পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রায় ২৬ লাখ মানুষের জন্য ৩ হাজার ৮৭৯টি বাস, মিনিবাস, টেম্পু। আর ১৩ লাখ ২০ হাজারের জন্য ১৩ হাজার অটোরিকশা। যাত্রীর তুলনায় অপ্রতুল যানবাহনের এ সংখ্যাই বলে দেয় চট্টগ্রাম নগরীতে গণপরিবহনের সঙ্কট কতটা প্রকট। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরী একই সাথে বাণিজ্যিক রাজধানীও। বন্দরনগরীর লোকসংখ্যা এখন প্রায় ৬০ লাখ। জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে নগরীতে যানবাহনের চাপ বাড়লেও বাড়েনি গণপরিবহনের সংখ্যা।
গণপরিবহনের চেয়ে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় একদিকে নগরীতে তীব্র যানজট হচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তায় নেমেই চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে স্বল্প ও সীমিত আয়ের লোকজনকে আয়ের একটা অংশ যাতায়াতেই ব্যয় করতে হচ্ছে। যাত্রীদের রীতিমত জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহন শ্রমিকরা। এই খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, বাস, মিনিবাস আমদানিতে শুল্কবৃদ্ধির কারণে কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। পুরাতন যানবাহন দিয়ে চলছে যাত্রী পরিবহন। ফলে লক্কর-ঝক্কর বাস, মিনি-বাসের কারণে সড়কে শৃঙ্খলা আসছে না।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের পর সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে নামে পুলিশ ও বিআরটিএ। তবে শৃঙ্খলা ফেরার বদলে পরিবহণ সঙ্কটের কারণে সড়কে দুর্ভোগ এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। কারণ অভিযানে কিছু যানবাহন আটক আর মামলার কারণে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা আরও কমে গেছে। রুট পারমিট থাকার পরও রাস্তায় বাস নেই। এই প্রেক্ষাপটে শৃঙ্খলা ফেরাতে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করতে আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে গণপরিবহন আমদানিতে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়লে সড়কে যানজট কমবে, সেই সাথে জনদুর্ভোগেরও অবসান হবে।
চট্টগ্রামে গণপরিবহনের সঙ্কট দীর্ঘদিনের। মহানগরীর পাশপাশি মহানগরী থেকে জেলার ১৪টি উপজেলার বিভিন্ন রুটে পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই। বিশেষ করে নগরীতে গণপরিবহনের তুলনায় ছোট গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এতে নগরীর সড়কগুলোতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। শত শত কোটি টাকায় ফ্লাইওভার করে সুফল মিলছে না। বন্দরনগরী হওয়ায় এমনিতে ভারী যানবাহনের চাপ বেশি তার উপর ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সড়কে তীব্রজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নগরীতে শৃঙ্খলা আনতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করছে বিআরটিএ। তিনটি আদালতে যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে কোটি কোটি টাকা জরিমানা আর শত শত মামলা হলেও কোনো সুফল মিলছেনা। মামলার পরও কাগজপত্র হালনাগাদ না করে সড়কে চলছে লক্কর-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন যানবাহন। অভিযানের শুরুতে কাগজপত্র হালনাগাদ আর ফিটনেস সনদ নিতে বিআরটিএর অফিসে দীর্ঘ লাইন থাকলেও এখন আর তেমনটা নেই বলে জানান, বিআরটিএর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শুধুমাত্র মামলা করেই সুফল পাওয়া যাবে না। এই খাতে নতুন বিনিয়োগ দরকার।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, অভিযানের মুখে অনেক ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে নেই। তবে এটি কোনো সমাধান নয়। লক্কর-ঝক্কর যানবাহন সরিয়ে নিয়ে নতুন বা সড়কে চলাচলের উপযোগী যানবাহন নামাতে হবে। তবে মালিকদের মধ্যে সেই উদ্যোগের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি ‘নগর যাতায়াতে পথচারী ও গণপরিবহনে অগ্রাধিকার- প্রেক্ষিত চট্টগ্রাম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। স্থপতি, প্রকৌশলী, নগরপরিকল্পনাবিদসহ পেশাজীবীদের এই সংগঠন নগরীতে শৃঙ্খলা আনতে বেশকিছু সুপারিশ পেশ করে। ফোরামের হিসাবে বন্দর নগরীতে রিকশা ও অটোরিকশায় ২২ শতাংশ, বাস, মিনি-বাস ও টেম্পোতে ৪৩ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ নগরবাসী পায়ে হেঁটে নগরযাত্রা করেন।
নগরীতে বর্তমান লোকসংখ্যা ৬০ লাখ। সেই হিসাবে গণপরিবহন বিশেষ করে বাস, মিনি-বাস ও টেম্পুর উপর নির্ভরশীল যাত্রীর সংখ্যা ২৫ লাখ ৮০ হাজার। অথচ নগরীতে তাদের জন্য গণপরিবহন রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৮৭৯টি। এর মধ্যে বাস এক হাজার ৪৯৬টি ও মিনিবাস ২ হাজার ৩৮৩টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আবার রুট পারমিট থাকলেও বাস্তবে এসব বাস রাস্তায় নেই। গেল কয়েক দিনের অভিযানে লক্কর-ঝক্কর বাসের বিরাট অংশ সড়কে থেকে হাওয়া হয়ে গেছে। ফলে গণপরিবহন সঙ্কট এখন আরও প্রকট হয়েছে।
নগরীতে ২২শতাংশ মানুষ সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশার উপর নির্ভরশীল। সে হিসাবে যাত্রীর সংখ্যা ১৩ লাখ ২০ হাজার। অথচ নগরীতে বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা মাত্র ১৩ হাজার। আর বৈধ-অবৈধ মিলে রিকশার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। ফোরামের হিসাবে নগরীর ২৫শতাংশ মানুষ হেঁটে গন্তব্যে যান। অথচ তাদের জন্যও নেই নিরাপদে হাঁটার ব্যবস্থা। সড়ক, ফুটপাত বেদখল হয়ে যাওয়ায় সড়কে বিশৃঙ্খলা এখন চরমে। অনেক এলাকায় হাঁটারও সুযোগ নেই।
চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা নিয়ে ১০ বছর মেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক ও সিডিএ। খসড়া এ মহাপরিকল্পনায় দেখানো হয়েছে, নগরীর ৭৫ শতাংশ যাত্রীই গণপরিবহন বা বাস সার্ভিস ব্যবহার করেন বা করতে চান, যদিও বাস সড়কের মাত্র ১৭ শতাংশ ব্যবহার করে। অন্যদিকে প্রাইভেট কার নগরীর মাত্র ৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করলেও সড়কের ২৯ শতাংশ দখল করে থাকে। এছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৬ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের বিপরীতে ২৭ শতাংশ সড়কজুড়ে বিচরণ করে। গণপরিবহনের ব্যাপক চাহিদা সত্তে¡ও অটোরিকশা, রিকশা ও প্রাইভেট কার নগরীর মাত্র ১১ শতাংশ যাত্রীর পরিবহন চাহিদা মিটিয়ে ৫৬ শতাংশ সড়ক দখলে রেখেছে, যা নগরীর আধুনিক ও নির্বিঘœ ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
এই প্রেক্ষাপটে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয় ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন স্থাপনা মহানগরীর সড়কের বিভিন্ন পরিসরকে সঙ্কুচিত করায় যানজট তীব্র হয়েছে এবং পথচারীর সুযোগ সঙ্কুচিত ও সঙ্কটপূর্ণ করা হয়েছে। নগরীর উন্নয়ন বিনিয়োগে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর উন্নয়ন দর্শন অনুসরণ, পথচারী চলাচল ও গণপরিবহনমুখী যাতায়াতে বৃহৎ বিনিয়োগ করা, বিদ্যমান সড়কের শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করা, নগরকেন্দ্র থেকে বিমানবন্দর যাতায়াতে সাশ্রয়ী বিকল্প ব্যবস্থাসহ ডেডিকেটেড লেইন এবং সব রাস্তায় ফুটপাত সংযোজনের দাবি জানানো হয় ফোরামের পক্ষ থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।