পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইয়াবা ফেনসিডিল আসছে প্রতিবেশী দেশ থেকে
১৫ মে মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান এখনো চলছে। টানা অভিযানেও ইয়াবার ট্রানজিট রুট হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামে মাদকের বিস্তার কমেনি। অভিযানের আগে নগরীতে দিনে ছোট বড় ১১টি মাদকের চালান ধরা পড়তো। এখন প্রতিদিন গড়ে ধরা পড়ছে ১৪টি চালান। গেল সেপ্টেম্বর মাসে দিনে ১৫টি চালান ধরা পড়েছে। সাড়ে চার মাসের টানা অভিযানের মধ্যেও ব্যাপকহারে মাদকের চালান ধরা পড়ার ঘটনায় মাদকের বিস্তার বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
র্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবা এবং ফেনসিডিল দুটোই আসছে প্রতিবেশী দেশ থেকে সীমান্ত হয়ে। সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত না থাকায় এ দু’টি ভয়ঙ্কর মাদকের আগ্রাসন ঠেকানো যাচ্ছে না। এর সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালদের কাউকে এখনো ধরা যায়নি। আবার দেশের অভ্যন্তরে মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাহিদাও বেড়ে গেছে। চাহিদার কারণেই সীমান্ত পথে মাদক আসা অব্যাহত আছে। অভিযানের মুখে পাচারকারিরা কৌশল পাল্টেছে। রুট বদল করে নিত্যনতুন কৌশলে ইয়াবা ফেনসিডিল আনা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে সরাসরি সাগর পথে বলিশাল, কুয়াকাটা, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার ঢাকায় বসেও অনেকে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। লোক পাঠিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার থেকে। খুচরা বিক্রেতারাও কৌশল পাল্টেছে। আর যারা মাদকসেবী তারাও মাদকের হাটে না গিয়ে মোবাইলে অনলাইনে কিংবা গোপন কোন স্থানে গিয়ে মাদক গ্রহণ করছে। ফলে মাদকের ভয়াবহতা আগের মতোই আছে।
বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে ওঠা ছোট বড় শতাধিক কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা ঠেলে দেয়া হচ্ছে এদেশে। আন্তর্জাতিক চোরকারবারি চক্রের হাত ধরে এসব চালান আসছে। সাগর, পাহাড় এবং সড়ক পথে চট্টগ্রাম হয়ে ইয়াবার চালান ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। ভারত থেকে আসছে ফেনসিডিল। ফেনী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা ফেনসিডিলের চালান ট্রেনে, বাসে এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িতেও চট্টগ্রাম নগরীতে আসছে। ইয়াবা, ফেনসিডিলের কিছু কিছু চালান ধরা পড়লেও বেশিরভাগ চালান নিরাপদে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই কিছু চালান ধরা যাচ্ছে। তথ্য ছাড়া কোন চালান ধরার সুযোগ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর নেই।
চট্টগ্রাম নগরীতে র্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযানে মাদকের চালান ধরা পড়ছে। পুলিশের হিসেবে, গত বছর নগরীর ১৬টি থানায় ৪ হাজার ২৬০টি মাদকের মামলা হয়েছে। অর্থাৎ গেল বছর প্রতি মাসে গড়ে ৩৫৫টি চালান উদ্ধার হয়েছে। সে হিসেবে দিনে মাদকের চালান উদ্ধার হয়েছে ১১.৮টি। চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে অর্থাৎ বিশেষ অভিযান শুরুর আগে নগরীতে মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটে ১৫২২টি। তখন দিনে ১২টি চালান উদ্ধার হয়েছে। অভিযান শুরুর পর গত ৫ মাসে ২,১০৩টি চালান উদ্ধার হয়। প্রতি মাসে গড়ে ৪২০টি এবং দিনে ১৪টি মাদকের চালান ধরা পড়ছে। গেল সেপ্টেম্বর মাসে ৪৭৮টি মাদকের চালান ধরা পড়ে নগরীতে। সে হিসেবে, প্রতিদিন গড়ে ১৫টি চালান ধরা পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) আমেনা বেগম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অভিযানের মধ্যেও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, মাদকের বিস্তার কমেনি। মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় নগরীতে দিনে গড়ে ১৪-১৫টি মামলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাদক উদ্ধারের ঘটনায় আমরা মামলা করছি। আসামিদের অনেকে জামিনে বের হয়ে ফের এ কাজে নেমে পড়ছে। মাদকের উৎস বন্ধ করার ক্ষমতা পুলিশের নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সীমান্ত থেকে মাদক আসা বন্ধ না হলে শুধু পুলিশি কার্যক্রম দিয়ে মাদকের বিস্তার ঠেকানো অসম্ভব।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কিছু চালান ধরা পড়ছে। কিন্তু ফেনসিডিল বিশেষ করে ইয়াবা সহজে লুকিয়ে বহনযোগ্য হওয়ায় বেশিরভাগ চালান নিরাপদে চলে যাচ্ছে। দু’টি মাদকই ভিন্ন দেশ থেকে আসছে। ফলে সীমান্তে কড়াকড়ি করা না হলে মাদকের বিস্তার ঠেকানো যাবে না। নিত্যনতুন কৌশলে র্যাব-পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক পাচারকারিরা মাদক পাচার করছে। তবে অভিযানের কারণে আগের মতো মাদকের ভয়াবহতা নেই। অনেকে গোপনে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও কেউ কেউ এ পথ থেকে ফিরে আসছেন। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদকের বিস্তার এখনো কমেনি। তবে র্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানের ফলে নগরীতে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি অনেক কমে গেছে। নগরীর কদমতলী বরিশাল কলোনী, ছোটপুলের ডাইল আকবরের কলোনীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রকাশ্যে মাদকের হাট বসতো। সেখানে মাদক সেবন এবং বেচাকেনা চলতো অবাধে। কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই। তারা এখন লুকিয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। অভিযান অব্যাহত থাকলে মাদকের কারবারিরা দৌড়ের মধ্যে থাকবে। আর এর ফলে তারা এক সময় এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।
সরকারি তরফে বলা হচ্ছে, ভারত সরকারকে অনুরোধ করার পর তারা বাংলাদেশকে টার্গেট করে গড়ে ওঠা ফেনসিডিলের কিছু কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে ভারত থেকে ফেনসিডিল আসাও কমে গেছে। ইয়াবা কারখানা বন্ধের ব্যাপারে মিয়ানমারকে অনুরোধ করা হলেও তাতে সাড়া মিলছে না।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলমান অভিযানে কিছু মাদক বিক্রেতা ও পরিবহনকারী ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালদের কেউ এখনো ধরা পড়েনি। ফলে ইয়াবা পাচারকারী আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক অক্ষতই থেকে গেছে। তারা নতুন নতুন কৌশলে ইয়াবার চালান পাচার করছে। ক্ষুদে বিক্রেতারাও নানান কৌশলে ইয়াবা পরিবহন করছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগানো গাড়িতে পাচারকালে পাওয়া গেছে ২০ হাজার ইয়াবা। এর আগে ঝাড়–র হাতলের বাঁশে, বাবুর্চির চামচের হাতলে লুকিয়ে পাচারকালেও ধরা পড়েছে ইয়াবার চালান। জুতার তলায়, বেগুনের ভেতর, গাড়ির সিটের নিচে, মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন বক্স, তেলের ট্যাঙ্কি, পিকআপ ভ্যানের ভেতরে পাইপে ঢুকিয়েও কক্সবাজার থেকে ইয়াবা আনা হচ্ছে চট্টগ্রাম এবং রাজধানী ঢাকায়। যাত্রীবাহি বাসেও পাচার হচ্ছে ইয়াবা। মাদকের আগ্রাসনে আসক্তের সংখ্যা বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতাও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।