পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি বলে মনে করছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনে উত্থাপন করে আইনটির ‘বিতর্কিত’ ৯টি ধারা সংশোধনীর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্পাদকরা এক মানববন্ধনে এই দাবি জানান। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভখ্যাত সংবাদপত্র সম্পাদকদের নজিরবিহীন মানববন্ধন কর্মসূচির খবর দেশি-আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। এর আগে আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বাতিলের দাবি জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশ, ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিক, সম্পাদক পরিষদ, সুশীল সমাজ এবং পেশাজীবীরা। এমনকি সংসদে আইনটি পাসের পর প্রেসিডেন্টকে আইনে সই না করার জন্য অনুরোধও জানানো হয়। সম্পাদক পরিষদ এই আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের দাবিতে কর্মসূচি দিলে তিনজন মন্ত্রীও কর্মসূচি স্থগিত করে সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। উদ্বিগ্ন সম্পাদক পরিষদ গত শনিবার এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সম্পাদক পরিষদকে দেয়া কথা রাখার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি’।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা সংশোধনের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, আমরা চাই আগামী সংসদ অধিবেশনে এই আইনটি সংশোধন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হবে। আলোচনার মাধ্যমে এই আইনের সংশোধনে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নয়। পরিষদ আইনের বিশেষ কতগুলো ধারা সংশোধনের দাবি করছে। বর্তমান আইনটি শুধু সাইবার জগৎ নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমেরও কণ্ঠরোধ করবে।
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, আমরা আশা করি, আমাদের এই দাবি সরকার গ্রহণ করবেন এবং সংসদের শেষ অধিবেশনে যথাযথ সংশোধনী এনে এই আইনটি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রী বলেছেন আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। আলোচনার দরজা খোলা, শুনে আমরা খুশি। আমরাও মনে করি না আলোচনার দরজা বন্ধ। আলোচনার মাধ্যমে আইনের সংশোধনে আমরা আশাবাদী। তবে আলোচনার নামে প্রহসন যেন না হয়। আমরা আলোচনায় গিয়েছি, আমরা অত্যন্ত বিশ্বাস নিয়ে গিয়েছি। সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন এখনো হয়নি।
মানববন্ধনে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ তাদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে ১. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে ২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনেই আনতে হবে ৩. পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, তবে কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে ৪. কোনো সংবাদমাধ্যমের কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে, ৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতা দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না ৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে। ওই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পরে এবং ৭. এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইন দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যকভাবে করতে হবে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এই মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন মানব জমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, করতোয়ার সম্পাদক মোঃ মোজাম্মেল হক, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান, ইন্ডিপেনডেন্টের সম্পাদক এম শামসুর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ প্রমুখ।
এর আগে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা তুলে ধরে সেগুলো সংশোধনের দাবীতে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয়। ওই দিন মাহফুজ আনাম বলেছিলেন, ‘আমাদের পরিষদ কখনোই আইনটি বাতিল চায়নি। নির্দিষ্ট কয়েকটি ধারার পরিবর্তন চেয়েছে। ভারত সরকার এ ধরণের একটি আইন পাস করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের হাইকোর্ট এটিকে অসাংবিধানিক অভিহিত করে বাতিল করে দেয়।’
উল্লেখ, গত মাসে দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বিল পাস হয়। বলা হয়, সাইবার অপরাধ, ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা ঠেকাতে এবং অনলাইনের মাধ্যমে অবৈধভাবে গুজব ছড়ানোসহ বিভিন্ন অপরাধ মোকাবেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সংশোধনের দাবি করে আসছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধনের ঘোষণা দিলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোহবান চৌধুরী সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে আইনটির বিতর্কিত ধারাগুলোর সংশোধনীর বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।