Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাভের আলুতে হতাশা ভর!

সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা: | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

কিছুদিন পরই শুরু হবে আলু রোপণের মৌসুম। একসময় বাংলাদেশের আলু বলতে গেলে মুন্সীগঞ্জ জেলা। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে আলুর ব্যাপক চাষ হলেও গত কয়েক বছর ধরে আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে অধিকাংশ কৃষক। জেলার ৬ টি উপজেলার মধ্যে সিরাজদিখান উপজেলা সব চেয়ে বেশী আলু চাষ হয়। সিরাজদিখানে আলু চাষিরা এখন হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। বীজ, পরিবহন, শ্রমিক, সার, কীটনাশক, হিমাগার সহ উৎপাদন খরচ বাজার মূল্যের বেশী হওয়ায় আলু রোপণ করে লাভের মুখ দেখছেনা এ অঞ্চলের কৃষকরা। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের কৃষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জানান এ অবস্থা চলমান থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মুন্সীগঞ্জে থেকে আলু চাষে আগ্রহ হারাতে পারে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গড় হিসেবে আগাম আলু চাষে ১ কানি (১৪০ শতক) জমিতে ৪শত মণ প্রায় ২শত বস্তা আলু হয়। এক কানি জমিতে আলু রোপণ থেকে শুরু করে কোল্ড স্টোরেজ ভাড়াসহ ২শত বস্তা উৎপাদন খরচ হয় ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমান ২শত বস্তা আগাম আলুর দাম ২ লক্ষ ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। আলুর বাজার অনুসারে আগাম আলুতে কানিতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লোসকান হচ্ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে সঠিক সময়ে আলু রোপণ করতে না পারায় লামি জমি আলু উৎপাদন খরচ একই হয়ে থাকে। বর্তমান বাজারে লামি জমির আলু ১ কানিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লোকসান গুনছে কৃষকরা। আবার পাইকাররা লামি আলু কিনতে চাচ্ছেনা।
অন্যদিকে সময় মত কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ করতে না পারায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় পদ্ধতিতে আলু মজুদ করে থাকে। এ পদ্ধতিতে আলু পচাসহ ওজন কমে যায়। এখানেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবছর থেকে হিমাগার গুলো নতুন নিয়মে বড় বস্তার পরিবর্তে ছোট বস্তা ব্যবহার কারায় খরচের পরিমান বাড়বে। তবে বড় সমস্যা কারণ আলুর স্ক্যাব রোগের স্থায়ী সমাধান পায়নি কৃষকরা।
উপজেলার কৃষি অফিস সূত্র জানাযায়, উপজেলার আলু রোপণের আদর্শ সময় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত। গত বছর আলু চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৪ শত ৫০ হেক্টর জমিতে। এবছর ৯ হাজার ২০০ শত হেক্টর জমিতে আলুচাষ হতে পারে। গত বছরের তুলনায় ২ শত পঞ্চাশ হেক্টর জমি আলু চাষ কম হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় ১০টি কোল্ড স্টোরেজ (হিমাগার) এবছর আলু সংরক্ষণ হয়েছে ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার বস্তা বা প্রায় ৬৯ হাজার ১২০ মেট্রিকটন। এর মধ্যে খাবার আলু ৭ লক্ষ ৩১ হাজার বস্তা বা প্রায় ৫৮ হাজার ৪৮০ মেট্রিকটন ও বীজ আলু ১ লক্ষ ৩৩ হাজার বস্তা বা প্রায় ১০ হাজার ৪০ মেট্রিকটন। বর্তমানে খাবার আলু কোল্ড স্টোরেজে রয়ে গেছে ২ লক্ষ ৯৮ হাজার বস্তা বা ২৩ হাজার ৪৬৫ মেট্রিকটন।
অন্যদিকে আলু চাষে অতিরিক্ত বালাইনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করছে এবং জৈব সার কম ব্যবহার করছে । একই জমিতে বছরের পর বছর আলু চাষ করছে ফলে জমির একটি নির্দিষ্ট স্থানের উদ্ভিদের জন্য খাবার কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন খাল-বিল ভরাট ও সংস্কারের অভাবে বর্ষার মৌসমে জমিতে পানি না উঠায় জমিতে পলিমাটি পড়ছে না।
উপজেলার কৃষি কর্মকতা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশে এখন আলুর চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি রয়েছে। এখন আমরা কৃষকদেরকে আলুর পাশা পাশি অন্যআন্য ফসল ও সবজি আবাদ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এখানে একটি সবজির কোল্ড স্টোরেজ থাকলে সবজি আবাদে কৃষকরা আরো উৎসাহিত হতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাভ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ