Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরও দুইটি চাঁদ আছে পৃথিবীর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

একটা নয়, আরও দু’টি চাঁদ আছে আমাদের। আর সেই দু’টি চাঁদ আমাদের কাব্য, কল্পনা, ভালবাসার চাঁদের মতো পাথুরে নয়। তারা আসলে জমাট বাঁধা অত্যন্ত ঘন মেঘ। যে মেঘের শরীর গড়া মহাজাগতিক ধুলোবালি দিয়ে। এই দু’টি চাঁদও আমাদের পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে। আমাদের অতি পরিচিত চাঁদের মতোই তারা পিঠে পড়া সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
গত ৬ দশক ধরে খোঁজ-তল্লাশের পর সেই দু’টি চাঁদের একটিকে শেষমেশ দেখতে পেয়েছে হাঙ্গেরির জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম, ‘নিউ এভিডেন্স ফর দ্য এক্সিসটেন্স অফ দ্য কোর্দিলিউস্কি ডাস্ট ক্লাউড’। গবেষণাপত্রটি আগামী শনিবার প্রকাশিত হবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘মান্থলি নোটিসেস অফ দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র চলতি সংখ্যায়। যে গবেষকদলে রয়েছেন এক অনাবাসী বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানীও।
১৯৬১ সালে পৃথিবীর আরও চাঁদের অস্তিত্বের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন পোল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী কাঝিমিয়ার্ঝ কোর্দিলিউস্কি। কিন্তু তাদের পিঠ থেকে প্রতিফলিত আলো এতটাই দুর্বল যে, তাদের দেখা পাওয়ার আশা এক রকম ছেড়েই দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। বাড়তি অসুবিধার কারণ ছিল, পৃথিবী থেকে তাদের দূরত্ব।
সহযোগী গবেষক, আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে দূরত্বকে বলা হয় ‘ল্যাগরাঞ্জে পয়েন্ট’। যে দূরত্বে আমাদের আরও একটি চাঁদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে, তাকে বলা হয়, ‘ল্যাগরাঞ্জে-ফাইভ’ বা ‘এল-৫’ পয়েন্ট। এটা সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে এমন একটি ‘দুর্গম’ অবস্থান যে তার কোথায়, কী লুকিয়ে রয়েছে, তা দেখা তো দূরের কথা, বুঝে উঠতেও অনেক সাধ্য-সাধনার প্রয়োজন হয়। কারণ, সেই দূরত্ব, সেই অবস্থান সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ, বৃহস্পতি, শনি, নেপচুনের মতো ভারী মহাজাগতিক বস্তুগুলির অত্যন্ত জোরালো মহাকর্ষ বলের জন্য প্রায়ই ‘হারিয়ে যায়’। বিছানায় টানটান চাদরে ভারী লোহার বল গড়িয়ে দিলে একটা গর্ত তৈরি হয় চাদরের মাঝখানে। আর তাতে বিছানার লোহার বলটা ওজনে যতই ভারী হয়, ততই বড় হয় বিছানার মধ্যের গর্তটা। চাদরের বিভিন্ন জায়গার দাগগুলি তখন আর আলাদা ভাবে দেখতে পাওয়া যায় না, বিভিন্ন দিক থেকে চাদরটা কুঁচকে যায় বলে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়। সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ, বৃহস্পতি, শনি, নেপচুনের মতো ভারী মহাজাগতিক বস্তুগুলির অত্যন্ত জোরালো মহাকর্ষ বলের জন্য ‘ল্যাগরাঞ্জে-ফাইভ’ পয়েন্ট প্রায়ই ‘হারিয়ে যায়’ বলে সেই জায়গায় থাকা আমাদের এই আরও একটি চাঁদও দেখা যায় না। এমনই আরও একটি চাঁদ লুকিয়ে রয়েছে সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যেকার আরও একটি দূরত্ব ‘ল্যাগরাঞ্জে-ফোর’ বা ‘এল-ফোর’ পয়েন্টে। তবে সেটিকে এখনও চাক্ষুষ করতে পারেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
ধ্রুবজ্যোতি জানিয়েছেন, তারা প্রথম তাত্তি¡ক ভাবে ওই চাঁদের অস্তিত্বের আভাস পেয়েছিলেন। তার পর তাঁরা কম্পিউটার সিম্যুলেশন করেও দেখতে পান, আমাদের পরিচিত চাঁদের মতোই আরও দু’টি চাঁদ রয়েছে পৃথিবীর। এই তাত্তিক গবেষণার চাক্ষুষ প্রমাণ পেতে তারা হাঙ্গেরির বিজ্ঞানী জুডিথ স্লিজ-বালঘের নিজের অবজারভেটরির একটি খুব শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্য নিয়েছিলেন। সেই টেলিস্কোপের মাধ্যমেই এ বছর আগস্টে তারা আরও একটি চাঁদের হদিশ পান ‘এল-ফোর’ পয়েন্টে।
ওয়াশিটংন থেকে জুডিথ বলেন, “আমরা যা দেখেছি, সেই ধুলোর মেঘের চাঁদ (কোর্দিলিউস্কি ডাস্ট ক্লাউড)-এ আজ থেকে ৫৭ বছর আগে দেখতে পেয়েছিলেন পোলিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোর্দিলিউস্কি। আমরা নিশ্চিত, এটাই সেই চাঁদ। কারণ, অঙ্কের হিসেব আর কম্পিউটার সিম্যুলেশনের সঙ্গে তা অবিকল মিলে যাচ্ছে। এই ভাবেই ‘এল-ফোর’ পয়েন্টে লুকিয়ে থাকা আরও একটি চাঁদের হদিশ খুব শীঘ্রই মিলবে বলে আমাদের আশা।” সূত্র: আনন্দবাজার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদ

১৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ