মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) উল্লেখ ছাড়া চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে কোনো আলোচনা সম্পূর্ণ হয় না। প্রথম থেকেই সিপিইসির প্রভাব এমনই। এটি চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আর্থিকভাবে জোরদার করেছে। চীন যদিও আরো বহু দেশের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন ও এশিয়া জুড়ে তার প্রভাব বিস্তার করেছে, কিন্ত এ সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়েছে। প্রথম ভালোবাসার মতোই প্রতিবেশি পাকিস্তানের সাথে চীনের সম্পর্ক বিশেষ ও টেকসই।
পাকিস্তানে সিপিইসিকে সাধারণভাবে ‘খেলা পরিবর্তনকারী ’(গেম চেঞ্জার) বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে, যদিও কিছু সমালোচক তার সাথে একমত নন। চীনের জন্য সিপিইসি হচ্ছে তারি বিশাল বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য (বিআরআই) ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। বেইজিং চায় পাকিস্তানে অঙ্গীভূত হয়ে অগ্রসর হতে যাতে অন্য প্রকল্পগুলো দেশসমূহ বিআরআই-র কল্যাণ ও স্থায়িত্বের ব্যাপারে আস্থা লাভ করতে পারে।
চীন ও পাকিস্তান উভয়েই সিপিইসি ও বিআরআইকে ধ্বংস করতে কতিপয় বিশেষ শক্তির চেষ্টা সম্পর্কে ক্রমেই বেশি করে আলোচনা করছে। এ দুটিই হচ্ছে দেং শিয়াও পেং-এর পর চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর উচ্চাভিলাষী বৈদেশিক নীতি প্রকল্প। দু’ দেশের নেতারাই পুনর্ব্যক্ত করছেন যে এ ধরনের চেষ্টাকে সফল হতে দেয়া হবে না।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনি প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া সম্প্রতি চীন সফর করেন। সে সময় বারবার সিপিইসির কথা উঠে আসে, কারণ তার নিরাপত্তা বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন যার নিরাপত্তা দিতে পারে নিরাপত্তা বাহিনী। শি জিনপিং-এর সাথেও তার বৈঠক হয়, তিনি বলেন যে, যারা বিআরআই ও সিপিইসির বিরোধিতা করছে তারা কখনোই সফল হবে না। তা এ কারণে যে শুধু চীন ও পাকিস্তানের শান্তি উন্নয়নের জন্যই শুধু এ উদ্যোগ নয়, বরং তা এ অঞ্চল ও এ অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোর শান্তি ও উন্নয়নের জন্যও। পাকিস্তানকে চীনের ‘আয়রন ব্রাদার’ বলে আখ্যায়িত করা চীনা প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন যে, পাকিস্তান সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধু ও কৌশলগত অংশীদার।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির সাথে বৈঠকে বেইজিং-এর সাথে ইসলামাবাদের সম্পর্ক বিনষ্টের ষড়যন্ত্র এবং সিপিইসির মত চীনা প্রকল্প সম্পর্কে সন্দেহ সম্প্রসারণ ও পাকিস্তানের জনগণের কল্যাণে দারিদ্র হ্রাসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এর আগে পাকিস্তান সফরকালে ওয়াং ই বলেছিলেন যে, সিপিইসি প্রকল্প পাকিস্তানের ঋণভার আরো ঘনীভ‚ত করছে, এটা ভুল ধারণা।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ও ভারতের সমর্থনে একটি সমন্বিত প্রচারণা চলমান যে, বিআরআই হচ্ছে বিশ্বে চীনা প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে একটি ভূকৌশলগত ধারণা। এক্ষেত্রে চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং বিআরআই প্রকল্পসমূহে চীনের বিনিয়োগকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলার পন্থা বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। উদাহরণ দেয়া হচ্ছে শ্রীলংকার যে, একটি ছোট দেশকে কীভাবে চীনের বড় ঋণের জালে জড়ানো হয়েছে। কয়েকটি আফ্রিকান দেশের কথাও তুলে ধরা হয়েছে যারা সমালোচকদের কথায় ঋণজালে আটকা পড়েছে। দেয়া হচ্ছে মালয়েশিয়ার উদাহরণ যেখানে সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ কিছু চীনা প্রকল্প বাতিল করেছেন এ যুক্তিতে যে, সেগুলো চীনা কোম্পানিগুলোর কল্যাণের জন্য, মালয়েশিয়ার জনগণের কল্যাণে নয়।
পাকিস্তানে সিপিইসি পশ্চিমা নজরদারিতে আসে ২৫ জুলাইর জাতীয় নির্বাচনের পর যাতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জবাবদিহিতা চালু এবং সাবেক পিএমএল-এন সরকার কর্তৃক গৃহীত কিছু প্রকল্প পর্যালোচনার অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা আবদুল রাজ্জাক দাউদ এক সাক্ষাতকারে কিছু কথা বলেন যা চীন ও বিআরআই-র সমালোচকদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। যদিও তিনি বলেন যে, তিনি সিপিইসি প্রকল্পগুলো নিয়ে তার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, কিন্তু আসল ঘটনা হল কিছু পাকিস্তানি চীনের ঋণ পরিশোধে পাকিস্তানের সামর্থ্য এবং বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকটি চীনা কোম্পানির সুবিধা ভোগের বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তখন থেকে পিটিআই নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এটি ব্যাখ্যা করার জন্য অতিরিক্ত সময় কাজ করছে যে, পাকিস্তান সিপিইসির ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে এবং তার সাফল্যজনক সমাপ্তির ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা বলছে যে, নয়া সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী, জনগণের জন্য কল্যাণকর ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকারী প্রকল্প সমূহের ব্যাপারে আগ্রহী। চীন বলেছে, পাকিস্তানের অবস্থান যৌক্তিক এবং সাধারণ জনগণের কল্যাণে ও তাদের দারিদ্র মুক্ত করতে প্রকল্প সমন্বয় করা যেতে পারে।
৫৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় সাপেক্ষ সিপিইসিতে ২২টির মত প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যার বেশির ভাগই জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে। একটি রিপোর্টে বলা হয়, ১৩টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে এবং বাকিগুলোর কাজ এগিয়ে চলেছে। এও বলা হয়েছে যে, প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময় মোতাবেক সম্পন্ন হচ্ছে।
চীন ও পাকিস্তান উভয়েই বলেছে যে, সিপিইসি এ অঞ্চলের জন্য এবং তা শুধু এ দু’দেশের জন্যই সীমিত নয়। তারা সিপিইসিতে যোগদানের জন্য অন্য দেশগুলোকেও আমন্ত্রণ জানাচ্ছে যদিও এখন পর্যন্ত কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যোগ দেয়নি। সর্বশেষ সউদী আরবকে সিপিইসিতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে এখনো দেশটি সাড়া দেয়নি। এর আগে রাশিয়াকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
খবরে বলা হয়েছিল, রাশিয়া সিপিইসিতে যোগ দিতে রাজি। কিন্তু রুশ সরকার তা নিশ্চিত করেনি। ইরানের সাথেও বন্ধুত্বমূলক আলোচনা হয়েছিল। তবে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হওয়ার প্রকৃত প্রমাণ নেই।
আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি প্রকল্প হিসেবে সিপিইসির জন্য সবচেয়ে ভালো হবে যদি তা আফগানিস্তানে সম্প্রসারিত করা যায় এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো যদি এতে যোগ দেয়। নিজেদের মধ্যকার বিরোধ মিটাতে ও সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তনের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে চীন। এর পুরষ্কার হিসেবে শান্তি ফিরে এলে এ অঞ্চলে বিশেষ করে আফগানিস্তানে অধিক বিনিয়োগ করতে আগ্রহী চীন। চীন দু’ দেশকে রেলপথে সংযুক্ত করতে চায়। যদি তা ঘটে তাহলে সিপিইসি এ অঞ্চলের জন্য প্রকৃত গেম চেঞ্জার হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।