পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
তিরমিজী শরীফে ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রসূলুল্লাহ (সা.) এই ভাবে দোয়া করেছিলেন, ‘আল্লাহুম্মা আয়িজ্জিল ইসলামা বি আহাব্বি হাজাইনির রাজুলাইনি ইলাইকা, বি উমারিবনিল খাত্তাবি আও বি আবি জাহলিবনি হিশামিন’ অর্থাৎ- ‘হে আল্লাহ! তুমি দুই ব্যক্তির মধ্যে যে তোমার নিকট অধিক প্রিয় তার দ্বারা ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি কর, একজন উমর ইবনুল খাত্তাব অন্য জন আবু জাহল ইবনে হিশাম।’ অপর এক বর্ণনায় ইবনে খাত্তাবের নাম বিশেষভাবে বলা হয়েছে। (তারিখুল খোলাফা)
রসূলুল্লাহ (সা.) এর এ দোয়া কবুল হয়েছিল উমর ইবনে খাত্তাবের ক্ষেত্রে। শুরু থেকে রসূলুল্লাহ (সা.) এর চরম শত্রু আবু জাহল ইবনে হিশাম শত্রুই থেকে যায় এবং জাহান্নামী হিসেবেই মৃত্যু বরণ করে। পক্ষান্তরে উমর মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন এবং তার জীবন হয় ধন্য। তারই বদওলতে ইসলামের সর্বক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি অগ্রগতি সাধিত হয়। তাঁর দশ বছরেরও কিছু বেশি সময়কালের শাসন আমলে আল্লাহতাআলা তার মাধ্যমে দুনিয়াময় ইসলামের মান-মর্যাদা অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি করে দেন এবং ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়। তাই তাঁর সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.) এর দোয়া ছিল একটি মোজেযা (অলৌকিক ঘটনা) স্বরূপ।
এখানে আমরা তাঁর জীবনচরিত আলোচনা করবো না, তাঁর সুনাম, সুশাসন ও ন্যায়নিষ্ঠা এবং অপ্রতিদ্বদ্বী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত ও ঈর্ষাকাতর শত্রু তাকে হত্যা করার যে ষড়যন্ত্রে করেছিলেন এখানে তাই তুলে ধরবো। ইসলাম বিদ্বেষীরা মদিনায় বসে খলিফার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করেছিল তাই এখানে প্রতিপাদ্য।
ফারুকী খেলাফত আমলে পার্সিক ও আরব খ্রিস্টানরা অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। এ শান্তির ধর্মের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলেও তাদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিল যারা পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি এবং ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ তাদের মধ্যে বিরাজ করছিল। নিম্ন বর্ণিত কিছু ঐতিহাসিক তথ্য-বিবরণী তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে।
আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন যে, খলিফা উমর (রা.) এর ওপর আবু লুলু কর্তৃক হামলা চালানোর আগের রাতের ঘটনা। তিনি একটি স্থানে তিন ব্যক্তিকে গোপনে সলাহ পরামর্শ করতে দেখেন। তাদের নাম হরমুজান, খ্রিস্টান জুফাইনা এবং ফিরূজ আবু লুলু। তারা আবদুর রহমানকে দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাদের একজনের হাত হতে একটি খঞ্জর ছুটে ভ‚মিতে পড়ে যায়। এটি ছিল দুই ধারী খঞ্জর। তিনি বললেন, এটি ছিল অবিকল সেই খঞ্জর যা দ্বারা আবু লুলু আমিরুল মোমেনীনের ওপর হামলা চালিয়েছিল।
গোপন সমাবেশের এই তিন ব্যক্তির যে পরিচয় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আবদুর রহমান (রা.) তুলে ধরেছেন তার পূর্ব কথা ও জেনে রাখা দরকার, যা নিম্নরূপ.
১. হরমুজান: ইরানী সেনাপতিদের মধ্যে হরমুজান ছিলেন অন্যতম হজরত সাদ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) তাকে পরাজিত করেন। পরাজিত হবার পূর্বে হরমুজান ইরানী ও ইরাকী ভ‚স্বামী ও কৃষকদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে থাকেন। তিনি যখন নিশ্চিত রূপে বুঝতে পারেন, ইসলাম গ্রহণ ব্যতীত তার প্রাণে রক্ষা পাওয়ার আর কোন উপায় নেই, তখনই ইসলাম গ্রহণ করেন। তার পূর্বে মুসলমানদের সাথে বারবার চুক্তি করেন যে, আগামীতে তাদের বিরুদ্ধে আর যুদ্ধ করবেন না। কিন্তু প্রতি বারই চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদের মোকাবিলায় অবতীর্ণ হতে থাকেন। অবশেষে তিনি ইসলাম গ্রহণ করনে। মুসলমানদের হাতে বিশাল সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায় এবং সেখানে মুসলমানেরা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেন। আর এটিই ছিল হরমুজানের জন্য মুসলিম বিদ্বেষী হওয়ার প্রধান কারণ।
২. গোপন পরামর্শকারী তিনজনের দ্বিতীয় জন ছিলেন জাফনিয়া (বা জাফিনা) নামক নাজরানের একজন খ্রিস্টান। হজরত সাদ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) তাকে এই উদ্দেশ্যে মদিনায় নিয়ে আসেন যে, তিনি লোকদেরকে লেখাপড়া শেখাবেন। উল্লেখ্য, যে সময় হজরত উমর (রা.) ইরানী ও রোমকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন, তখন নাজরানের খ্রিস্টানদের আরব ভ‚খন্ড হতে বের করে দেন এবং সিরিয়া ও ইরাকে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করে দেন। কেননা তার আশঙ্কা ছিল যে, এরূপ নাজুক পরিস্থিতিতে এসব খ্রিস্টান অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে পারে। এ ঘটনার পর মুসলমানগণ হিরাক্লিয়াস বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেছিলেন। হিরাক্লিয়াস খ্রিস্টান ছিলেন। এ কারণে ধারণা করা হয় যে, জাফনিয়াও তার অন্তরে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ পোষণ করতেন এবং অবাক হবার কিছু নেই যে, তিনি হরমুজানকে তার মিত্র হিসেবে পেয়ে খলিফাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে অংশ গ্রহণ করেন।
৩. আবু লুলু ফিরূজ ছিল ইরানী মজুসী (অগ্নিপূজক)। সে ছিল হজরত মুগীরা ইবনে শোবা (রা.) এর কৃতদাস। খলিফার উপর হামলা করে পালানোর সময় সে কয়েকজনকে আহত করে এবং তার বেপরোয়া তরবারি চালানোর ফলে একজন মুসলমান শহীদ হন, যার নাম হজরত কোলাইব ইবনে আবি বুকাইর (রা.) (এ সম্পর্কে পরে আরও বর্ণনা রয়েছে) এবং সে ধরা পড়ার সাথে সাথে আত্মহত্যা করে।
বিশিষ্ট আরব ঐতিহাসিক উমর আবু নসর উক্ত ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ফাঁস করে দেয়ার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পরিবেশন করেছেন। ‘খোলাফায়ে মোহাম্মদ’ নামক (অনুবাদ) সংস্করণে খলিফা হজরত উমর (রা.) এর শাহাদাতের মাত্র তিন পূর্বে ‘কাবুল আহবার’ নামক এক ইহুদী ‘নও মুসলিম’ খলিফার সাথে সাক্ষাৎ করে খলিফাকে তার ওফাতের আগাম বার্তা দেওয়ার বিস্ময়কর ঘটনা আলোচ্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
প্রাসঙ্গিকভাবে কাবের পরিচয়টাও জেনে রাখা দরকার। তার নাম আবু ইসহাক কাব ইবনে মাতে। তিনি কাবুল আহবার নামে ইতিহাস খ্যাত। হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে তাকে প্রাচীনতম বলা হয়। তিনি ছিলেন ইয়েমেনের ইহুদী। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি হজরত উমর (রা.) এর খেলাফত আমলে মদিনায় এসে বসবাস করতে থাকেন। অতঃপর সিরিয়া চলে যান। তিনি হজরত মোআবিয়া (রা.) এর উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি হেমছে হিজরী ৩২/৬৫২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। অর্থাৎ কাবুল আহবার ইয়েমেনের ইহুদী ছিলেন এবং ইসলাম গ্রহণের পর তিনি তাবেঈ এর মর্যাদা লাভ করেন। ফারূকী খেলাফত আমলে মদিনায় অবস্থান কালে তার সঙ্গে খলিফার যোগাযোগ ছিল।
‘খোলাফায়ে মোহাম্মদ’ এর লেখক খলিফা উমর (রা.) এর উপর আবু লুলু কর্তৃক হামলার ষড়যন্ত্রের বিবরণ দান করার পর কাবুল আহবার এর যে বর্ণনা প্রদান করেছেন তা নিম্নরূপ:
বর্ণিত তিন ব্যক্তি ছাড়াও আরও এক ব্যক্তিও ছিলেন, যার সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস যে, তিনিও এ ষড়যন্ত্রে শরিক ছিলেন এবং তিনি হচ্ছেন ‘কাবুল আহবার’। ‘কাবুল আহবার’ হত্যার ঘটনার তিন দিন পূর্বে আমীরুল মোমেনীনের খেদমতে উপস্থিত হন এবং তাকে বলেন যে, ‘আমীরুল মোমেনীন! আপনার তিন দিনের মধ্যে ওফাত হবে।’ হজরত উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কীভাবে জানলে?’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর কিতাব (তাওরাত) হতে জেনেছি। হজরত উমর (রা.) বললেন, ‘উমরের এটি সৌভাগ্য, তাওরাতে তার নাম উল্লেখ আছে!’ কাব বললেন, ‘এটি বিষয় নয়, কিন্তু আপনার গুণাবলী এবং আপনার হুলিয়া অবশ্যই তাতে উল্লেখ আছে।’
পরের দিন আবার তিনি তার খেদমতে এসে বললেন, ‘আমীরুল মোমেনীন! আপনার ওফাতের আর মাত্র দুই দিন বাকি।’ তৃতীয় দিন আবার এসে বললেন, ‘আমীরুল মোমেনীন! দুই দিন পার হয়ে গেল, এখন মাত্র একদিন এবং এক রাত বাকি আছে। আগামীকাল ভোরে আপনার ওফাত একেবারেই নিশ্চিত।’
কাবের আর কোন প্রশ্নের জবাব খলিফা দিয়েছিলেন কিনা সংলাপে তার উল্লেখ নেই। খলিফার আগাম মৃত্যুবার্তা কাবুল আহবার যে দৃঢ়ভাবে এবং নিশ্চিতরূপে প্রদান করেন তাও নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে, উল্লেখিত হত্যা ষড়যন্ত্র কাবের জানা ছিল বলে তিনি এরূপ বলতে পেরেছিলেন, তাওরাতের বরাত সঠিক হওয়ার কথা নয়। কেননা আসল তাওরাতের শেষ কপিটিও হাজার হাজার বছর আগে বখতে নছর জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এটা যে ঐতিহাসিক সত্য তা হজরত উমর (রা.) এর না জানা থাকার কথা নয়। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, কাবুল আহবার তিনদিন আগ থেকে আমীরুল মোমেনীনের আগাম ওফাতের কথা প্রতিদিন এসে তাকে জানাতে থাকলেও সেদিকে খলিফা কেন কর্ণপাত করলেন না? নিরাপত্তা বিধানের সময় ও সুযোগতো তার ছিল। অথবা তিনি কাবের কথা কেন সত্য মনে করেছিলেন? এসব প্রশ্নের জবাব লেখকের বর্ণনায় না থাকলেও কাবুল আহবার চরিত্র তুলে ধরেছেন এইভাবে! ‘কাবুল আহবার’ ছিলেন একজন ইহুদী। তিনি যখন দেখলেন যে, ইসলামের ক্রমবর্ধমান উন্নতি হচ্ছে এবং কোন দ্বীন ও কোন শক্তি তার মোকাবিলা করতে সক্ষম নয়, তখন তার মেধা ও বিচক্ষণতার দ্বারা এ বাস্তবতা তিনি খুঁজে পান যে, এখন ইসলামেরই জয় জয়কারের যুগ শুরু হয়েছে, ইসলামের বীর শার্দুলগণ সে মহান আত্মত্যাগ, অসাধারণ বীরত্ব ও কোরবানী এ পথে প্রদর্শন করে চলেছেন, সে জন্য তারা অবশ্যই সমগ্র বিশ্বে বিজয় পতাকা উড্ডীন করবেন এবং পূর্ব-পশ্চিম পর্যন্ত তাদের অধিকারে এসে যাবে। এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে তিনি (কাব) ইসলাম গ্রহণ করেন। তার বিশ্বাস ছিল, তার ইসলাম গ্রহণের ফলে তিনি সেই মর্যাদার আসনে আসীন হবেন, যা তার জাতির মধ্যে কেউ অর্জন করতে পারেননি।
‘কাবুল আহবার’ একজন বিজ্ঞ আলেম ছিলেন এবং তাওরাত ইবরানী (হিব্রু) ভাষায় পাঠ করতেন। তাওরাতের জটিল ও কঠিন কবিতাগুলোর হিব্রু ভাষাবিদ আরবদের পক্ষে মর্ম উদ্ধার করা সম্ভব ছিল না। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তিনি বহু মনগড়া কাহিনী মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন এবং তাদের দ্বীন ও আকীদা-বিশ্বাসকে কুলুষিত করেন। ‘কাবুল আহবার’ ইসলামের প্রাথমিক যুগেই উঁচু মর্যাদা ও বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেন। অধিকাংশ লোকের বিশ্বাস ছিল যে, তিনি যে তাওরাত পাঠ করেন তাতে সকল বস্তুর জ্ঞান রয়েছে। তিনি যা কিছু বলেন সবই সত্য। যখন তিনি তিন দিন পূর্বে হজরত উমর (রা.) এর ওফাতের খরব দেন এবং যা পরে বাস্তবে পরিণত হয়, বহু লোক এসব ইসরাইলিয়াত (ভিত্তিহীন) কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে এবং তারা নিজেদের ইতিহাস, হাদীস এবং তফসীর গ্রন্থগুলোতেও অন্তর্ভুক্ত করে নেন। কাব নিজেও এসব বিষয়ের বাস্তবতা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, যেগুলো ছিল তার মনগড়া বানানো। তিনি তার কালাম (বাণী) এর সনদ তাওরাত হতে পেশ করতেন কিন্তু তাওরাতে এ সবের গন্ধও ছিল না। তিনি লোকদের কাছে যা বর্ণনা করতেন সবই ছিল কল্পনাপ্রসূত, মিথ্যাচার। (লেখক বলেন) বর্তমানে প্রচলিত তাওরাত আমাদের সামনে। আমরা যখন তা পাঠ করি, তাতে ঐসব কথার একটি সত্যতাও পাওয়া যায় না, যেগুলো কাবুল আহবার অতীত যুগের বরাতে বয়ান করেছিলেন।
হিজরী ২৩ সালের ২৬ জিলহজ¦ মঙ্গলবার (৬৪৪ খ্রি.) হজরত মুগীরা ইবনে শোবার পার্সিক মজুসী গোলাম আবু লুলু ফিরূজ, হজরত ফারুকে আজম (রা.) এর উপর হামলা চালায়। এর আগের দিন সে তার কাছে অভিযোগ করে যে, তার মালিক তার নিকট থেকে অধিক ট্যাক্স উসুল করেন এবং তা কমানোর জন্য আবেদন করেন। হজরত ফারুকে আজম (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার পেশা কী?’ সে তিনটি পেশার নাম বলল। তিনি বললেন, ‘তা হলে তো পেশার তুলনায় এ অর্থ বেশি নয়!’ একথা শুনে সে রাগে ক্ষোভে চুপ হয়ে গেল। অতঃপর খলিফা তার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘বলা হয় তুমি নাকি বাতাসে চলমান চাক্কি বানাতে পার, আমাকেও একটি চাক্কি বানিয়ে দাও।’ সে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে! আমি এমন চাক্কি বানিয়ে দেব যার শব্দ সারা দুনিয়া শুনতে পারবে।’ পরের দিন ২৭ জিলহজ¦ (বুধবার) ফজরের নামাজের সময় অন্যান্য লোকের সাথে আবু লুলুও খঞ্জর হাতে মসজিদে প্রবেশ করে। হজরত ফারুকে আজম (রা.) নামাজের ইমামত আরম্ভ করেন। তখন অকস্মাৎ আবু লুলু অগ্রসর হয়ে তাকে খঞ্জর দ্বারা পরপর ৬টি আঘাত করে। খলিফা মারাত্মকভাবে আহত হন। কিন্তু এ অবস্থায়ও আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) কে নিজের জায়গায় ইমাম বানান। অতঃপর তিনি পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) সংক্ষেপে ইমামতের দায়িত্ব শেষ করেন। আবু লুলু হামলা করার পর পালাতে থাকে। কিছু লোক তাকে পাকড়াও করার জন্য দৌঁড়াতে থাকে। তাদের কয়েকজনকে সে আহত করে এবং হজরত কোলাইব ইবনে আবি বুকাইর (রা.) কে শহীদ করে। শেষ পর্যন্ত সে গ্রেফতার হয়। কিন্তু এ অবস্থায় সে আত্মহত্যা করে।
আহত অবস্থায় হজরত ফারুকে আজম (রা.) কে তার গৃহে নিয়ে যাওয়া হয়। তার জ্ঞান ফিরে আসার পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘কে আমার উপর হামলাকারী?’ বলা হল, আবু লুলু। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর শোকর, আমার উপর হামলাকারী মুসলমান নয়।’ অতঃপর তিনি মোহররম মাসের প্রথম তারিখ শনিবার বা রবিবার শাহাদত বরণ করেন। এভাবে ইসলামী হিজরী নববর্ষের আনন্দ হিজরী সনের প্রবর্তকের শাহদতে ম্লান হয়ে যায় গভীর শোক মাতমে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।