Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা

| প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম মামলা হয়েছে। এই মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে আটক করা পাঁচজন। তাদের আসামি করে পল্টন থানায় সিআইডি এই মামলা করেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। গত বৃহস্পতিবার মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সিআইডি জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত পাঁচজন প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্য। তারা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রি করতো। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে না পারলেও প্রশ্ন দেয়ার নামে চক্রটি প্রতারণা করতো বলে সিআইডি জানিয়েছে। বাজারে বিভিন্ন সাজেশন বই থেকে নিজেরা প্রশ্ন বাছাই করে অনলাইনে গ্রুপে প্রশ্নপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রতারণা করে আসছে। সিআইড জানিয়েছে, প্রশ্নফাঁসকারী প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রথম প্রয়োগটি ভালো হয়েছে। বলা যায়, শুভ সূচনা হয়েছে। তবে এ আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা নিয়ে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন পক্ষ থেকে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। তারা মন্তব্য করেছেন, এই আইন সংবাদপত্র স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ হতে পারে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যথাযথ স্বাধীনমত প্রকাশের ক্ষেত্রে এ আইন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আমরাও আশা করবো, এই আইন যেন প্রকৃত ও যথাযথ মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। দুষ্টের দমন শিষ্টের লালনে ভূমিকা পালন করে।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যম সারাবিশ্বে অনিবার্য হয়ে উঠেছে। পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের যুগান্তকারী এই আবিষ্কার যেমন মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়ে উঠেছে, তেমনি এর অপপ্রয়োগও ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারকারী এক শ্রেণীর মানুষ একে প্রতারণা এবং অপপ্রচারের ভয়াবহ হাতিয়ারে পরিণত করেছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, এর অপপ্রয়োগ সারাবিশ্বেই হচ্ছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের নামে এই চক্র মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে আসছে। আমাদের দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে প্রতারক চক্র তরুণ-তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও গুজব রটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নাম করে অর্থ আদায় করছে। কত মানুষ যে এই ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বিপদে পড়েছে তার সঠিক তথ্য কারো জানা নেই। অনেকে প্রতারণার শিকার হয়ে আরও ভোগান্তির শিকার হওয়ার আশঙ্কায় আইনের আশ্রয় নিতে চায় না। ফলে অসংখ্য মানুষ অগোচরেই দুঃসহ জীবনযাপন করছে। ডিজিটাল মাধ্যমের এই ভয়াবহ বিপদ থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য যথাযথ আইন অবশ্যই দরকার। এক্ষেত্রে কারোই দ্বিমত নেই। তবে মানুষকে সাইবার ক্রাইম থেকে রক্ষার নামে এমন কোনো আইন করা উচিত নয়, যার অপ্রপয়োগ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গঠনমূলক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে। সদ্য পাসকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই আইনে বিতর্কিত আইসিটি অ্যাক্টর ৫৭ ধারাকে বিভিন্ন ধারায় ঘুরিয়ে-ফিরেয়ে রাখা হয়েছে। ফলে এ নিয়ে সম্পাদক পরিষদ থেকে আপত্তি তুলে ধরা হয়েছে এবং নাগরিক সমাজও উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এ আইনে প্রথম যে মামলা হয়েছে, তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। এ আইন যেন গঠনমূলক স্বাধীনমত প্রকাশ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ না করে এই ধরনের প্রতারণাপূর্ণ ঠকবাজীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। তাহলে সেটা অবশ্যই আইনের ন্যায্যতা ও উপযুক্ততা প্রতিপন্ন করবে।
সাইবার ক্রাইম সারাবিশ্বের জন্যই উদ্বেগের বিষয়। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে রাষ্ট্র থেকে শুরু করে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্রাইম ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং প্রযুক্তিও ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে। তারপরও সবক্ষেত্রে তা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের মতো দেশে এ ধরনের ক্রাইম ঠেকানোর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা লাভে পুরোপুরি সক্ষম হয়নি। তবে সাইবার ক্রাইম ঠেকানোর জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তা অবশ্যই প্রয়োজন। যেহেতু বিষয়টি তথ্য ও প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত, তাই এক্ষেত্রে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা আবশ্যক। আলাদাভাবে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নিযুক্তদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিশেষ ক্ষেত্রে দায়িত্ব প্রাপ্তদের হবে হবে দলনিরপেক্ষ। তাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বা রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত হওয়া চলবে না, প্রকৃত অপরাধ শনাক্ত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের অপপ্রয়োগ থেকে তাদের সর্বোতভাবে বিরত থাকতে হবে। আইনের যথাযথ ও সুপ্রয়োগ হলে মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হবে। অপরাধীরাও অপরাধ করতে সাহস দেখাতে পারবে না। শুভ সূচনার এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে, আমরা এটা প্রত্যাশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপত্তা আইন


আরও
আরও পড়ুন