পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের তিন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সব তথ্য পাওয়া গেছে। রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, সিসিটিভি বন্ধ করে নানা অপর্কম, সিন্ডিকেট করে এক্সরে, সিটিস্ক্যান, এমআরআই নিয়ন্ত্রণ; এমনকি হাসপাতালে এ্যাস্বুলেন্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো এই তিনজন। হাসপাতাল প্রশাসন একাধিকবার সতর্ক করলেও সেদিকে কর্ণপাত না করে উল্টো তাদেরই হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যেত। দৈনিক ইনকিলাবে গত ২৬ জুলাই ‘পঙ্গু হাসপাতালে রেডিওলজি পরীক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়, তিন টেকনোলজিস্টের সিন্ডিকেট’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটি এসব অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে এই তিন টেকনোলজিস্টকে শাস্তিমূলক বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
জানা গেছে, রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের তিন জন টেকনোলজিস্টের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পায় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। তারপর হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ডা. তড়িৎ কুমার সাহাকে সভাপতি করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পায়। যার প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের শাস্তিমূলক বদলী করা হয়। সেখানে বলা হয়, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পূর্ণবাসন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) মো. হুমায়ুন কবির, মো. হেলালুল মোজাদ্দেদ ও মো আব্দুল বারেককে যথাক্রমে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় ন্যাস্ত করা হলো। আগামী ৫ দিনের মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করলে ৬ দিন থেকে তিনি সরাসরি অব্যহতি পেয়েছে বলে গণ্য হবে।
কিন্তু যোগদানের তারিখ শেষ হওয়ার আগেই সিন্ডিকেটের এই তিন সদস্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুানাল থেকে বদলীর ওপর স্থগিতাদেশ আনে। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থাগিতাদেশ পাওয়ার পর তারা যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. গনি মোল্লা বলেন, সার্বিক সহযোগীতা ছাড়া এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এই তিন জন দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্ম করে আসছে। তদন্তে সেগুলোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাদের বদলী করা হলো। কিন্তু প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল থেকে এই অপরাধীরা স্থগিতাদেশ পেয়েছে। এখন তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির সদস্য এবং হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাকসুদা বেগম ও প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. শহিদুল ইসলাম তাদের মতাতম প্রদান করেন। যেখানে এই তিন টেকনোলজিস্টের ভয়ঙ্কর চরিত্র উšে§াচিত হয়। সেখানে তারা বলেন, গত ১০ বছরে হুমায়ুন কবির সম্পর্কে রোগীদের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ এসেছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকায় কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এক্সরে করার বিনিময়ে সরকারি ফি’র বাইরে রোগী প্রতি অতিরিক্ত ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায় এবং রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা ইত্যাদি। নানা অভিযোগের পরও হুমায়ুন কবির সিটিস্ক্যান করার দাবি জানালে তাকে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে বিনা রশীদে রোগীদের সিটি স্ক্যান শুরু করে। এই অপরাধে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে হুমায়ুনের দুর্নীতি প্রমানের জন্য হাসপাতাল পরিচালকের মৌখিক নির্দেশে ইমার্জেন্সি এক্সরে রুমে দুটি অনলাইন সিসিটিভি স্থাপন করা হয়। কিন্তু এতে হুমায়ন ক্ষুব্ধ হয় ও চিকিৎসকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে এবং রাতের বেলা সিসিটিভি বন্ধ করে রাখে। এমনকি বিভাগীয় প্রধানের নির্দেশ অমান্য করে বহিরাগতদের দিয়ে হাসপাতালে ডিউটি করাতে থাকে। যারা রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তাদেরেকে সাহায্য করে। এছাড়া সে বিভাগীয় প্রধানের কোন নির্দেশ মানতো না, ঠিকমতো ডিউটি রোস্টার না করে নিজের মর্জিমাফিক কাজ করতো। কোন অনিয়মে বাধা দিলেই অশালীন কটুক্তি করতো এমনকি নানা হুমকি দিত। ডিউটিতে থাকাবস্থায় হাসপাতালে থেকেই নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা পরিচালনা করতো। এমনকি মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালে চলাফেরা করতো এবং সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতো বলে একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন।
হেলালুল মোজাদ্দেদ সম্পর্কে তদন্ত কমিটি বলেন, হেলাল জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিল। সেখানে এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআই বন্ধ থাকায় এবং হুমায়ুন কবীরের আত্মীয় হওয়ায় নিটোরে নবসৃষ্ট পদে বদলি হয়ে আসে। সিটিস্ক্যান, এমআরআই রোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতো না। সিটি স্ক্যান ও এমআরআই রোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতো। এসব অনৈতিক কাজে হাসপাতালের বাইরের লোক ব্যবহার করাতো। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়াই তাদের কথোপকথন রেকর্ড করে বøাকমেইল করতো। বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্তের ছবি তুলে হাসপাতালে বাইরের লোকজনের কাছে পাচার করতো। এমনকি কর্মকর্তাদের অজ্ঞাতে অনুমতি ছাড়াই তাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতো।
অভিযোগের বিষয়ে হেলালুল মোজাদ্দেদ ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত রিপোর্ট আমরা এখনো হাতে পাইনি। তাই রিপোর্টে কি আছে বলতে পারছিনা। বদলীর বিষয়ে বলেন, আইনের আশ্রয় নিয়ে টিকে আছি।
আব্দুল বারেক সর্ম্পকে তদন্ত কমিটির বক্তব্য, বারেক এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান করে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিত, এটা সে নিজেই বহুবার স্বীকার করেছে। এক্ষেত্রে সে এতোটাই বেপরোয়া ছিল, কারো নির্দেশনাই মানতো না। এমনকি করোনা নির্ধারিত হাসপাতালে তাকে প্রেষণে পাঠনো হলেও কোয়ারেন্টিন সময়ে অধিপাত্য বজায় রাখতে এই বিভাগে আসতো।
তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া তথ্যে দেখা যায়, মো. হুমায়ুন কবির পঙ্গু হাসপাতালে যোগদান করেছে ২০০৮ সালে, আব্দুল বারেক ২০০৩ সালে এবং মো. হেলালুল মোজাদ্দেদ যোগদান করেছে চলতি বছরের শুরু দিকে। এই তিনজনই দাবি করেছে তারা এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান করে না, তাই রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার প্রশ্ন আসে না। এমনকি তারা এক্সরে করেও রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয় না বলে জানিয়েছে। তবে তারা হাসপাতালে বাইরের লোক দিয়ে কাজ করোনার কথা স্বীকার করেছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম বলেন, তদন্তে তিনজন টেকনোলজিস্টের অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অধিদফতর থেকে তাদের বদলী করা হয়েছে। কিন্তু তারা বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল থেকে স্থগিতাদেশ এনেছে। যেটা আমি হাতে পেয়েছি। তিনি বলেন, এ ধরনের স্থগিতাদেশ বলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এমনকি এতে প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হয়। হাসান ইমাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, প্রিন্সিপাল, প্রফেসর, সহকারি ও সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত অর্ধশত চিকিৎসককে বদলী করা হয়েছে। তারা সবাই বদলীকতৃ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিদের কোন নির্দেশ দিলেই তারা আদেশ অমান্য করে। এতেকরে স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ বিনষ্ট হয়।
এ প্রসঙ্গে করণীয় জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, মূলত তদন্ত এবং শাস্তি প্রদানের বিষয়টি ত্রুটিপূর্ণ থাকে। তাই অপরাধ করেও তারা পার পেয়ে যায়। অতিরিক্ত টাকা আদায়, হুমকি প্রদান ইত্যাদি ফৌজদারী অপরাধ। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করলে তারা আটকা পড়ে যাবে। এছাড়া প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের আাদেশের বিরুদ্ধে আইনজীবী নিয়োগ করে খারিজা চাইতে পারে কর্তৃপক্ষ। এমনকি এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে যেতে পারে তারা।
উল্লেখ্য, এভাবেই জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বিক্রয় ও সংগ্রহ কর্মকর্তা মনির উজ্জামান চৌধুরীকে নানা অনিয়ম ও দুনীর্তির কারণে প্রশসানিক শাস্তি হিসেবে ২০১৭ সালের ১৯ জুন জনস্বার্থে বদলী করা হয় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বদলী প্রজ্ঞাপন জারীর ৩ কর্মদিবসের মধ্যে ন্যাস্তকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বদলীর আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে যোগদান না করে ২০১৭ সালের ২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের আদেশ বাতিল চেয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১ ঢাকায় এ টি মামলা (২৩৯/২০১৭) করে। পরে ওই বছরের ৯ আগস্ট আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বদলীর আদেশ স্ট্রে করে। আর এই স্ট্রে আদেশ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। এর আগেও দুর্নীতির দায়ে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি মামলা করে আরও একটি বদলীর আদেশ ঠেকিয়ে দীর্ঘদিন একই পদে থেকে সিন্ডিকেট বাণিজ্য গড়ে তুলেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতরে বদলীর আদেশ স্ট্রে করে অনেকেই এভাবে অনিয়মের স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।