Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পারাপারে লাল পতাকা

নেই গতি নিয়ন্ত্রক বা জেব্রা ক্রসিং ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ২:৩৮ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

গতি নিয়ন্ত্রক কিংবা জেব্রা ক্রসিং না থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ব্যস্ততম এই মহাসড়ক পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের যাওয়া নিয়ে অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন থাকলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নির্বিকার। মহসড়কের কুমিল্লায় গত ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন দুই শতাধিকের বেশি ছাত্রছাত্রী। মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী কুটুম্বপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. আলমগীর হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তাদের বিদ্যালয়ের সামনে গতি নিয়ন্ত্রক বা জেব্রা ক্রসিং না থাকায় দ্রুতগামী গাড়িগুলোর ড্রাইভারা গতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ভ‚মিকাই রাখছে না। বরং জেব্রা ক্রসিং না থাকায় দ্রুত ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী দোতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আব্দুল ছাত্তার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠারটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসতে কিংবা যেতে সমস্যা হয়। মহাসড়কে জেব্র ক্রসিং দেওয়া হলে সড়ক দুর্র্ঘটনা অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
আকলিমা (১৬)। সে গোমতা ইসহাকিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। চান্দিনার গোমতা নামক স্থানে গত ৩১ মে স্কুলে শেষে বাড়ি ফিরার পথে দ্রুতগ্রামী একটি ট্টাক চাপ দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। এ সময় তার সাথে থাকা সহপাঠি তামান্না ও মেহেদী হাসানও গুরুত্বর আহত হয়। আমনো আক্তার (১৭)। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গত ৭ এপ্রিল মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসাপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। এছাড়াও শহীদনগর নামক স্থানে গৌরীপুর সুবল আলতাব উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র আলিফ মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মারা যায়।
আকলিমা কিংবা আমেনা বা আলিফই নন, মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বীকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থীই মারা যায়। কেরনখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শাহানা সুলতানা বলেন, আমরা প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পর পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপার করতে লাল পতাকা দেখিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পারাপারে সাহায্য করি। ব্যস্ততম এলাকা হওয়ায় প্রায়ই নুরীতলা বাজারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। গতি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কিংবা জেব্রা ক্রসিং দেওয়া যদি কোনো কারণে সম্ভব না হয় তবে সরকার স্কুল-কলেজের সামনে ওভারব্রিজ নির্মাণ করুক-এমনটাই আমরা চাই।
মাধাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান রেজবী বলেন, কোথায় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা থাকে সে স্থানে সড়ক জনপদের পক্ষে ছবিসহ সাইনবোর্ড দেত্তয়া থাকে। অথচ বাস চালক বা ছোট বড় যে কোন পরিবহন তা মানছে না। এছাড়া গাড়ির শব্দ ও হর্নের কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়াও দ্রুতগতির কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনাগুলোর বলি হচ্ছে একের পর এক তাজা প্রাণ। মোটরযান আইনের আওতায় কিছু সাঙ্কেতিক চিহৃ মহসড়কে দেখা গেলেও এসব সঙ্কেতের কোনো অর্থ বোঝে না সড়ক ব্যবহারকারী চালকরা।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইন লঙ্ঘনকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না বলেও দাবি করেছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্ট ছোট-বড় দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া গেছে অনেক কারণ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সহকারী দিয়ে যানবাহন চালানো, দুটি যানবাহনের মধ্যবর্তী দূরত্ব বিপদসীমার মধ্যে, অপরিপক্ক চালক, চালকের বেপরোয়া গতি, অভিযুক্ত চালকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান না থাকা, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, যত্রতত্র ওভারটেক, পথচারী পারাপারে অব্যবস্থাপনা, সড়ক দিয়ে গবাদি পশু পারাপার, লক্কড়-ঝক্কর যানবাহন চলাচল, খানাখন্দ সড়ক, অনুমোদনহীন যানবাহন, নিষিদ্ধ যানবাহন অবাধে চলাচল, মহাসড়কে রিকশা-ঠেলাগাড়ি চলাচল, সড়ক ঘিরে স্থায়ী-অস্থায়ী বাজার গড়ে ওঠা।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ জীবন হাজারী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দুর্ঘটনা রোধে ইতিমধ্যে হাইত্তয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের উদ্যোগে পরিবহন সেক্টরের প্রায় ৭০ জন চালক ও হেলপাদের কে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের প্রশিক্ষণ চালকদের নিয়মিত দিতে পারলে আগামীতে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে দেশের বিশিষ্টজনরা মনে করছেন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশের বিদ্যমান আইনগুলো মেনে চলার জন্য চালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। বর্তমানে দেশের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যানবাহন ব্যবহার করাই যেন বর্তমানে সুস্থ-সবল যাত্রীদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ