‘কোনো অনুমতি ছাড়াই আমার স্ত্রীকে অপারেশন করে সন্তান বের করেন চিকিৎসকরা। আমি রক্ত নিয়ে এসে দেখি শিশুটির গলা কাটা, আর আমার স্ত্রীর নিথর দেহ হাসপাতালের বিছানায়।’
শনিবার সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নিউ পপুলার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মা ও শিশুর মৃত্যুর পর তার স্বামী আলমগীর হোসেন এ অভিযোগ করে এসব কথা বলেন।
নিহত শিল্পি বেগম (৩২) ফতুল্লার পূর্ব দেলপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এদিকে এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ জনতা হাসপাতালে ভাংচুর চালিয়েছে। বিক্ষুদ্ধদের শান্ত রাখতে পুলিশ হাসপাতালের মালিক, চিকিৎসক ও নার্সসহ চারজনকে আটক করেছে।
আটককৃতরা হলেন- হাসপাতালের মালিক ডা. মজিবুর রহমান, মাসুম আহমেদ, আহম্মদ আলী খান, কামরুন্নাহার, মেডিকেল অফিসার ডা. জামিল আহমেদ ও নার্স সুরমা বেগম।
স্বামী আলমগীর হোসেন বলেন, স্ত্রী শিল্পি বেগম ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তাকে পাগলা বাজার এলাকায় অবস্থিত নিউ পপুলার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক জেসিকা রিজভী তামান্না পরীক্ষা করে বলেন, গর্ভের বাচ্চা নরমাল আছে তবে পানি ভাঙ্গছে। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হবে।
এতে শিল্পিকে বৃহস্পতিবার বিকালে হাসপাতালে ভর্তি করি। শুক্রবার দুপুর থেকেই হাসপাতালের লোকজন বলছে অপারেশন করতে হবে। তখন আমি জানতে চাই গর্ভের সন্তান নরমাল থাকলে অপারেশন কেনো? তারা বলেন, দ্রুত রক্ত নিয়ে আসেন। এতে আমি রক্ত আনতে যাই।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে কোনো অনুমতি ছাড়াই অপারেশন করে সন্তান বের করেন তারা। এসময় সন্তানসহ আমার স্ত্রী মারা যায়। আমি রক্ত নিয়ে এসে দেখি শিশুটির গলা কাটা আর আমার স্ত্রীর নিথর দেহ বিছানায় পড়ে আছে।
নার্স ও ডাক্তাররা বলছেন, আপনার স্ত্রীকে ঢাকা মেডিকেলে নিতে হবে। তখন তারাই অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দেন। এতে আমার সন্দেহ হয়। এরপর তাদের লোকজনই জানান স্ত্রী মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই।
হাসপাতাল মালিক কামরুন্নাহার জানান, যখন পেটের পানি ভাঙ্গা শুরু হয়েছে তখনই বলেছি রোগীকে অপারেশন করতে হবে রক্ত সংগ্রহ করেন। কিন্তু রোগীর স্বামী তা যথা সময় করেননি। রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হলে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় তাকে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের সময় রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরমধ্যেই অপারেশন করে ৫ মাসের শিশুটি মৃত অবস্থায় বের করা হয়। রোগীর অবস্থা গুরুতর মনে হলে তাকে শুক্রবার রাত ১টায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠাই। আমাদের চিকিৎসায় কোনো ভুল ছিল না।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এসআই দিদারুল আলম জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। হাসপাতাল কিছুটা ভাংচুর করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।