Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আসামে সর্বাত্মক বন্ধ পালিত

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ভারতের বিজেপিশাসিত আসামে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬-র বিরুদ্ধে ১২ ঘণ্টার বনধের ফলে জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) বনধের ফলে গুয়াহাটি, তিনসুকিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এসব এলাকায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বিভিন্ন জায়গায় বনধ সমর্থকরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি’র আহ্বানে এআইইউডিএফ, কংগ্রেস, আসাম জাতীয়তাবাদী ছাত্র পরিষদসহ কমপক্ষে ৪৬টি সংগঠন এদিনের বনধকে সমর্থন জানায়। গতকাল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীরা রেল লাইন অবরোধ করে রেল চলাচলে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বনধ ব্যর্থ করার ঘোষণা দেয়াসহ সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকায় প্রচুর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ বলেন, ‘আসাম সরকার স্থানীয় স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আসামের বিজেপি সরকার সংবিধান সংশোধনী বিলের মাধ্যমে হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব দিতে চাচ্ছে। যদিও মেঘালয় মন্ত্রীপরিষদ আগেই ওই বিলের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
আসামের বনধ প্রসঙ্গে আসামের কংগ্রেস বিধায়ক শেরমান আলী আহমেদ গতকাল (মঙ্গলবার) বলেন, ‘ভারত সরকার বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা অন্যান্য দেশ থেকে, বিশেষকরে বাংলাদেশ থেকে বাঙালি হিন্দুদের আসামে আনার কুমন্ত্রণা করে যে নাগরিকত্ব বিল পাস করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের দলসহ অন্যান্য প্রায় ২৪টি সংগঠন সর্বাত্মক বনধের ডাক দিয়েছিল। আসাম সরকার এই বনধ ব্যর্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করার পরেও গোটা আসামে সর্বাত্মক বনধ পালিত হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, যে সারা আসাম ছাত্র সংস্থা ‘আসু’ ’৭৯ সাল থেকে বিদেশি বিতাড়নের ডাক দিয়ে আন্দোলন করেছিল, তাঁর এই বনধকে সমর্থন দেয়নি। এভাবে তাদের নেতৃবৃন্দের মুখোশ খুলে পড়েছে। অর্থাৎ আসুও বাংলাদেশি এনে আসামের ভাষা সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায় তা স্পষ্ট হয়েছে। সরকারের আপ্রাণ চেষ্টা সত্তে¡ও ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ গতকাল সর্বাত্মক বনধ পালনে শামিল হয়েছেন। আমরা আশা করব, আসাম সরকার সমস্ত জন সাধারনের আশা, আকাক্সক্ষা বা তাদের মতামতের দিকে লক্ষ্য করে অতি শিগগিরি ওই বিলের বিরোধিতা করে আসামের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করবে।’
প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিলে প্রধানত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুরা ‘ধর্মীয় কারণে’ নির্যাতিত হয়ে যারা এদেশে কমপক্ষে সাত বছর ধরে আশ্রয় নিয়ে আছেন তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এরআগে কেন্দ্রীয় সরকার এক নির্দেশিকায় ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈনরা নাগরিকত্ব পাবেন বলে জানানো হয়েছিল। এদিকে, প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে আয়োজিত আসামের গুয়াহাটিতে আগামী ১৭ নভেম্বর প্রস্তাবিত বাঙালি গণসমাবেশের অনুমতি দেয়নি সরকার ও পুলিশ প্রশাসন। বাঙালি গণসমাবেশের প্রধান বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব বলেছিলেন, প্রস্তাবিত ওই গণসমাবেশ হবেই। ২৭ টি বাঙালি সংগঠনের সদস্য সমর্থকরা ওই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু প্রস্তাবিত ওই বাঙালি গণসমাবেশ বন্ধের জন্য কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতিসহ বিয়াল্লিশটি সংগঠন আল্টিমেটাম দেয়। আগামী পয়লা নভেম্বরের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ওই সমাবেশ বাতিল না করা হলে ১৬/১৭ নভেম্বর গোটা রাজ্য অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা মঙ্গলবার বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় ১৭ নভেম্বর কোনো সংগঠনকেই সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।’ পুলিশ গত সোমবারই ওই সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাগরিকত্ব

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ