পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মাশরাফি-মুশফিকদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে আবারো ফাইনালে জায়গা করে নিল টীম বাংলাদেশ। দুবাইয়ের মাঠে এশীয় ক্রিকেটের অন্যতম হট ফেবারিট পাকিস্তানকে হারিয়ে এই কৃতিত্বের প্রমান রাখল বাংলাদেশ। এশিয়াকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা এবার শিরোপার জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে চায়। কারণ ইতিপূর্বে দুইবার শিরোপার লড়াইয়ে তারা ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের এশিয়াকাপ ফাইনালে শিরোপার লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সে ম্যাচে যথেষ্ট ভাল খেলেও শিরোপা ঘরে আনতে ব্যর্থতার জন্য ক্রিকেট ভক্তরা অনেক অভিযোগই তুলেছিল। সে ব্যর্থতার কালিমা এবার মুছে ফেলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ। ওয়ান ডে ক্রিকেটে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষে মাত্র ২৩৯ রান করে অলআউট হওয়ার পর ৩৭ রানে ম্যাচ জেতা বাংলাদেশ দলের পক্ষে যে কোন কিছুই করা সম্ভব। গত জুনমাসে মেয়েদের ক্রিকেট এশিয়াকাপের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ছিনিয়ে এনেছিল সালমা-জাহানারাদের দল। ফাইনালে মহিলা এশিয়াকাপের পুনরাবৃত্তি দেখাতে চায় মুস্তাফিজ- মিরাজরা। তাদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের উপর ভর করে সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারানো সম্ভব হয়েছে। একইভাবে ফাইনালে শিরোপো জেতার হাতছানি দিচ্ছে।
দেশে চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতা দেশের মানুষকে যখন উদ্বিঘ্ন ও হতাশ করে তুলেছে, তখন আফগানিস্তান-পাকিস্তানকে হারিয়ে টাইগার টীমের এশিয়া কাপ শিরোপার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার খবরটি যেন হতাশার খরার মধ্যে এক পশলা বৃষ্টির মত স্বস্তি ও উদ্দীপনাদায়ক। ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ছিনিয়ে আনতে পারলে এই ক্রান্তিকালে তা হবে নতুন প্রজন্মের জন্য অনেক বড় উপহার। দলের দু:সময়ে ব্যাট হাতে হাল ধরে ৯৯ রানের এক চমকপ্রদ ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার জয় করেন মুশফিকুর রহীম। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা দর্শক ও টীম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারলে এবং নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় মুশফিকুর রহীম তার পারফর্মেন্স বজায় রাখতে পারলে দুবাইয়ে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মত এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে এনে জাতিকে গৌরাবান্বিত করা অসম্ভব নয়। ইনজুরির কারণে সাকিব আল হাসান, তামিম ইববালের মত তারকাদের মাঠের বাইরে রেখেও টীম বাংলাদেশ এ সময়ে তার সেরা পারফর্মেন্সের জানান দিচ্ছে। এখন শুধু সর্বশক্তি ও পূর্ণ মনোযোগ ঢেলে দিয়ে ক্রিকেট নৈপুণ্যের ফসল ঘরে তোলার পালা।
বিশ্বে ক্রিকেট প্লেয়িং ন্যাশনের সংখ্যা ফুটবলের মত বেশী নয়। তবে টি টুয়েন্টি ম্যাচের দুর্দান্ত ফর্মেট সংযুক্ত হওয়ার টেস্ট ও ওয়ান ডে ক্রিকেটের গুরুগম্ভীর ভাব কাটিয়ে জনপ্রিয়তায় ক্রিকেট ক্রমে বিস্তার লাভ করে চলেছে। ক্রিকেটকে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা বলা হলেও এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে ঘিরেই এশিয়ায় ক্রিকেটের নেতৃত্ব ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের উঠে আসা একটা বড় ঘটনা। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বৈরীতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে কখনো কখনো ক্রিকেট ক‚টনীতি হয়ে উঠেছে সম্পর্কের অবনতি উত্তরণের গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন। অন্যদিকে আমাদের দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা ও দলীয় বিভাজন থাকলেও একমাত্র ক্রিকেটই হয়ে উঠতে পারে দলমত নির্বিশেষে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার এক গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। ভাল ক্রিকেটের মানদন্ডে অনেকেরই পছন্দনীয় খেলোয়াড় ও দল থাকলেও বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপের শিরোপা লড়াইয়ে দেশকে বিজয়ী দেখতে দল-মত বিভাজনের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না। একদিকে ক্ষমতা ও রাজনৈতিক স্বার্থ দ্বন্দ্বের কারণে আমরা জাতিকে বিভক্ত ও দুর্বল হতে দেখছি, অন্যদিকে বৃহত্তর জাতীয় প্রশ্নে যে কোনো সময়ে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভ‚মিকা পালন করতেও দেখা যায়। মনস্তাত্তি¡কভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ক্রিকেট একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারানো বাংলাদেশ ক্রিকেটদলের সুযোগ্য অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাসহ সব খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এশিয়া কাপ শিরোপার লড়াইয়ে বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে, এটাই দেশবাসির প্রত্যাশা ও প্রার্থনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।