Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএনপির ঐক্য আরো দৃঢ়

বিএনপিতে কোনো সঙ্কট নেই, আছে সরকারে : মওদুদ আহমদ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

সঙ্কট যেন বিএনপির পিছু ছাড়ছে না। আলোচিত সেই এক-এগারো ঘটনার পর থেকে দলটি একের পর এক সঙ্কট মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। জেল-জুলুম, হামলা-মামলা এত কিছুর মধ্যেও দলের নেতাকর্মীদের ঐক্য ধরে রেখেছে বিএনপি। অনেকে ধারণা করেছিলেন, নানাবিধ সঙ্কট এবং সরকারের কূট কৌশলে পড়ে বিএনপি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। সেসব ধারণা ভুল প্রমাণ করে বিএনপি এখনো তাদের ঐক্য অটুট রেখেছে। শুধু তাই নয়, দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন অতীতের চেয়ে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এখন আরো অনেক বেশি সুদৃঢ়। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন এ সব সঙ্কটে তাদের দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য আরো দৃঢ় হয়েছে। একই সাথে জোটগত ঐক্যও আরও গভীর হচ্ছে। তাদের দাবি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দু’একজনকে নিয়ে একটা সময় দলের মধ্যে কিছুটা অবিশ্বাস ও দ্ব›দ্ব কাজ করলেও তা এখন আর নেই। দলের সঙ্কটময় মুহূর্তে এখন সবাই এক এবং ঐক্যবদ্ধ। তারা বলছেন, সঙ্কটে পড়ে দলের নেতাকর্মীরা খাঁটি সোনায় পরিণত হচ্ছে। সরকারের জুলুম নির্যাতন সহ্য করে একেকজন নেতাকর্মী পরীক্ষিত সৈনিক হয়ে উঠছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো/এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়/ দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে/নাই বা দিলে সান্ত¦না, দুঃখে যেন করিতে পারি জয়’ এই পংক্তিগুলো আবৃত্তি করে। বিএনপির নেতাকর্মীদের এখন আর ভয়ের কিছু নেই। ভয়কে জয় করতেই তারা এখন বদ্ধ পরিকর।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অমি অনেকবার বলেছি বিএনপি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল। তাঁর আদর্শকে যারা বুকে ধারণ করে লালন করে তারা ফিনিক্স পাখির মতো ধংসস্তুপের ভেতর থেকেও জেগে উঠবে। তাই শত চেষ্টা করেও এ দলকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। বিএনপিকে ধংস করতে সরকার একের পর এক অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে সারাদেশে ৪০ হাজারেরও বেশি মামলা দেয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা রয়েছে। অজ্ঞাত আসামীরতো কোন সংখ্যাই নাই। এত কিছুর পরও বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো টিকে আছে। শুধু তাই নয় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনোবল এক আরো চাঙা হয়েছে। সবার মধ্যে ঐক্য আরো মজবুত হয়েছে। আন্দোলন কর্মসূচির জন্য সবাই মুখিয়ে আছে। আশা করছি খুব শিগগিরই বৃহত্তর কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে নামবো।
বিএনপি সৃষ্টির পর প্রথম গভীর সঙ্কটে পড়েছিল দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর। সেই ঘোর সঙ্কটকালে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে দলের হাল ধরেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর তার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা এবং আপোষহীন নেতৃত্বে বিএনপি ঠিক ফিনিক্স পাখির মতই রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ায়। সে সময় প্রায় দীর্ঘ দশ বছর রাজপথে সংগ্রামের পর স্বৈরাচারকে হটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিএনপি। এরপর দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বহুল আলোচিত এক-এগারোর ঘটনায় আবার সঙ্কটে পড়ে বিএনপি। জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল বর্তমান সঙ্কট তারচেয়েও কঠিন বলে অনেকে মনে করছেন। দলের চেয়ারপার্সনকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। দলের দ্বিতীয় কান্ডারী তারেক রহমানকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। তার নামে শতাধিক মামলা রয়েছে। তিনটি মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি এখন নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মামলায় সাজা দিয়ে থাকে কারাবন্দি রাখা হয়েছে। তার নামে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পরও অন্য মামলায় জামিন বাতিল দেখিয়ে তার কারামুক্তি দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রত্যেকের নামে রয়েছে শত শত মামলা। সারাদেশে নেতাকর্মীদের নামে ৪০ হাজারেরও বেশি মামলা রয়েছে। অনেক নেতা গুম হয়েছেন। এ অবস্থায় দলের জন্য গভীর সঙ্কট বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে দলের নেতারা তা মনে করেন না। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের সর্বস্তরের নেতারা মনে করেন এসব হামলা মামলা দিয়ে বিএনপিকে সরকার দমাতে পারবে না। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় সাজা দিচ্ছে বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করছেন। তারা বলছেন, দেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে সরকার বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য মিথ্যা মামলায় দলের চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাজা দিচ্ছে। সরকার তাদের জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে তাদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এসব মিথ্যা মামলায় সাজা দিচ্ছে। তাই জনমনে এ নিয়ে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। বরং সরকারের এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাজায় তাদের প্রতি দেশবাসীর সহানুভূতি আরও বৃদ্ধি পাবে এমনটাই বলছেন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া একটি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে বন্দি থেকেও দলের চেয়ারপার্সন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যে নির্দেশ দিচ্ছেন তাতেও সরাদেশের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তাই নেতাকর্মীরা মনে করেন, তারেক রহমান তাদের সাথেই আছেন। এ বিষয়ে নেত্রকোণা জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, জেল-জুলুম রাজনৈতিক নেতাদের অন্যতম অনুষঙ্গ। জেল এক রাজনৈতিক নেতাকে আরো পরিশুদ্ধ এবং পরিপক্ষ করে। পৃথিবীর ভিন্নি দেশের বিখ্যাত নেতারাই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আর নির্বাসনে থেকেও অনেক নেতা শেষ পর্যন্ত সে দেশের জাতীয় নেতা হয়েছেন এবং নজিরও রয়েছে। তাই আমাদের দলের নেতা তারেক রহমানও ভবিষ্যতে এদেশের জাতীয় নেতায় পরিণত হবেন এটাই আমরা মনে করি। তিনি বলেন, সরকার যত মামলা দিচ্ছে নিপীড়ন করছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একতা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সামনে এখন আর ভয়ের কিছু নাই। আমরা এখন ভয়কে জয় করতে চাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, বিএনপিতে এখন কোন সঙ্কট নেই। বরং সরকারই এখন চরম সঙ্কটে রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের কারণে সরকার মনে করছে যে, আমাদের যে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া করতে যাচ্ছি এটাকে ব্যাহত করা হবে। আমি বলবো, এই রায়কে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করে, উপেক্ষা করে এবং কোনও গুরুত্ব না দিয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্যের আন্দোলন চলবে। খুব শিগগিরই আমরা এটার একটা রূপরেখা দিবো এবং এই আন্দোলনের একটা কাঠামো ঘোষণা করবো। এরপর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে এই সরকারের পতনের ব্যবস্থা করবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপিতে কোন সঙ্কট নেই। বরং অতীতের চেয়ে দল এখন আরও সুসংহত এবং ঐক্যবদ্ধ। সরকারের জলুম নির্যাতনে দলের ঐক্য আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু দলের ঐক্য নয়, এই মুহূর্তে ২০ দলীয় জোটের ঐক্যও বলতে পারেন অত্যন্ত সুদৃঢ়। আশা করছি খুব শিগগির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন নিশ্চিত হবে।



 

Show all comments
  • রিমন ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:১৪ এএম says : 0
    শুধু দৃঢ় থাকলে হবে না। সক্রিয় থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Rahman ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:১৫ এএম says : 1
    100% sothik kotha
    Total Reply(0) Reply
  • রাসা ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৫১ এএম says : 1
    মনে মনে রসগোল্লা খান ফকরুল সাহেব।
    Total Reply(0) Reply
  • Niaz Khan ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৪৯ পিএম says : 1
    রাজপথই এখন বিএনপির জন্য শেষ উপায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Jahidul Islam ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৫৫ পিএম says : 2
    বিএনপির কর্মী বলেন নেতা বলেন বিগত ১২ বৎসর জবত যে ভাবে নির্যাতিতো হয়েছে এবং হয়ছেন তাঁদের মনে আজ দৃঢ় শক্তি যোগ্যেছে। জেল জুলুম কে আর ভয় পায় না। দেশের সাধারণ মানুষও এখন বুঝতে পেরেছে তাদের ভোট অধিকার হরণ করা হয়েছে। তাই বিএনপি কে হ্মমতায় দেখতে চায় দেশের জনগণ। আমার ভোট আমি দিবো যাকে ইচ্ছা তাকে দিবো।
    Total Reply(0) Reply
  • রিয়াজ ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:০৬ পিএম says : 0
    শুধু ঐক্য দৃঢ় থাকলেই চলবে না। মাঠে সক্রিয় হতে হবে । আন্দোলন করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ