Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাই ব্লাড প্রেসার হলে পাকা পেঁপে খান

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

হাই ব্লাড প্রেসার? পেঁপে খান। পাখি খায়। আপনিও খান। পাকা, কাঁচা যেদিন যে-রকম ইচ্ছে। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম থাকে। কাঁচা, পাকা দ’য়েই। যেসব খাদ্যে পটাসিয়াম বেশি, সোডিয়াম তুলনায় অনেক কম বা নেই, ব্লাড প্রেসারের রোগীদের এমন সব খাবারদাবার খেতে বলেছেন চিকিৎসকরা। বাজারে অন্য যে কোন সবজির তুলনায় কাঁচা পেঁপের দাম সবচেয়ে কম। সেই পেঁপেকে সবজি হিসেবে খুব কম মানুষ খান। পাকা পেঁপে তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও সবাই সেভাবে খায় না? পেঁপে হার্টের সুস্থতা রক্ষায় উপকারী, ডায়াবেটিক হার্ট ডিজিজ হওয়া আটকাতে পারে, মল নির্গমন পথে ক্যান্সার হওয়া রোধ করে। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের গবেষক-বিজ্ঞানী ডাঃ সুম্যান হেয়ায়াতি জানিয়েছেন, খাবারদাবারের মাধ্যমে শরীর যদি পর্যাপ্ত পটাসিয়াম না পায়, তাহলেও ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যায়। তাঁর আক্ষেপ ডাক্তাররা সোডিয়াম ক্লোরাইড তথা লবণকেই হাই ব্লাড প্রেসারের জন্য দায়ী করেন, অথচ রোগীর রক্তে পটাসিয়াম পরিমাপ করাটা জরুরি। পটাসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে সেসব খাবারদাবার খেতে বলতে হবে, যেগুলোতে সোডিয়াম কম, পটাসিয়াম বেশি।

পেঁপেতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে যেমন ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ফ্ল্যাভনয়েভ থাকে। পটাসিয়াম ছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। খাদ্যআঁশ, হজমকারক উৎসেচক পাপাইন, খানিকটা ভিটামিন ই থাকে। পেঁপেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কোলেস্টেরলের কারণ ঘটিত ক্ষতি আটকায়। কাজটি করে পেঁপেতে থাকা প্যারাঅক্সোনেজ উৎসেচক এবং ভিটামিন সি ও ই মিলে। ফলে রক্তনালিতে খারাপ কোলেস্টেরলের আস্তরণ হতে পারে না। পেঁপেতে থাকা খাদ্যআঁশের গুণে খারাপ কোলেস্টেরলের আধিক্য হ্রাস পায়। রক্তের মধ্যে হোমোসিস্টিন নামে খুনি অ্যামাইনো অ্যাসিডের বাড়াবাড়ি মাত্রায় পৌঁছনো আটকায় পেঁপেতে থাকা ফোলেট। হোমোসিস্টিনের মাত্রাধিক্যে হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক হবার আশঙ্কা থাকে। হোমোসিস্টিন রক্ত সংবহনি নালী প্রাচীরগুলোকে ধবংস করতে থাকে, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের বা স্ট্রোকের মতো ভোগান্তি ঘটে। পেঁপেতে প্রোটিন হজমকারী পাপাইন, কাইমোপাপাইন এবং এ ধরণের আরও কিছু দূরন্ত এনজাইম থাকে। পেঁপেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রদাহ দমনে সাহায্য করে। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই মিলে শরীরের প্রতিরোধী শক্তিকে চাঙ্গা করে। ভিটামিন এ, সি এবং ই মিলে চোখে ছানি পড়া আটকায়। দৃষ্টিভঙ্গি অস্বচ্ছ হতে দেয় না। অস্টিওআর্থাইটিসের রোগীদের জন্য পাকা পেঁপে এবং কাঁচা পেঁপে দুই-ই উপকারী। বেশি উপকারী পাকা পেঁপে। ভিটামিন সি খাবারদাবার যাঁরা কম খান, তাঁদের আর্থাইটিস হবার আশঙ্কা যারা খান তাদের তুলনায় তিনগুণ বেড়ে যায়। অ্যানালস অফ দ্য রিউম্যাটিক ডিজিজে একথা জানানো হয়েছে।
কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, যারা ধূমপান করেন তাদের জন্য ভিটামিন এ জরুরি। সিগারেট খেলে বেনজোপাইরিনের প্রভাবে ভিটামিন এ-র ঘাটতি ঘটে। ধূমপান করেও ভালো থাকেন যারা বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচেন, তাদের ডায়েট সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে দেখা গেছে, ওরা জেনে বা না জেনে পেঁপে-গাজরসহ নানা ধরণের ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খেয়ে গেছেন নিয়মিত। ক্যানসার এবং গলা ফুসফুসের অসুখ ধরতে পারেনি। নিয়মিত পাকা-কাঁচা পেঁপে খেলে, পাশাপাশি গ্রিন টি পান চালিয়ে গেলে প্রস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা কমে। এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে জানানো হয়েছে। পেঁপে, তরমুজ, খুবানি, মুসুম্বি, পেয়ারা, টমেটোতে থাকা লাইকোপিন যাঁরা খান, তাঁরা প্রস্টেট ক্যানসারের ভোগান্তি এড়াতে পারেন। পেঁপেতে ভিটামিন কে থাকে প্রচুর। ভিটামিন কে হাড়ের জন্য রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে জরুরি।
৩০৪ গ্রাম ওজনের একটা পাকা পেঁপেতে ১.৮৫ গ্রাম প্রোটিন, ২৯.৮২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫.৪৭ গ্রাম খাদ্যআঁশ, ১১৮.৫৬ গ্রাম শক্তি, ০.০৮ মিলিগ্রাম ওয়ান, ০.১০ মিলিগ্রাম বি টু, ১.০৩ মিলিগ্রাম বি থ্রি, ১.০৩ গ্রাম নিয়াসিন ক্যালোরি, সুগার ১৭.৯৪ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩৪ গ্রাম, পলি ফ্যাট ০.০৯ গ্রাম, মনো ফ্যাট ০.১২ গ্রাম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.১৩ গ্রাম, জলীয় ভাগ ২৭০.০৪ গ্রাম, অ্যাশ ১.৮৫ গ্রাম, ভিটামিন এ ৮৩৬.৩৬ আন্তর্জাতিক ইউনিট। কোলেস্টেরল থাকে না। ভিটামিন বি ১.৪৩ মিলিগ্রাম, বি সিক্স ০.০৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৮৭.৮৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ৩.৪০ মিলিগ্রাম, ফোলেট ১১৫.৫২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ৭.৯০ মাইক্রোগ্রাম, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ০.৬৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭২.৯৬ মিলিগ্রাম, ক্লোরাইড ৩৩.৪৪ মিলিগ্রাম, কপার ০.০৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৩০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ০.০৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৫.২০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৭৮১.২৮ মিলিগ্রাম, সেলেনিয়াম ১.৮২ মাইক্রোগ্রাম, সোডিয়াম ৯.১২ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ০.২১ মিলিগ্রাম, মাইরিস্টিক, স্টিয়ারিক, পালমিটল, লিনোলেনি, ওলিক, লাইনোলেনিকও। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে ০.০৮ গ্রাম, ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে ০.০২ গ্রাম।
পেঁপের প্রোটিন ভান্ডারে যেসব অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, সেগুলো হল অ্যালানিন ০.০৪ গ্রাম, আর্জিনিন ০.০৩ গ্রাম, অ্যাসপারফেট ০.১৫ গ্রাম, লাইসিন ০.০৮ গ্রাম, মেথিওনিন ০.০১ গ্রাম, ফেনাইল এল্যানিন ০.০৩ গ্রাম, প্রোলিন ০.০৩ গ্রাম, থ্রিওনিন ০.০৩ গ্রাম, ট্রিপটোফ্যান ০.০২ গ্রাম, ভ্যালিন ০.০৩ গ্রাম, অর্গানিক অ্যাসিডের মধ্যে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে ৮৪.৬৪ মিলিগ্রাম, ম্যালিক এসিড ৮২.০৮ মিলিগ্রাম থাকে।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকা পেঁপে
আরও পড়ুন