Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হৃদরোগে বছরে পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে

আজ বিশ্ব হার্ট দিবস

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বিশ্বে প্রতি বছর ১৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে হৃদরোগে। ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের প্রতি ১০ জনে একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়। আতঙ্কের বিষয় হলো পৃথিবীর মোট মৃত্যুর ৩১ ভাগের জন্য দায়ী হৃদরোগ এবং অল্প বয়সে মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কারণও এ হৃদরোগ। এ তথ্য ওয়ার্লড হার্ট ফেডারেশনের।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘My Heart, Your Heart’ যার বাংলা করা হয়েছে ‘আমার হার্ট, তোমার হাট’। এ প্রতিপাদ্যের অন্তর্নিহিত বিষয় হল সকল সমমনা মানুষকে একিভূত করা ও হার্টের সুস্থতা বিষয়ে একতাবদ্ধ হওয়া। বিশ্বব্যাপি হৃদরোগ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন যৌথভাবে বিশ্ব হার্ট দিবস পালনে সম্মত হয়। এই হার্ট দিবস সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারনা দেন ১৯৯৭-৯৯ সেশনে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যান্থনি বেইস ডি লুনা। প্রথম হার্ট দিবসটি পালন করা হয় ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবারটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তিতে ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ২০১৭’র হেলথ বুলেটিরে তথ্য মতে, ২০১৬ সালে শুধুমাত্র জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বর্হিবিভাগে দুই লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ জন রোগী সেবা গ্রহণ করে। ওই বছর একই হাসপাতালে ৬৪ হাজার ৯০৬ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ওই বছর হৃদরোগ হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি হয় ৯৯৫ জনের এবং ভাসকুলার সার্জারি হয় আরও এক হাজার ৮২৪ জনের। বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে আমাদের দেশের লোকের ১০ বছর আগেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। এখন ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী, এমনকি ২৫-৩০ বছর বয়সীরাও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ হলো- স্বাস্থ্য সম্মত খাবার না খাওয়া, ধুমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম না করা ও অ্যালকোহল পান করা।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে অসংক্রামক ব্যাধি জনিত মৃত্যুর হার হ্রাস করা এবং অল্প বয়সে হৃদরোগ জনিত কারণে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদপিন্ড হচ্ছে মানুষের শরীরের একমাত্র অঙ্গ, যেটা আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে বাঁচিয়ে রাখে। কেননা মানুষের মস্তিষ্কের মৃত্যু হলেও আমরা তাকে জীবিত বলতে পারি যতক্ষণ পর্যন্ত হৃদপিন্ডের কার্য ক্ষমতা সচল থাকবে। বর্তমানে মানুষে মৃত্যুর যত কারণ আছে, হৃদপিন্ড ও রক্তনালি জনিত রোগের কারণে মৃত্যু হলো সবচেয়ে বেশি। হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল এনজাইনা, শ্বাস কষ্ট হওয়া, অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন হওয়া ইত্যাদি। এনজাইনা হচ্ছে, রোগীর সাধারণত বুকে ব্যথা, বুকে চাপ অনুভব করা, বুক ভার ভার হওয়া, দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হওয়া ইত্যাদি
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু বলেন, কারো করোনারি আর্টারী বা হার্টের রক্তনালির ৭০ শতাংশ ব্লক হয়ে গেলে তখনই এনজাইনা হয়ে থাকে। কখনো কখনো এনজাইনা থেকে হার্ট অ্যাটাক হয়। আবার করোনারি ধমনি যখন ১০০ শতাংশ ব্লক হয়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ফলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা, যেখানে জীবন ও মৃত্যু খুব কাছাকাছি চলে আসে। এটি সাধারণত বয়স্কদের রোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের এটি হয়ে থাকে। আমাদের এদেশে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের এটি হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ছাড়া এ অঞ্চলে দূর্বল হার্ট বা কার্ডিওমায়োপ্যাথী একটি পরিচিত হৃদরোগ যেখানে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যায়। বাতজ্বর জনিত হৃদরোগ বাংলাদেশের আরেকটি বড় সমস্যা। সাধারণত ছোট বেলায় বাতজ্বর থেকে পরবর্তীতে বাতজ্বর জনিত হৃদরোগ হয়ে থাকে। বাতজ্বর জনিত রোগে সাধারণত হার্টের ভাল্ব ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এর মধ্যে কিছু রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। আর কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে শৈল চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান ইনকিলাবকে বলেন, যদি কারো পরিবারে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শিশুর জন্মগত হৃদরোগ থাকে সেক্ষেত্রে ঝুঁকি কমানোর জন্য চিকিৎসকদের তেমন কিছুই করার থাকে না। তবে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন- স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের জাঙ্ক ফুড খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। হৃদরোগ প্রতিরোধে কায়িক পরিশ্রম করা, হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান না করা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হার্ট দিবস

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ