পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ডেঙ্গু এক প্রকার ভাইরাস। আমাদের দেশে প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কাল হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম। রাজধানীতে ডেঙ্গুুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্ট মহলের টনক নড়েনি। ডেঙ্গু দ্রুত বিস্তার লাভ করা একটি সংক্রামক রোগ হলেও তা প্রতিরোধে দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এডিস এজিপটাই ও এডিস এলবোপিক্টাস প্রজাতির স্ত্রী-মশার কামড়ে ডেঙ্গুর ভাইরাসে অসুস্থ মানুষের দেহ থেকে সুস্থ মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। ক্লাসিক্যাল ও হেমোরেজিক নামে দুই ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তবে হেমোরেজিক জ্বরের ভয়াবহতা বেশি। রাজধানী ঢাকাতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২০ জন। অক্টোবর শেষ হতে চললেও কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর পৃথিবীতে গড়ে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু আক্রান্ত হচ্ছে তা কিন্তু নয়, প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার মানুষ ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যুবরণ করছে। আমাদের দেশে ১৯৬৪ সালে ডেঙ্গু জ্বরের কেস রিপোর্ট হয়। ২০০০ সালে প্রথম ব্যাপক আকারে ডেঙ্গু দেখা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভাষ্যমতে, ওই বছর সারা দেশে ৫ হাজার ৫৫১ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৯৩ জন। পরের বছর ২ হাজার ৪৩০ জন আক্রান্ত হলেও মারা যায় ৪৪ জন। ২০০২ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আবার বেড়ে যায়। ওই বছর ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং ৫৮ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও ২০১৬ সালে আবার বেড়ে যায়। ওই বছর ৬ হাজার ৬০ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ২০১৭ সালে ২ হাজার ৭৬৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের মধ্যে মারা যায় ৮ জন।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট মারফত জানতে পারলাম যে, শুধু রাজধানী ঢাকাতে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি বছর রাজধানীতে এ পর্যন্ত সাত হাজার ৪৫০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে, আর মারা গেছে ১৯ জন, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর এই সংখ্যা গত ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বেড়েই চলেছে। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, একজন মানুষ চারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। প্রথমবার আক্রান্ত হলে তেমন গুরুতর না হলেও পরে আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের (এনএইচসিএমসি) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ৩০ জন। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২৭ জন। প্রতিদিনই নতুন ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু এবং দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্ব জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের দুই ভাগ অর্থাৎ ২৫০ কোটি লোক ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ এই তালিকায় প্রথম সারিতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের টনক নড়েনি।
অনেকে মশারি টাঙিয়েও ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাচ্ছে না আবার অনেকে রাস্তায় ঘুমিয়েও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে যদি গড়িমসি করা হয় তাহলে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। ২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়র রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর রাখার যে অঙ্গীকার করেছিলেন সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই অঙ্গীকার হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এখন ঢাকা শহরে সবুজ ও পরিচ্ছন্নতা দুর্লভ হয়ে পড়েছে। সরকারের উচিত দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া এবং মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া। প্রতি বছর মশা নির্মূলের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মশা নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীবাসীর করের টাকায় যাদেরকে বেতন দিয়ে রাখা হয়, মশার উপদ্রব কমানোর জন্য তারা মাসের পর মাস পার হয়ে গেলেও সময়মত ওষুধ স্প্রে করছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডে স্প্রে করার কাজে ৬ জন করে কর্মী থাকলেও তাদেরকে খুঁজে পাওয়া ভার। অভিযোগ রয়েছে, এমন কিছু স্থানেই মশার ওষুধ স্প্রে করা হয় যেগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের সম্পর্ক রয়েছে। মশা নিধনের ক্ষেত্রে যে দেশে দলীয় রাজনীতি প্রাধান্য পায় সেই দেশের জনগণের ভাগ্যে মশার কামড় অবধারিত। মশারি টানানো থেকে শুরু করে বাহারী নামের বিভিন্ন মশার কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট ও মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। দুই সিটি করপোরেশন মশা নিধনের জন্য কোটি টাকা ব্যয় করলেও মশার কামড় থেকে নাগরিকদেরকে মুক্তি দিতে পারছে না। কারণ, যে সমাজ ও রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা থাকে না সেখানে জনগণের অধিকার ও ক্ষমতাসীনরা রক্ষা করে না। যদি জবাবদিহিতা থাকতো তাহলে মশার কামড়ে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হতো না। একটি আধুনিক শহরে সবকিছু নিয়মমাফিক চলে। অথচ দেড় কোটি জন অধ্যুষিত এই শহরে কোথাও কোনো নিয়ম আছে বলে মনে হয় না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকার আবিষ্কার করতে পারলে এ রোগের হাত থেকে দেশের হাজারো মানুষের জীবনকে রক্ষা করা সম্ভব। রাষ্ট্রের উচিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করে এডিস মশার বিস্তার রোধ ও মশা ধ্বংস করে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে জনগণকে রক্ষা করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।