চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে উত্তম ঋণ প্রদানের প্রতি যেমন উৎসাহ প্রদান করেছে, ঠিক তেমনিভাবে ঋণ আদায়ের ব্যাপারেও দিয়েছেন জোরালো নির্দেশ।আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,” কে সেই ব্যক্তি? যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে, ফলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আর আল্লাহই রিজিক সংকুচিত করেন এবং বৃদ্ধি করেন আর তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)। ঋণ প্রদান একটি নেকির কাজ, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। এর মাধ্যমে লোকের সাহায্য করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা হ্রাস কিংবা সমাধান করা হয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুনিয়াবী বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তা’য়ালা তার আখেরাতের বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবীর কষ্ট সহজ করবে, আল্লাহ তা’য়ালা তার দুনিয়া ও আখেরাতকে সহজ করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্য করেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে” (মুসলিম)। কিন্তু বাস্তবতা হলো ঋণ গ্রহণ করবে এমন মানুষের অভাব নেই, তবে ঋণ পরিশোধ করার মন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের বড়ই অভাব। অথচ ঋণ গ্রহণ করার পর তা পরিশোধ না করা কবিরা গুনাহ। হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কবিরা গুনাহসমূহের পরে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কবিরা গুনাহ হলো কোনো বান্দার আল্লাহ তা’য়ালার সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাত করা যে, তার উপর ঋণ রয়েছে, অথচ পরিশোধযোগ্য কিছুই সে রেখে যায়নি” (আবু দাউদ)। ঋণ দাতা যখন মানুষের উপকারার্থে ঋণ প্রদান করে, তখন ঋণ গ্রহীতার দ্বীনী ও নৈতিক দায়িত্ব হবে তা যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া। যদি তা না করে টাল-বাহানা শুরু করে,কিংবা মিথ্যা ওজর পেশ করতে লাগে, তাহলেই মিল-মুহব্বত, ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়, শত্রুতা বৃদ্ধি পায় এবং হারিয়ে যায় একে অপরের প্রতি বিশ্বস্থতা। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত যথাসময় ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করা। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি পরিশোধ করার ইচ্ছা নিয়ে কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে, আল্লাহ তা’য়ালা তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে আত্মসাৎ করার মনোভাব নিয়ে কারো কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে, আল্লাহ তা’য়ালা তাকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করেন “ (বুখারী)। প্রকৃত পক্ষে যারা ঋণ গ্রহণ করার পর পরিশোধ করতে চায়, আল্লাহ তা’য়ালা তাদের ঋণ পরিশোধ করাকে সহজ করে দেন। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ বনী ইসরাঈলের কোন এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের অপর এক ব্যক্তির নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইল। তখন সে (ঋণদাতা) বলল, কয়েকজন সাক্ষী হাজির কর, আমি তাদেরকে সাক্ষী রাখব। সে বলল, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তারপর (ঋণদাতা) বলল, তা হলে একজন জামিনদার উপস্থিত কর। সে বলল, জামিনদার হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলল, তুমি সত্যই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে তাকে এক হাজার দীনার দিয়ে দিল। তারপর ঋণ গ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করল এবং তার প্রয়োজন সমাধান করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের ভেতর ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছতে পারে। কিন্তু সে কোন যানবাহন পেল না। তখন সে এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাজার দীনার তার মধ্যে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্র তীরে এসে বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জান আমি অমুকের নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইলে সে আমার কাছে জামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আল্লাহই জামিন হিসাবে যথেষ্ট। এতে সে রাজী হয়। তারপর সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট, তাতে সে রাজী হয়ে যায়। আমি তার ঋণ (যথাসময়ে) পরিশোধের উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম, এই বলে সে কাষ্ঠখন্ডটি উত্তাল সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। আর কাষ্ঠখন্ডটি সমুদ্রে প্রবেশ করল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল এবং নিজের শহরে যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজতে লাগল। ওদিকে ঋণদাতা নির্ধারিত সময়ে এ আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে, হয়ত বা ঋণগ্রহীতা কোন নৌযানে করে তার মাল নিয়ে এসেছে। আচানক তার দৃষ্টি কাষ্ঠখন্ডটির উপর পড়ল, যার ভিতরে মাল ছিল। সে কাষ্ঠখন্ডটি তার পরিবারের জ্বালানীর কাজে দেবে মনে করে বাড়ী নিয়ে গেল। যখন সে তা চিরল, তখন সে মাল ও পত্রটি পেয়ে গেল। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার দীনার নিয়ে এসে হাযির হলো এবং বলল, আল্লাহর কসম! আমি আপনার মাল যথাসময়ে পৌঁছিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সব সময় যানবাহনের খোঁজে ছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন আসলাম, তার আগে আর কোন নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলল, তুমি কি আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলল, আমি তো তোমাকে বললামই যে, এর আগে আর কোন নৌযান আমি পাইনি। সে বলল,আল্লাহ তা’য়ালা জামিনদারের পুরো দায়িত্ব পালন করেছেন, তুমি কাঠের টুকরোর ভিতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তা’য়ালা তোমার পক্ষ হতে আমার নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। তখন সে আনন্দচিত্তে এক হাজার দীনার নিয়ে ফিরে চলে গেল”( সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২২৯১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।