২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আধুনিক ও যান্ত্রিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে আমাদের শরীরের ওজন। আর এ থেকে মুক্তি পেতে কেউ ছুটছেন জিমে আবার কেউ বা করছেন ডায়েটিং। অনেকে ওজন বেড়ে গেলে বা ওজন বাড়ার ভয়ে হঠাৎ করে ডায়েটিং শুরু করেন। এক্ষেত্রে অবশ্য মেয়েরা অনেকখানি এগিয়ে। কিন্তু কোন কিছু না ভেবে ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ব্যতিত অথবা না বুঝে ডায়েট শুরু করলে কিংবা একেবারেই খাবার কমিয়ে দিলে ওজন তো কমেই না বরং শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির অভাব দেখা দেয় যা সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার প্রধান অন্তরায়।
আমরা কেন মোটা হই বা আমাদের কেন ওজন বাড়ে, তা জানেন কি? আমাদের ওজন বাড়ার সাথে দেহের ক্যালোরির অনেক বড় সংযোগ রয়েছে। আমরা প্রতিদিন যতটা ক্যালরি গ্রহণ করি তা যদি দেহে শুধুই জমা হতে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা মোটা হবো। অর্থাৎ দেহের ওজনটা ঠিক রাখতে ক্যালরি ক্ষয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু ক্যালরি ক্ষয় নিয়েই সব ঝামেলা।
এক কথায় আমাদের তখনই ওজন বাড়ে যখন আমরা আমাদের প্রতিদিনের কাজে এবং ব্যায়ামে ব্যবহৃত ক্যালরির চেয়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করি। অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই কম খাওয়া এবং বেশি কাজ করা উচিত। স্বাস্থ্যকর উপায়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজন কমানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থায়ীভাবে আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামে পরিবর্তন আনা। কিছু ছোট পরিবর্তন যেমন কম খাওয়া এবং ফ্যাট, চিনি ও অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় পান থেকে বিরত থাকলে তা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। অনেকেই মোটা হবার ভয়ে একেবারেই খাবার কমিয়ে দেন। খাওয়া কমিয়ে দিলে ওজন কমে ঠিকই কিন্তু শরীরে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। তাই নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করা উচিৎ এবং এমন খাদ্য নির্বাচন করা জরুরি যা খেলে ওজন বৃদ্ধি হবে না কিন্তু শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঠিকই পাবে।
সঠিক পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন কমানোর উপায় ঃ এখানে স্বাস্থ্যকরভাবে খাবার খাওয়া এবং ওজন কমানোর সহজ উপায় বর্ণিত হল : আপনার খাবারে ফ্যাটের পরিমাণ কমানোর জন্য আপনি মাংসের বাড়তি চর্বি কেটে ফেলতে পারেন। ফুল ক্রিম দুধের পরিবর্তে সর ছাড়া দুধ পান করতে পারেন, মিষ্টি দই এর পরিবর্তে টক দই ব্যবহার করতে পারেন। বাইরের তৈরি অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করতে পারেন। শস্য দ্বারা তৈরি খাবার খান, যেমন- লাল আটার রুটি, বাদামী চাল এবং পাস্তা এগুলো অন্যান্য খাবারের চেয়ে ধীরে ধীরে হজম হয় ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আপনার পেট ভর্তি থাকে।
ডায়েটিং করে সকালের নাস্তা বাদ দেয়া যাবে না। অবশ্যই সকালের নাস্তা করবেন। একটি স্বাস্থ্যকর সকালের নাস্তা আপনাকে দিন শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগাবে। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মানুষ নিয়মিত সকালের নাস্তা খায় তারা সাধারণত বেশি ওজনের অধিকারী হন না।
বিকেলে যদি আপনার কোন নাস্তা খেতে ইচ্ছা করে, তবে প্রথমে একটি পানীয় পান করুন, যেমন- এক গ্লাস পানি বা এককাপ চিনি ছাড়া চা। প্রায়ই যখন আমরা নিজেদের ক্ষুদার্থ মনে করি, আসলে তখন আমরা তৃষ্ণার্থ থাকি। উচ্চ ক্যালরির পরিবর্তে স্বল্প-ক্যালরির পানীয় নির্বাচন করুন অর্থাৎ যেসব পানীয়তে কম মাত্রায় ফ্যাট, চিনি এবং অ্যালকোহল থাকে সেগুলো পান করুন। চিনিযুক্ত কোমল পানীয়ের পরিবর্তে স্বচ্ছ ও এক টুকরো লেবুসহ পানীয় বাছাই করতে পারেন। মাংসের চর্বি, মুরগির চামড়া বর্জ্য ভেবে ফেলে দিন। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় জমাট থাকে এমন চর্বি যেমন ঘি, মাখন ও মার্জারিনকে খাদ্য তালিকা থেকে দূরে রাখুন।
আমিষের দৈনিক চাহিদা মেটাতে একটা ডিম, বীজ বাদাম, ডাল ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় স্থান দিন। মূল খাবার গ্রহণের মাঝের সময়ের ফাঁকটুকু পূরণ করুন ফলমূল বা কম ক্যালরির নাশতা যেমন মুড়ি বা সবজি সুপ, শশা, গাজর, দেশি ফল ইত্যাদি দিয়ে।
মোটা হওয়ার ভয়ে কখনো এক বেলার খাবার বাদ দেয়া উচিত নয়; বরং সারাদিনে ৩ বেলার খাবারের পরিবর্তে ৫ বেলা খাবার গ্রহণ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেলে শরীরে কর্ম শক্তির অভাব পরিলক্ষিত হয় না।
দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ক্রাশ ডায়েটে না যাওয়াটাই উত্তম। এতে অল্প সময়ে ওজন কমলেও শরীরে মেদ জমতে দেরিও লাগে না। তাই সঠিক নিয়ম মেনে ডায়েট করুন। এতে প্রথম দিকে ওজন যদি না কমে তবে হতাশ হবেন না। ধৈর্য ধরে ডায়েট চার্ট মেনে চলুন।
মনে রাখবেন ওজন নিয়ন্ত্রনের জন্য শুধু খাবার কমালেই হবে না এর জন্য ব্যায়াম ও প্রয়োজন। নিয়মিত ব্যায়াম শুধু আপনার ওজনই কমাবে না, তা আপনার মারাত্মক রোগ যেমন-উচ্চ রক্ত চাপ, হৃদ রোগ ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকিও কমাতে পারে।
সকালে হাঁটার ফলে বিশুদ্ধ বাতাস ও সুন্দর পরিবেশ আপনার হৃৎপি- ও মনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। হাঁটার সময় হৃৎপি- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করে। ফলে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ ও সচল থাকে এবং মানুষ দীর্ঘজীবী হয়।
আপনি কতটুকু ব্যায়াম করবেন তা আপনার লিঙ্গ, বয়সের উপর এবং কাজের ধরনের উপর নির্ভর করবে। হাঁটা হলো সব ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে উপকারী। প্রতিদিন সকালে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট টানা হাঁটার অভ্যাস করুন কারণ প্রতিদিন সকালে মাত্র ২০-৩০ মিনিটের এই হাঁটা সারা দিন ভালো থাকতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রোগবালাই থাকুক আর না থাকুক, রসনা তৃপ্তির সময় খাবার খানিকটা বাছাই করা উচিত। কিন্তু খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বা ডায়েটিংয়ের কথা বলা হলে অনেকে ভাবেন সব খাবার বন্ধ হয়ে গেল বুঝি।। সত্যিকার অর্থে ব্যাপারটা তা নয়। দৈনিক, ভাত, ডাল, মাছ, মুরগি, সব ধরনের সবজি পরিমিত পরিমাণে খেয়ে এবং রসনার তৃপ্তি করেও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ডায়েট করার আগে জেনে নিন ডায়েট আসলে কী? কার জন্য কোন ডায়েট প্রযোজ্য, কত ধরনের ডায়েট হয়, কোন ডায়েটের কী উপযোগিতা, ডায়েটের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না ইত্যাদি বিষয়। প্রযোজনে পরামর্শ নিন একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের। কারণ আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী, আপনার বেছে নেয়া ডায়েট উপযোগী কি না তা একজন ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদ ভাল বলতে পারবেন।
ষ সেলিনা বদরুদ্দিন
চীফ ডায়েটিশিয়ান, আসগর আলী হসপিটাল লিঃ, গে-ারিয়া, ঢাকা। মোবাইল ০১৭১৫৮৪০৯১২।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।