মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০১৭ সালের মার্চে জেনারেল ডেভিড পারকিন্স মার্কিন সেনাবাহিনীর এক সামরিক সিম্পোজিয়ামে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক ঘনিষ্ঠ মিত্র’ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে এক শত্রু দেশের ২০০ ডলারের কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করেছে। তিনি দেশটির নাম প্রকাশ বা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেননি। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, একটি খেলনা মানের ২০০ ডলারের ড্রোনকে ৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়। তার বক্তব্যের মধ্যে মূলত অর্থনৈতিক ঝুঁকির প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে তিনি প্যাট্রিয়ট প্যাক-৩ এর মতো অত্যন্ত সফিসটিকেটেড এন্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমে অনুপ্রবেশের একটি সমাধানও বাতলে দিয়েছেন।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় বিপুল সংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন – দুই দেশই ‘ডকট্রিন অব মিউচুয়াল এনিহিলেশন’ বা ‘পারস্পরিক ধ্বংস’ মতবাদ মেনে নিয়েছিলো। এই মতবাদের আলোকে রোনাল্ড রেগ্যান ও লিওনিদ ব্রেজনেভ একটি এন্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল (এবিএম) ডিফেন্স চুক্তি সই করেছিলেন। তাই বলে কেউই আরো উন্নত ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা বন্ধ করেনি। আর সে কারণেই এখন শত্রুর কাছ থেকে আসা এয়ারক্রাফট বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের থাড, প্যাট্রিয়ট প্যাক থ্রি ও এজিস নেভাল সিস্টেম স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধে যথেষ্ঠ কার্যকর। আর রাশিয়ার এস-৪০০ ও এস-৫০০ ব্যবস্থাও যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার কাছ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে এস-৪০০ কিনবে বলে গত মাসে ভারত ঘোষণা দেয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
এতে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান কারণ দেশটি সবসময় ভারতের আগ্রাসী সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার চেষ্টা করেছে। ফলে দেশটির জনগণের উপর এর অর্থনৈতিক সামাজিক প্রভাব পড়ছে। পাকিস্তান কখনো আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করে ভারতের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়নি। এর একটিই কারণ – অর্থনৈতিক।
রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ সিস্টেমে অন্য ব্যবস্থাগুলোর মতেই ট্রাকিং, গাইডেন্ট ও ইন্টারসেপশন ব্যবস্থা রয়েছে। এটি ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার মধ্যে ৩৬ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকা যেকোন ফাইটার বা ক্ষেপনাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধেয়ে আসা ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধের জন্য পাল্টা ক্ষেপনাস্ত্র ছোঁড়ে, অনেকটা প্রতিপক্ষের ঘুষি ঠেকাতে আরেকটি ঘুষি মারার মতো।
এই ব্যবস্থা পাকিস্তানের এফ-১৬ জঙ্গিবিমান প্রতিরোধে যথেষ্ঠ। এফ-১৬গুলোর সর্বোচ্চ উড্ডয়ন সীমা ৫০,০০০ ফুট বা ১৫ কিলোমিটার। পাকিস্তান সবদিক দিয়ে তার শত্রু ভারতের চেয়ে ছোট বিধায় দেশটি নিজের নিরাপত্তার জন্য ভারতের শ্রেষ্ঠত্বের সমপর্যায়ে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু পাকিস্তানের বর্তমানে যে অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ এর মতো ব্যবস্থা কেনা একেবারে অসম্ভব।
এস-৪০০ এর সঙ্গে ফ্রান্সের রাফায়েল জঙ্গিবিমান যোগ হলে নি:সন্দেহে আকাশে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু পাকিস্তান এমন এক মূল্যসাশ্রয়ী ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে যা দিয়ে নিজের আকাশ সুরক্ষার পাশাপাশি অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকার পরও ভারতের অভেদ্য আকাশকে ভেদযোগ্য করতে পারবে। স্নায়ুযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হাসিল করেছিলো তা হলো মাল্টিপল ইনডিপেনডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকেল (এমআইআরভি)। এটা মূলত একসঙ্গে থাকা অনেকগুলো ক্ষেপনাস্ত্র। যেগুলো একসঙ্গে ছোড়ার পর পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডলে প্রবেশের পর প্রতিটি ক্ষেপনাস্ত্র মূল ফ্রেম থেকে বেরিয়ে আসে এবং স্বাধীনভাবে চারদিকে নিজ নিজ লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছোটে।
এবিএম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধেয়ে আসা মিসাইল প্রতিরোধের জন্য একটি মিসাইল ছোঁড়ে। এমআইআরভি যখন একসঙ্গে ছোঁড়া হবে তখন একে একটি মিসাইল হিসেবে বিবেচনা করবে এবিএম এবং সেটি ধ্বংসের জন্য একটি মিসাইল ছুটবে। কিন্তু এমআইআরভি-এর মিসাইলগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হবে তখন এবিএম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকারিতা হারাবে। এটাই হলো বিষয়। ২০১৭ সালে পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম আবাবিল নামে এমআইআরভি ব্যবস্থা পরীক্ষা করে। এই অঞ্চলে শুধু পাকিস্তানের কাছে এই প্রযুক্তি থাকার কথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা এজেন্সির রিপোর্টেও স্বীকার করা হয়েছে।
এবিএম রাডার দিয়ে ধেয়ে আসা শত্রু মিসাইল সনাক্ত করা গেলেও সেগুলো কি প্রকৃতির তা জানা যায় না। এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে আবাবিল দিয়ে যত খুশি সম্ভব এস-৪০০ ক্ষেপনাস্ত্র ধ্বংস করে পুরো ব্যবস্থাটিকেই অকার্যকর করে দেয়া সম্ভব। আবাবিল ক্ষেপনাস্ত্রের প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটা আনুমানিক ৮-১০ লাখ ডলার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ফলে পাকিস্তান এই স্বল্প খরচের ব্যবস্থা দিয়ে ভারতের অত্যন্ত দামি ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি অকার্যকর করে দিতে পারবে।
আর কিছু না হলেও ভারতের এন্টি-একসেস/এরিয়া ডিনাইয়ার সামর্থ্যে বড় রকমের বিভ্রান্তি তৈরি করা যাবে। কারণ গুরুতর টার্গেট না হলে এস-৪০০ ব্যবহার করা হবে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণ ক্ষেপনাস্ত্রকে এফ-১৬ বা পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্র বলে ভুল করে বসতে পারে এস-৪০০। তাছাড়া আকাশসীমায় কোন কিছু ঢুকে পড়লেই যে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে কেনা ব্যবস্থাটি কাজে লাগানো যাবে না, ভারত সে কথা ভালো করেই জানে। সূত্রঃ সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।