পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনীতিতে আবার উত্তেজনা। ঢাকায় একই দিনে বড় দুই দলের সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকটা মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি জনসভার ঘোষণা দিয়েছে। দাবি- চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। দুপুর ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে এই জনসভা। হঠাৎ করে ওই দিনই গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সমাবেশের ঘোষণা দেয়। সমাবেশের দিন রাজধানীর রাজপথ দখলে রাখতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন ১৪ দলের মুখপাত্র মোঃ নাসিম। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে হুমকি-ধামকি যাই দেয়া হোক না কেন যে কোন মূল্যে জনসভা করবে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন এটা তাদের গণতন্ত্রের ভাষা। জনগণ বিবেচনা করবেন এই সংঘাত সহিংসতা কারা শুরু করে? ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর কারা লগি-বৈঠা দিয়ে সেদিন ২৭ জন তরুণকে হত্যা করেছিলো এটা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। দুর্ভাগ্য এটা যে আমাদের মিডিয়া কেনো জানি এসবকে সামনে তুলে নিয়ে আসে না।
এদিকে একই দিনে দুই দলের সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা দেখে বিএনপিকে ওই দিন সমাবেশ না করার জন্য বলেছে পুলিশ। যদিও গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিএনপিকে জনসভা করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে আবার সমাবেশ না করার জন্য বলেছে পুলিশ। তবে পুলিশ জনসভার অনুমতি দেবে কিনা সে বিষয়ে ভাবছে না রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি। দলের নেতারা জানিয়েছেন ২৯ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দীতেই বিএনপি জনসভা করবে। দলটির নেতাকর্মীরা জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। জনসভাটিকে জনসমুদ্রে রূপান্তরিত করতে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গতকাল সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা করেছে দলটি। যেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকবৃন্দ, ঢাকা বিভাগের জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
জনসভার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জনসভা করতে চেয়েছিলাম ২৭ তারিখে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো যে, ২৭ তারিখ করা ঠিক হবে না। শনিবার ২৯ তারিখ ছুটির দিন সেদিন করেন, সোহওরায়ার্দী উদ্যানে করেন। সেজন্য আমরা ২৯ তারিখে জনসভা করার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন বলা হচ্ছে না। সেদিন নাকী আওয়ামী লীগের কোনো একটা মতবিনিময় সভা আছে আমি ঠিক জানি না। এটা মহানগর নাট্যমঞ্চে সম্ভবত আছে। বহু দ‚রে এই মতবিনিময় সভা। তার সাথে আমাদের জনসভার সম্পর্কটা কোথায়, বিরোধ কোথায় সেটা তো আমরা বুঝতে পারছি না।
শনিবারের জনসভার অনুমতির জন্য আবেদন করবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভাই অনুমতির আবেদন-টাবেদন না। ইট ইজ দেয়ার রেসপনসেবেলিটি। এটা তারাই ঠিক করবেন কী করবেন? জনসভা কী ২৯ তারিখ হবে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে (গতকাল) আমরা যৌথ সভা করেছি ২৯ তারিখের জনসভার জন্য। শনিবারের জনসভা থেকে বিএনপির ‘ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও কর্মস‚চি’ ঘোষণা করা হবে বলে জানান মহাসচিব। তিনি বলেন, এই জনসভা থেকে আমরা আমাদের নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দেব, আমাদের ভবিষ্যতের কর্মপন্থা, ভবিষ্যতের কর্মসূচি- এগুলো আসবে।
এদিকে বিএনপি’র একাধিক নেতা জানান, পুলিশ জনসভার অনুমতি দিক বা না দিক বিএনপি সেদিন সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করবে। সেদিনই বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ এবং নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে বিএনপির দাবির প্রতি সমর্থন জানাবে এবং এই সরকারকে না বলবেন। তারা মনে করেন, সরকার যদি বিএনপির জনসভায় কোনো ধরনের বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবং নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে পুরো ঢাকা শহর জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
বিএনপি স‚ত্রে জানা যায়, জনসভাটি সফল করার জন্য ইতোমধ্যে যৌথ সভা থেকেই নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে জনসভার দিন নিজ নিজ এলাকা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকেও আলাদাভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। ঢাকার পাশের কয়েকটি জেলা বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর নরসিংদীর নেতাকর্মীদেরকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সরকার বাধা দেবে এবং গ্রেফতার করতে পারে এসব বিষয় মাথায় রেখেই কৌশলীভাবে সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, পুলিশ প্রথমে অনুমতি দেয়ার পর এখন না বলছে। তবে আমরা জনসভা করার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। যৌথসভায় ঢাকা ও ঢাকা বিভাগের সকল জেলার নেতাদের বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপিকে জনসভা করতে দিলে লাখো মানুষের ঢল নামবে। তাই সরকার ভীত হয়ে বিএনপিকে জনসভার অনুমতি দিতে চাচ্ছে না। তবে এবার আর আমরা অনুমতির জন্য চেয়ে থাকবো না। অনুমতি পেলে বা না পেলেও বিএনপি জনসভা করবে এবং এই সরকারের সাথে সাধারণ মানুষ যে নাই সেটি সকলে জনসভায় উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করবে।
দীর্ঘদিন পর সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি’র ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে জনসভা করার অনুমতি পায় দলটি। অল্প সময়ের মধ্যে অনুমতি পেয়েও জনসভায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি জনসভাকে সফল করে এবং নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে তোলে। যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করে আসছেন ১ সেপ্টেম্বর জনসভার পর থেকেই বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে হাজার হাজার ভূতুড়ে মামলা করা হচ্ছে এবং এসব মামলায় নেতাকর্মীদের আসামি ও গ্রেফতার করছে পুলিশ। জনসভায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখেই সরকার ভীত হয়ে মামলা-গ্রেফতারের মাধ্যমে দমন-পীড়ন এর নতুন কৌশল নিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা জনসভার প্রস্তুতি নিচ্ছি। পুলিশ অনুমতি দেয়ার পর আবার না করেছে। কিন্তু আমরা আশাবাদী পুলিশ বিএনপির জনসভায় বাধা দেবে না। আর যদি ক্ষমতাসীন দলের কথা মতো বিএনপিকে অনুমতি না দিয়ে দলীয় আচরণ করে তাহলে মনে রাখতে হবে সময় শেষ হয়ে এসেছে। এখন অনুমতির কোন তোয়াক্কা করবে না বিএনপি। যে কোন মূল্যে জনসভা করবেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৪ দলীয় জোট একটি হলরুমে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। আর বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে। সুতরাং এখানে সমস্যা কি? তিনি বলেন, এর আগে কি দেশে একই দিনে দুই দলের জনসভা হয়নি? অনেকবার হয়েছে। তখন কোনও সমস্যা হয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না। তাহলে এখন কী সমস্যা?
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপির এই সমাবেশ হবে সরকারের দুর্নীতি ও প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে। কাজেই সময় যতই কম হোক না কেন এটাকে আমরা জনসমুদ্রে রূপান্তরিত করবো। সেই লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, দখল করার রাজনীতি বিএনপি করে না। ব্যাংক দখল, মানুষের সম্পত্তি দখল, মাঠ দখল করার মতো বিষয়গুলো কখনও গণতান্ত্রিক রাজনীতি হতে পারে না। আওয়ামী লীগ যতই চেষ্টা করুক না কেন, বিএনপি তাতে ভয় পায় না। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আছে। এই কারণে তারা কাউকে মাঠে নামতে দিতে চায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।