২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বাংলাদেশের বেশ পরিচিত একটি সবজি ঝিঙা। এটি গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন সবজি। এর গঠন লম্বাটে। একদিকে ক্রমশ সরু হয়ে শেষ হয়। ঝিঙের গায়ে দৈর্ঘ্য বরাবর পাশাপাশি খাঁজকাটা দাগ থাকে এবং বাহিরের আবরণ খসখসে। ঝিঙের ফুল ফোটে বিকালে। ঝিঙা দুই প্রকার। তেতো ঝিঙা ও মিষ্টি ঝিঙা। মিষ্টি ঝিঙাই তরকারি হিসেবে সিদ্ধ করে কাওয়া হয়। ঝিঙা উদ্ভিদ জগতের ঈঁপঁৎনরঃধপবধব গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। ঝিঙার বৈজ্ঞানিক নাম খঁভভধ ধপঁঃধহমঁষধ। শাকসবজিতে মানুষের দেহের খাদ্য চাহিদার উপাদান পুরোপুরি বিদ্যামান। আমরা অনেকেই অনেক তরকারির গুণাগুণ সম্পর্কে জানি না। ফলে অতি কম দামে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ সবজি গ্রহণ করা হতে বঞ্চিত হই। ঝিঙা এমন একটি সবজি যাতে খাদ্যের সব উপাদানই পাওয়া যায়। ঝিঙাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম পাওয়া যায়। তাছাড়া অন্যান্য খাদ্য উপাদনও কম বেশি এতে রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী ঝিঙায় পুষ্টি উপাদান নিম্নরূপ : শর্করা ৪.৩ গ্রাম, আমিষ ১.৮ গ্রাম, জলীয় অংশ (পানি) ৯৫ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৩০ কিলোক্যালরি, খনিজ লবণ ০.৩ গ্রাম, চর্বি ০.৬ গ্রাম। ভিটামিন এ ৬৭০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ বা থায়ামিন ০.১১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-২ বা রাইবোফ্লাভিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, নায়াসিন বা ভিটামিন বি-৬ ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৪০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম, আয়রণ ০.৫ মিলিগ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, ভিটামিন-ই ১.২০ মিলিগ্রাম।
রাসায়নিক উপাদান : ঝিঙায় লুফিন নামে এক প্রকার তিক্ত পদার্থ থাকে। ফুল ও ফলে থাকে মুক্ত অ্যামাইনো এসিড, আরজেনিন, গ্লাইসিন, লাইসিন, থিওনিন, এসপার জিন, লিউসিন। বীজে থাকে ২০% স্যাপোনিন, গ্লাইকোসাইড, এনজাইম ও তিক্ত গ্লাসোসাইডিক উপাদান। মূলে থাকে কিউকার বিটাসিন বি এবং সামান্য পরিমাণে সি থাকে। ঝিঙে সবজি শীতল মধুর খাবার। পেটের খিদে বাড়ায়, হাঁপানি জ্বর, কাশি, বমি উপশম করে। পেট পরিষ্কার করে দেহকে সুস্থ রাখে। ঝিঙা খাবার গ্রহণের ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এর ভিটামিস সি রক্তের বিশুদ্ধতা চামড়ার সৌন্দর্য, চর্মরোগ, দাঁতের মাড়ি নানা রোগ ও এন্টিঅক্সিডেন্টকে শক্তিশালী করে। ফলে শরীর সহজে রোগে আক্রান্ত হয় না। এমনকি শরীরে ক্যান্সার জীবাণু ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। ঝিঙাতে থাকা ফোলেট হৃদরোগ বা হার্টঅ্যাটাক প্রতিরোধ করে। ঝিঙায় আঁশ থাকায় সহজে হজম হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য (শক্ত পায়খানা) দূর করে। যারা গ্যাস্টিকে ভুগছেন তারা ঝিঙে খান উপকার পাবেন। ঝিঙাতে ভিটামিন ই থাকা এটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তের বিদ্যমান এলডি এল (লো-ডেনসিটি লাইপ্রোটিন) নামের একপ্রকার ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়। হৃদরোগ ও স্টোকের জন্য দায়ী রক্তনালিতে এথেরোস্কেলেরোসিস প্রতিরোধ করে। মহিলাদের সন্তান ধারণ ক্ষমতা ও পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরে বয়সের চাপ পড়তে দেয় না। ফলে তারুণ্য বজায় থাকে।
ওষুধি গুণাগুণ : তেতো ঝিঙে কৃমি ও অর্শ রোগে বেশ উপকার সাধন করে। *ঝিঙে লতার শিকড় গরুর দুধের বা ঠা-া পানিতে ঘষে সকাল-বিকাল পরপর তিনদিন খেলে পাথুরী রোগ দূর হয়। *যাদের পেটে বেশি গ্যাস জমা হয় তারা ঝিঙের তরকারি জোলসহ তরকারি নিয়মিত খান উপকার পাবেন। *তেতো ঝিঙা বেটে দেহের কোন অংশ আঘাত লেগে ফোলে গেলে প্রলেপ দেন কমে যাবে। *শরীরের কোনো অংশে ঘা হলে তেতো ঝিঙের রস লাগালে ঘা শুকিয়ে যায়। *যাদের পেটে টানি জমে তারা ঝিঙের তরকারি খান উপকার পাবেন। *কারো বমি বমি ভাব হলে কয়েকটা ঝিঙার পরিপক্ক বীজ বেটে পানির সাথে মিশিয়ে খান এভাব কমে যাবে। এ উপকারি সবজিটি বাড়ির আশপাশে লাগান এবং যতœনিন। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসুন।
ষ মো. জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক, কলাম ও স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।