পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় ইংরেজদের দাসত্ব গ্রহণ করতে হয় ১৭৫৭ সালে। ১৯০ বছর উপনিবেশিক যুগের অবসান ঘটে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ। অতপর বাংলাদেশের মানুষের পিন্ডির শৃংখলে বন্দিত্ব। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পৃথিবীর বুকে নতুন মানচিত্রের আবির্ভাব। জাতি হিসেবে আমরা লড়াকু এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। কিন্তু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের অভাবে আমরা কী পিন্ডির বদলে আবার দিল্লির শৃংখলে বন্দি হতে যাচ্ছি? সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো দাসত্বের রাজনীতির চর্চার প্রতিযোগিতায় নেমেছি? নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের মতো দেশ যখন হিন্দুত্ববাদী ভারতকে থোরাইকেয়ার করে এগিয়ে যাচ্ছে; কিউবার কথা বাদই দিচ্ছি; পরাশক্তি আমেরিকার পাশে মেক্সিকো যখন আত্মমর্যাদা নিয়েই টিকে রয়েছে, কানাডার সঙ্গে আমেরিকা নাফটা চুক্তি করতে বাধ্য হচ্ছে, এমনকি মালয়েশিয়ার পেটের ভিতরে থেকে সিংগাপুর গোটা বিশ্বে নিজেদের শ্রেষ্টত্ব জাহির করছে; তখন আমরা যেন দাসবৃত্তির মনোভাব নিয়ে দিল্লিমুখি রাজনীতির দিকে ঝুকে যাচ্ছি। আমাদের দেশের ডান-বাম-মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা রক্ষা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ভাবে দিল্লিতে ছোঁটাছুটি করছেন; সেটা পাকিস্তান আমলের পিন্ডি মুখী রাজনীতিকেও লজ্জা দেয়। আমাদের রাজনীতিকদের দিল্লিমুখি ‘চেতনা’র সুযোগ নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা বাংলাদেশে ‘দিল্লির শাসন প্রতিষ্ঠার’ ঐদ্ধত্য দেখাচ্ছেন।
দৈনিক ইনকিলাবে খবরটি গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হলেও দেশের অন্যান্য পত্রিকাগুলো তেমন গুরুত্ব দেয়নি। খবরের প্রথম লাইন ‘হিন্দুদের ওপর সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ‘পাগলামি’ বন্ধ না হলে বাংলাদেশে দিল্লির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে ঃ সুব্রামানিয়াম স্বামী’। বিজেপি নেতার এই ঐদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় চলছে তোলপাড়। হাটে-মাঠে-ঘাটে-অফিস-আদালতে তর্ক-বিতর্কের ঝড় বইছে। অথচ রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র নাগরিক, সুশীল, কবি-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতি সেবী সবাই নীরব! এই নীরবতার রহস্য কী?
ভারত ছাড়া বাংলাদেশ নিয়ে অন্য দেশের কেউ কিছু বললেই বা লিখলেই প্রতিবাদের ঝড় তোলা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ইসলামী সমাজ। বাম নেতারা মিছিল, মানববন্ধন করে তীব্র প্রতিবাদ জানান। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতির ব্যাক্তিত্বরা প্রতিবাদে পথে নামেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ রক্ষায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ লেখেন, সেমিনার সিম্পোজিয়াম করে প্রতিবাদ করেন। গলায় হারমোনিয়াম বাজিয়ে দেশের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী ও মানুষকে দেশপ্রেমের ছবক দেন। কিন্তু দিল্লির নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করে ‘বাংলাদেশে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা’র মতো ঐদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিলেও নীরব থাকেন। আগে সীমান্ত হত্যা, তিস্তা চুক্তি, পদ্মার পানি, ট্রানজিট, সমুদ্র বন্দর, টিপাইমুখে বাঁধ ইত্যাদি জাতীয় ইস্যু নিয়ে প্রতিবাদ হতো। এমনকি মানববন্ধন, সমাবেশ, বিক্ষোভ এমনকি শত শত মাইল লংমার্চ করে এসবের প্রতিবাদ জানানো হতো। এখন বন্ধুত্বের অজুহাতে চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সব স্বার্থ রক্ষা করলেও বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পাচ্ছে না। তারপর কেউ কোনো প্রতিবাদ ও শব্দ উচ্চারণ করে না। এটা কী দিল্লির প্রতি নতজানু মানসিকতার বহিপ্রকাশ!
বাংলাদেশ নিয়ে শুধু কী সুব্রামানিয়াম স্বামী ঐদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন! এর আগে ভারতের আসামের বিজেপি নেতা শিলাদিত্য দেব বলেছিলেন, ‘একাত্তরে স্বাধীনতার পরই বাংলাদেশকে ভারতের দখলে নেয়া উচিত ছিল’। ২০১৬ সালে ঢাকা সফরে এসে ভারতের ওই সময়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকার ’৭১ এর বিজয়কে ‘রামের লঙ্কা বিজয়’ এর সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন ‘লঙ্কা বিজয় করে রাম যেমন তা বিভীষণকে দেন; বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারত তাই করেছে’। ঢাকার নেতাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিজেপি নেতারা এভাবে ঐদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। অথচ দেশের দায়িত্বশীল নেতারা ‘নীরব’। এই নীরবতার রহস্য কী আগামী নির্বাচন? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে দিল্লী থেকে ছুঁটে এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং যা করেছেন; সে ধরণের প্রত্যাশা থেকে কী রাজনৈতিক দলগুলোর এই নীরবতা? দেশের ‘অতি দেশপ্রেমী’ যারা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে জীবন দেন; সেই সাংস্কৃতি সেবি, কবি-সাহিত্যিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, বুদ্ধিজীবী-সুশীলরা কেন বিজেপি নেতাদের হুমকি-ধমকি নীরবতা পালন করছেন? তারাও কী দিল্লির লাড্ডু হারানোর ভয়ে ভীত? নাকি দিল্লির হিন্দুত্ববাদী নেতারা ‘বাংলাদেশে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা’ স্বাভাবিক বক্তব্য মনে করছেন?
রাজনীতিকরা ক্ষমতায় যাবেন ভাল কথা; কিন্তু দেশই যদি না থাকে তাহলে ক্ষমতায় গিয়ে কী হবে? লেন্দুপ দর্জির অনুসারীরা কী ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে? পলাশির প্রান্তরে নবাব সিরাজ উদ দৌল্লার পরাজয়ের পর মীর জাফর ইংরেজদের হাত ধরে ‘মসনদে’ বসেছিল ঠিকই; কিন্তু তিনি কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছেন? ইতিহাস কী বলে? একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া’ এবং সংবিধানের দোহাই দিয়ে ‘নিয়ন্ত্রত নির্বাচন’ করার লক্ষ্যে জোট, মহাজোট, উপজোট, বৃহৎ জোট-ক্ষুদ্র জোট, ইসলামী জোট, জাতীয়তাবাদী জোট, বাম জোট, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জোট নামে জোট গঠনের হিড়িক পড়েছে। জোট গঠন করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন এবং সংবিধান রক্ষা করুন; কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব যদি না থাকে তাহলে সংবিধান ও ভোটের অধিকার রক্ষা করে কী হবে?
দেশের রাজনীতির দিকে তাকালে কী দেখি? চিত্রটা যেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল সময়ের মধ্যে চলে গেছে। ওই সময় ঢাকার নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের আদেশ-নির্দেশনা-পরামর্শ নিতে পিন্ডি-করাচি ছুটতেন; এখন ঢাকার নেতাদের দিল্লি ছুটছেন। নির্বাচন এলে এই ছোটাছুটির প্রতিযোগিতা শুরু হয়। নেতাদের এই দিল্লি দর্শন এবং ওই দেশের নেতা, থিঙ্ক ট্র্যাঙ্কদের সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগ পাওয়াকে ‘সৌভাগ্যজনক ও গৌরবের’ মনে করেন নেতারা। দিল্লির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের খবর বুক ফুলিয়ে প্রকাশ করেন। নেতাদের কথাবার্তা ও বডি লেঙ্গুয়েজে সাফল্যের চিহ্ন দেখা যায়। চলতি বছরের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ও ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করেন। অতপর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল দিল্লি যান। কয়েকদিন পর বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি দল দিল্লি যান। তারপর দিল্লি যান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। জাপার এইচ এম এরশাদও ঘরে বসে না থেকে দিল্লি যান। বড় দলগুলোর দেখাদেখি ছোট দল তথা ১৪ দলীয় জোটের শরীক নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ২০ দলীয় জোটের শরীক এলডিপির সভাপতি ড. কর্ণেল (অব) অলি আহমদ, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমিন ফয়সাল ছুটে যান দিল্লি। দিল্লি কী বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র? তা না হলে কেন এতো দিল্লি ছুটাছুটি আবার দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করে বক্তব্য দেয়ার পর সবাই নীরব? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল লিখেছেন, ‘বিজেপির বর্বরগুলো একটার পর একটা উস্কানিমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে। তাদের একজন এমপি এমনকি বাংলাদেশ দখল করে নেয়ার বক্তব্য দিয়েছে। আমাদের সরকারের কারো সাহস না, ব্যক্তিত্বও না এসব ঔদ্ধত্বের প্রতিবাদ করার। কিন্তু অন্যরা কোথায়? কোথায় বিএনপি, বাম আর ইসলামীরা? কোথায় প্রগতিশীল বা দেশপ্রেমিকরা?’ আসিফ নজরুলের এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।