Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পঙ্গু হচ্ছে হাজারো মানুষ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনা হতাহতদের পরিবার পায় না ক্ষতিপূরণ

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর পঙ্গু হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। গত ৮ মাসে কুমিল্লায় একাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে স্কুল শিক্ষকসহ অত্যন্ত ৩৬ জন। অদক্ষ চালকের বেপরোয়া চালনায় প্রতিদিনই পঙ্গুত্ব বরণ এবং মৃত্যু হচ্ছে অনেকে। প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মানুষের নাম। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আহতের সংখ্যা। আহতদের বেশিরভাগকেই বরণ করতে হয় আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব। স্বাভাবিক কর্মক্ষম অবস্থায় তারা আর কখনো ফিরতে পারেন না। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিরূপণ করা গেলেও যারা দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব হয়ে যান, তাদের হিসাব কেউ রাখে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন এত দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্বের হার কমাতে সড়ক ব্যবস্থায় উন্নতির দাবি যাত্রী ও জনসাধারণের।
জানা গেছে, কুমিল্লার হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজের মেধাবী ছাত্র ইমদাদুল হক। গত ১৯ জুন একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় ইমদাদুল হকের বাম হাতটি ভেঙে যাওয়ায় হাতটি দিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না ইমদাদুল। গত ৩১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার গোমতা নামক স্থানে মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে একটি বাসের সঙ্গে মালবাহী ট্রাক পাল্লা দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মহাসড়কেই প্রাণ হারান আকলিমা নামের এক স্কুল ছাত্রী। দুর্ঘটনায় আহত অপর শিক্ষার্থী তামান্নার চিকিৎসা হয় স্থানীয় হাসপাতালে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীর বিচারের আশ্বাস দেত্তয়া হয়। অথচ ঘটনার ২ মাস পেরোলেও আজ পর্যন্ত বিচার তো দূরের কথা গাড়ী চলাককে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ পুলিশ ।
শুধু ইমদাদুল নয় তার মতো তামান্নাসহ আরো অনেকই হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। এরা সবাই সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার। অদক্ষ চালকের বেপোরোয়া গাড়ী চালানো, স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালীপনা, জনসচেতনতার অভাব এবং সর্বোপরি দায়ী চালকের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অহরহ ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই যন্ত্রদানবের হত্যার শিকার হয়ে দেশের বহু জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিজীবী, নিস্পাপ শিশু থেকে বৃদ্ধ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী প্রাণ হারাচ্ছেন। চিরদিনের মত পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককেই।
কুমিল্লার বেসরকারী ট্রমা হসপিটালের ডাক্তার আব্দুল হক জানান, পঙ্গুত্ব ও চিকিৎসা ব্যয়ের চাপে সাধারণ মানুষের আর্থিক ক্ষতি আরো বেড়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত-পা ভাঙা, স্পাইন ভাঙা রোগী পঙ্গু হাসপাতালে বেশি আসে। তবে আগের তুলনায় ইদানিং সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশে এখনো কৃত্রিম হাত-পা সংযোজনের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না। আর কৃত্রিম হাত-পা লাগালেও অনেকে তা ঠিকমতো মেইনটেইন করতে পারে না।
সচেতন মহল মনে করছেন, দুর্ঘটনার জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং পুলিশ অনেকাংশে দায়। রাজধানীর একমাত্র জাতীয় অর্থপৈডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে প্রতিনিয়ত রোগীদের বেশিরভাগই সড়ক দুর্ঘটনায় স্বীকার ব্যক্তিরা ভর্তি হচ্ছেন।
এদিকে মহাসড়কে এসব দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে বমরমা বাণিজ্য করছে পুলিশ। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে রয়েছে কুমিল্লার চান্দিনা, দাউদকান্দি ও সদর দক্ষিণ থানা। এছাড়া রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি থানা, ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ি ও ময়নামতি থানা। গত ৮ মাসে কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন ঘাতক বাস, ট্রাক ও পিকআপ আটক করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের জিম্মায় দেয়। এরপর আর আটক যানবাহন সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন খোঁজ-খবর নেয় না। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন থানা ও হাইওয়ে পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে এমন অভিযোগ অনেক পুরনো। দুর্ঘটনার শিকার পঙ্গু মানুষ কিংবা নিহতের পরিবার কোন ক্ষতিপূরণ না পেলেও পুলিশের বাণিজ্য চলছে রমরমা।
পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার পরপর একটি গাড়ি থানা থেকে মুক্ত করার জন্য ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পুলিশকে দিতে হয়। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ম্যানেজ করতে পারলে পুলিশকে ৫ হাজার টাকা দিলেই চলে। দুর্ঘটনার পর থানা পুলিশের সাথে সমঝোতার জন্য দায়িত্ব নেন স্ব-স্ব এলাকার পরিবহন মালিক কিংবা শ্রমিকদের সংগঠন। সে অনুযায়ী সহজেই ছাড়া পেয়ে যায় ঘাতক বাস-ট্রাক। বছরের পর বছর এ ধারা অব্যাহত থাকলেও নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ফলে দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। আর নগদ নারায়ণে তুষ্ট হয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছে হাইওয়ে পুলিশ।
তবে এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, দুর্ঘটনার পর গাড়ির মালিক বা ড্রাইভার এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে কেউ আসে না বলে পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে আমরা কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পঙ্গু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ