Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনিয়োগের আশ্বাসেও থামছে না পতন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

চলতি বছরের সব থেকে বড় দরপতনের ঠিক পরের দিনই দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনে বড় ধরনের পতন হয়েছে। অর্থাৎ গতকাল পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোনিম্ন লেনদেন হয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। দরপতনের হাত থেকে বেরিয়ে আসতে গতকাল ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) বন্ড বিক্রির দুই হাজার কোটি টাকা আগামী সপ্তাহ থেকেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দেন। এছাড়া আরও আগে চীনা বিনিয়োগকারীরা প্রায় হাজার কোটি টাকার ডিএসইর শেয়ার কেনে। এসব বড় ধরনের বিনিয়োগের খবরও থামাতে পারছে না পতন।
গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন চলাকালীন সময়েই আইসিবির পক্ষ থেকে বড় বিনিয়োগের ওই সুখবর আসে। তবে বাজারে সুখবরটি খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। এমনকি এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকেনি।
ডিএসইর পাশাপাশি লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। আর ডিএসইতে মূল্যসূচক সামন্য বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। অবশ্য যে পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে দুই বাজারেই কমেছে তার থেকে বেশি।
চলমান শেয়ারবাজারে পতনের পেছনে যৌক্তিক কোন কারন খুজে পায়নি শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা। তবে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যাতে বিনিয়োগকারীরা ভয়ে লোকসানেও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় সহায়তা করতে বন্ডের দুই হাজার কোটি টাকার পুরোটাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি)।
গতকাল বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আইসিবিতে স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকে হয়। এতে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মো. সাইফুর রহমান, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক, ডিএসই ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী সানাউল হক জানান, গত কয়েকদিনের বাজারে পতন নিয়ে আজকে বৈঠক হয়। এতে পতনের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ পতনে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা বাজার নিয়ে আশাবাদী। সামনে শেয়ারবাজার ভালো হবে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের স্বার্থে বন্ডে ইস্যুকৃত দুই হাজার কোটি টাকার পুরোটাই আমরা এই বাজারে বিনিয়োগ করার কথা চিন্তা করছি। যদিও দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আগামী সপ্তাহেই আমরা বন্ডের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারব বলে আশা করছি। এ ছাড়া চীনা কনসোর্টিয়ামের টাকাটা দ্রুত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে। তিনি আরও জানান, বাজারের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করার জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। শেয়ারবাজারের যেসব বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয় না বা হয়নি সেগুলো নিয়ে এই কমিটি কাজ করবে। অনেকটা সমন্বয় কমিটির মতো। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই কমিটি গঠন করে দেবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে এমন কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, যার কারণে শেয়ারবাজারে পতন হতে পারে। পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই।
ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, আমরা আশাবাদী শিগগিরই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, অতীতে রাজনৈতিক কারণে শেয়ারবাজারের কোনো সমস্যা হয়নি। আর আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে শেয়ারবাজারে পতন হচ্ছে এটা ঠিক না। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, এটা স্বল্পমেয়াদি।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শেয়ারবাজারে পতন হচ্ছে। এই সময়ে মূল্যসূচক কমেছে সাড়ে ৩০০ পয়েন্ট। তবে গত দুই কার্যদিবসে সেই পতন বড় আকার ধারন করেছে। ওই দুই কার্যদিবসে মূল্যসূচক কমেছে ১৩০ পয়েন্ট। আর সেপ্টেম্বরের ৬৩৩ কোটি টাকার লেনদেন বর্তমানে ৪৩৫ কোটিতে নেমে এসেছে।
গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দিনের প্রথম অংশে ভালো ভাবে চলা বাজার লেনদেনের শেষ ঘণ্টায় এসে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম পড়তে থাকে। ফলে ডিএসইতে গতকাল লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৩৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১৫৪টি। আর ৫৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের এমন দাম কমার পরও ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ২৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুটি মূল্যসূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় দুই পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় চার পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৭৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৫৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে শুধু লেনদেনই কমেনি। চলতি বছরের ৩১ মে’র পরে বাজারটিতে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। ৩১ মে ডিএসইতে লেনদেন হয় ৩৬১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এরপর মঙ্গলবারের আগ পর্যন্ত ডিএসইতে আর ৩৮০ কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়নি।
অন্যদিকে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ২৬ পয়েন্ট কমে নয় হাজার ৭৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪১টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ