পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পথে পথে বাধা, গ্রেফতার, পরিবহন ধর্মঘট ডেকেও বাঁধভাঙা মানুষের ঢল ঠেকানো যায়নি। সবকিছু মাড়িয়ে ভিন্ন পথে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে মানুষ ছুটে আসে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানের দিকে। পশ্চিমে চাপাইনবাবগঞ্জ, উত্তরে নওগাঁ আর পূর্বে রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, পাবনা মহাসড়ক ধরে মানুষ ছুটে এসেছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশে। পরিকল্পিতভাবে বাস ধর্মঘটে পরিবহন সঙ্কট আর পথে পথে বাধার কারণে দূর-দূরান্তের মানুষ আসতে না পারলেও আশেপাশের মানুষে ভরে যায় মাদরাসা ময়দান। মাঠে আদায় করা হয় জুমা নামাজ। এতে ইমামতি করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফি। শুধু জনতাকে বাধা দেয়া হয়নি, সমাবেশে আসা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকেও পথে ৫ দফা বাধা দেয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। এমনকি তাকে ভুল পথ দেখানো হয়।
জুমা নামাজের পর নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল আর সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে ও বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে মানুষ আসতে থাকে। নগরীর সবকটি রাস্তা ধরে মানুষের স্রোত ছুটতে থাকে মাদরাসা ময়দানের দিকে। মানুষ আর মানুষে ভরে যায় মাঠের চারদিক। মাঠে জায়গা না পেয়ে আশে পাশের রাস্তায় অবস্থান নেয়। যদিও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে মাঠের বাইরে মাইক ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। ফলে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনতে কষ্ট হলেও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বক্তব্য শুনেছেন।
বাধা শুধু সমাবেশে আসা মানুষদের নয়, নেতাদের গাড়ি পর্যন্ত আটক করা হয়। মাহমুদুর রহমান মান্না ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাকে পুলিশের না চেনার কথা নয়। তারপরও তারা আমার গাড়ি থামিয়েছে। বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার গাড়ি শুধু আটক হয়নি বরং বিভ্রান্ত করার জন্য ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। রাস্তা দিয়ে আসার সময় দেখেছি কীভাবে সমাবেশে আসা লোকজনকে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুপুরে একটি রেস্ট হাউসে অবস্থানকালে তার নিকট বিভিন্ন এলাকার নেতারা গিয়ে তাদের লোকজনকে আটক এবং বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন। ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নিকটও অভিযোগ করতে দেখা যায়। বিএনপির নগর সেক্রেটারি এড. শফিকুল হক মিলন জানান, তানোর, মোহনপুর, বাগমারা থেকে আসা মানুষদের রাস্তায় আটকে দেয়া হয়েছে। ভবানীগঞ্জের নেতা শহিদুজ্জামানসহ ছয়জনকে আটক করেছে। জনসভা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বাধা ও আটকের কথা জানানো হয়। পাবনার চাটমোহর থেকে এসেছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, তার নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। নওগাঁ, জয়পুরহাটের নেতাকর্মীরা বলেন, ট্রেনে আসতেও বাধার শিকার হয়েছেন। মান্দা ফেরীঘাট এলাকায় পুলিশ বাস থামিয়ে বাধা সৃষ্টি করে।
ড্যাব নেতা ডা. ওয়াসীম হোসেন ও মোফাখারুল ইসলাম বলেন, নগরীর রাস্তায় রাস্তায় র্যাব, পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষকে তল্লাশি করেছে, বাধা দিয়েছে। এতসব কিছুর পরও মানুষের স্রোত আটকানো যায়নি। সমাবেশে আসা লোকজনের মন্তব্য ছিল এত বাধা বিঘœ সৃষ্টি করার পরও এত মানুষ। এরপর নেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। যদি তিনি থাকতেন আর বাধা বিঘœ না থাকতো তাহলে কী অবস্থা হতো তা সহজে অনুমেয়। মাদরাসা মাঠ থেকে আশে পাশের দুই কিলোমিটার জুড়ে মানুষের ভীড় থাকত।
কর্ণেল অলি আহমেদ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ সবার মুখে ছিল একটাই কথা, এতো বাধার পরও মানুষের স্রোত। নিকট অতীতে কোন জনসভায় এমন স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের ঢল দেখা যায়নি। সমাবেশে আসা মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত নেতাদের ভাষণ শুনেছেন। শপথ নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আর গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নিজের জীবন বাজী রাখার। নেতাদের সুরে সুর মিলিয়ে সেøাগানে মুখরিত করেছেন। বাদ যায়নি মহিলা কর্মীরাও। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মেয়েদের দেখে বলেন, উপস্থিত মেয়েদের যদি অর্ধেকও আমার দলে থাকত তাহলে এদের নিয়ে আন্দোলন করে হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতাম। সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক বলেন, বিশাল এ সমাবেশ আবারো প্রমাণ করে দিল রাজশাহী অঞ্চলের মাটি বিএনপির দূর্জয় ঘাঁটি। সফল সমাবেশের মধ্যদিয়ে যাত্রা শুরু হলো স্বৈরাচারী অবৈধ হাসিনা সরকারের পতনের। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ আগামীতে যে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে। সাবেক মেয়র নগর বিএনপির সভাপতি সমাবেশ শেষে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এত ধরপাকড়, গায়েবি মামলা, রাতের বেলা বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাশি আর গ্রেফতার করে বাধা বিঘœ সৃষ্টি করার পরও বিশাল জনসমাবেশ প্রমাণ করে দিল শেখ হাসিনার পাশে দেশের মানুষ নেই। জুলুম নির্যাতন করে তার পতন ঠেকাতে পারবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।