবার তাদের অনেক কাজে আসে। শিশুদের চোখে যে সমস্যা বেশি দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো বিটট স্পট। এতে চোখ শুকিয়ে যায় এবং চোখের বাইরের অবরণে কিছু ছোট দাগ পড়ে। ফলে ঘোলা হয়ে যায় কর্ণিয়া। অনুভূতিও কমে আসে কর্ণিয়ার। এর ফলে দেখতে সমস্যা হয়। বয়স্কদেরও ছানি পড়ে বেশি। অথচ এসব শাকসবজি পর্যাপ্ত খেলে এসব সমস্যা থাকে না বলা যায়।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।