বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় জঙ্গি আস্তানা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এখন এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে অজ্ঞাত ২/৩ জন এর কথা উল্লেখ করে জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। আবার আটককৃত বাড়ীর মালিক, কেয়ারটেকার ও অপর ভাড়াটিয়াকে জিঞ্জাসাবাদ এর পর ছেড়ে দেয় র্যাব।
র্যাব-৭ এর ফেনী ক্যাম্প অধিনায়ক শাফায়াত জামিল ফাহিম জানান, জঙ্গী আস্তানা ঘিরে আমাদের অভিযান চলবে। জোরারগঞ্জে জঙ্গী আস্তানায় অন্য জঙ্গীদের তথ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত¡াবধায়ক হক সাব ও ওই বাড়ির অন্য একটি কক্ষে থাকা নাঈম নামে মোট ৩ জনকে আটক করা হয়েছিলো। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল শনিবার সকালে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি ইফতেখার হাসান জানান ‘চৌধুরী ম্যানশন’ নামের এই জঙ্গী আস্তানায় র্যাবের সশস্ত্র অভিযানে দুটি ছিন্নভিন্ন মরদেহ ও অভ্যন্তর থেকে কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও হ্যান্ডগ্রেনেড উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল জোরারগঞ্জ থানায় র্যাব-৭ এর ফেনী ক্যাম্পের সিপিও আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে মীরসরাইয়ে একের পর এক জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসী ও বাড়িওয়ালাদের মাঝে বেড়েছে গভীর উৎকণ্ঠা। আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন অনেকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সোনাপাহাড় এলাকায় গড়ে উঠেছে বিএসআরএম কারখানা। আর এখানে কাজ করে হাজারো শ্রমিক। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শ্রমিকরা বিভিন্ন বাড়িওয়ালার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। অনেক সময় ভাড়াটিয়াদের থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আনুষাঙ্গিক তথ্য উপাত্ত নেওয়া হয়না। এতে করে পরিচয় গোপন করে কোনো জঙ্গী অবস্থান করতে পারে। ভাড়াটিয়াদের তথ্য যাচাইবাচাই করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এখানকার বাড়িওয়ালারা। জোরারগঞ্জের জঙ্গী আস্তানা সন্ধান পাওয়ার গত বছরের মার্চে মীরসরাই পৌর এলাকায় রিদোয়ান মঞ্জিল নামে একটি বাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পেয়েছিলো র্যাব।
আবার উক্ত জঙ্গী আস্তানা চৌধুরী ম্যানশন এর মালিক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী উপজেলার ৬ নং ইছাখালী ইউনিয়নের জমাদার গ্রামের মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর পুত্র। তিনি মীরসরাই উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক বলে জানা যায়। আর তত্ত¡াবধায়ক হক সাবের বাড়ি বারইয়ারহাট পৌরসভার উত্তর সোনা পাহাড় এলাকায়।
প্রসঙ্গত ঃ মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামের ‘চৌধুরী ম্যানশনের’ নামের সেমিপাকা বাড়িটিতে জঙ্গীদের অবস্থান করছে গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার পর থেকে অভিযান শুরু করে র্যাব। জঙ্গীরা টের পেয়ে ঘরের ভেতর থেকে গুলিবর্ষণ এবং কয়েকটি আইইডির বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে আরও কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলতে থাকে। ভোরের দিকে ভেতরে কয়েকটি বিস্ফোরণের পর আর কোন শব্দ শোনা যায় না। ঘরটির টিনের চাল উড়ে যায়। র্যাবের কাছে গোয়েন্দা তথ্যে এখানে চার জঙ্গী ছিল। এদের মধ্যে ছিল এক নারী জঙ্গীও। তবে অভিযানের পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নারীসহ বাকি ২ জন আগেই অন্যত্র চলে গেছে। এরপর দুটি ছিন্ন ভিন্ন মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহের পরিচয় মেলেনি। আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি একে-২২ রাইফেল, পাঁচটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, তিনটি পিস্তল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তেমন অস্ত্র ঢাকায় হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর পাওয়া গিয়েছিল। চট্টগ্রাম আদালত ভবনে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানোর টার্গেট নিয়ে মীরসরাইয়ের এই বাড়িতে আস্তানা গড়ে নব্য জেএমবির একটি গ্রæপ। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিএসআরএম এর কর্মচারী পরিচয়ে সোহেল নামে একজন এসে মাসিক ৫ হাজার টাকায় বাড়িটি ভাড়া নেয়। তবে বাড়িটি ভাড়া দেয়ার সময় কেয়ারটেকার ও বাড়ির মালিক জঙ্গীদের কাছ থেকে কোন জাতীয় পরিচয়পত্র নেয়নি। ফলে ভুয়া পরিচয়ে বাড়িটি সহজেই ভাড়া নেয় জঙ্গীরা।
আরো উল্লেখ্য যে, এর আগে গত বছরের মার্চে মীরসরাই পৌর এলাকায় রেদোয়ান মঞ্জিল নামে আরেকটি বাড়িতে আস্তানা গেড়েছিল জঙ্গীরা। গোয়েন্দা তথ্যে ওই খবর জেনে র্যাব অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ২৯ টি বোমা এবং নয়টি চাপাতি উদ্ধার করেছিল। একইদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় যাত্রীবাহী একটি বাসে তল্লাশীর সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গীরা। সেখানে আটক জঙ্গীরা থাকত মীরসরাইয়ের ওই আস্তানায়।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ মার্চ সীতাকুন্ড পৌর এলাকার প্রেমতলা চৌধুরীপাড়ার ‘ছায়ানীড়’ নামের একটি দোতলা ভবনে সন্ধান মেলে আরেকটি জঙ্গী আস্তানার। র্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এবং সোয়াত সদস্যরা বাড়িটিতে অভিযান চালান। কিন্তু জঙ্গীরা নিজেরাই একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ২ জঙ্গির মৃতদেহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।