Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এনার্জি ড্রিঙ্ক বন্ধের সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হোক

| প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

এনার্জি ড্রিঙ্ক নামে পরিচিত বাজারে থাকা পানীয় দ্রব্যের বিপনণ ও ব্যবহার নিয়ে বির্তক দীর্ঘদিনের। নামে এনার্জি ড্রিঙ্ক হলেও কোনো এনার্জি ড্রিঙ্কই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বাজারে থাকা সব এনার্জি ড্রিঙ্কেই মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন রয়েছে বলে দেশের একমাত্র মাননিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই’র এক সমীক্ষায় দেখা গেছে। তারই প্রেক্ষাপটে গত ২৯ জুলাই বিএসটিআই প্রশাসন কার্বোনেটেড বেভারেজ বা কোক, ফান্টা, স্প্রাইট জাতীয় কোমল পানীয় ব্যতিরেকে দেশীয় বাজারে এনার্জি ড্রিঙ্ক নামের সকল পানীয় উৎপাদন, আমদানী ও বিপনণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসটিআই’র গবেষক কর্মকর্তাদের মতে, এনার্জি ড্রিঙ্কের নামে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন মিশ্রিত পানীয় মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের লাখ লাখ তরুণ নানা ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ফেন্সিডিল, গাজা, পেথেড্রিনের যুগ পেরিয়ে শহর-গঞ্জের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী এখন ইয়াবার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এরই পাশাপাশি চলছে এনার্জি ড্রিঙ্কের আগ্রাসন। বিনোদন ও ক্রীড়াজগতের স্টারদের চটকদার বিজ্ঞাপণে আকৃষ্ট হয়ে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল মিশ্রিত এসব পানীয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোরসহ সব বয়েসী মানুষ। এনার্জি ড্রিঙ্কের নামে এসব পাণীয়কে নেশার জগতে নীরব সংযোজন হিসেবে অভিহিত করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এসব এনার্জি ড্রিঙ্কে আসক্ত ড্রাইভার-হেল্পাররা নানা ধরনের অপরাধ ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
এক সময় টাইগার নামের একটি এনার্জি ড্রিঙ্কে বিদ্যমান অ্যালকোহলসহ ক্ষতিকর দ্রব্যের উপস্থিতির অভিযোগে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদের মুখে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে কিছুদিনের মধ্যেই টাইগার, শার্ক, স্পীড, ব্লাকহর্স, বিগবস ইত্যাদি বিভিন্ন নামের রকমারি এনার্জি ড্রিঙ্কে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। এসব পানীয়তে ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এমনকি যৌন উত্তেজক পর্দাথের উপস্থিতিরও অভিযোগ আছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের যুব সমাজের এক বড় অংশ ইয়াবাসহ নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ায় দেশে একটি মাদক বিরোধী সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরও বিশেষ অভিযান ও জনসচেতনতা মূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে এনার্জি ড্রিঙ্কের নেশা প্রকাশ্যই এক নীরব ঘাতকের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এমনকি কোমল পানীয়গুলোও সব বয়েসী মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে প্রমানীত। বিএসটিআই’র পরীক্ষায় দেখা গেছে, কোমল পানীয়তে যেখানে প্রতি কেজিতে ক্যাফেইনের মাত্রা ১৪৫ এমজি সেখানে কথিত এনার্জি ড্রিঙ্কে ক্যাফেইনের মাত্রা কেজিতে ৩২০এমজির বেশী। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরীক্ষায় দেশীয় বাজারের ৭টি এনার্জি ড্রিঙ্কে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে তিনগুন বেশী ক্যাফেইনের উপস্থিতি প্রমানীত হয়েছে। এসব ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিঙ্কের চটকদার বিজ্ঞাপনে শিশু-কিশোররাই আকৃষ্ট হচ্ছে বেশী। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গার্মেন্টসকর্মী ও পথশিশুরা এসব এনার্জি ড্রিঙ্কে আসক্ত হয়ে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।
অনেক দেরীতে হলেও বিএসটিআই এনার্জি ড্রিঙ্কের নামে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পানীয় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা’ প্রশংসনীয়। তবে এ সিদ্ধান্ত যেন শুধু ফাইলপত্রে-কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। জনস্বার্থে তা যথাশীঘ্র সম্ভব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এনার্জি ড্রিঙ্ক উৎপাদন, আমদানী ও বিপণনের বানিজ্যে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ যত প্রভাবশালী হোন না কেন, জনস্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রেখে এই সিদ্ধান্ত শক্ত হাতে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানসম্মত স্বাস্থ্য পানীয় আন্তর্জাতিক বাজারেও রয়েছে। সব বয়েসী মানুষের মনোদৈহিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তা উৎপাদন ও বিপণন করা হয়। প্রয়োজনে বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য সম্মত পানীয় উৎপাদন ও বিপণন হতে পারে। তবে তা হতে হবে আন্তর্জাতিক মান ও জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, যুক্তরাজ্য সরকারও ১৬ বছরের কম বয়েসী শিশু-কিশোরদের কাছে এনার্জি ড্রিঙ্ক বিক্রি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে। সেখানে খাদ্য নিরাপত্তার মানদন্ড কঠোরভাবে রক্ষিত হলেও এনার্জি ড্রিঙ্কের ক্যাফেইন ও চিনি শিশুদের স্থুলতাবৃদ্ধি, ঘুমের সমস্যাসহ নানাবিধ স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তাদের। তবে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই সেখানকার দোকানদারদের অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এরই মধ্যে১৬ বছরের কম বয়েসী কিশোরদের কাছে এনার্জি ড্রিঙ্ক বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছে বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। বাংলাদেশে বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কঠোর অবস্থান ছাড়া নীরব ঘাতক এনার্জি ড্রিঙ্কের রমরমা বাণিজ্য বন্ধ করা সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এনার্জি ড্রিঙ্ক
আরও পড়ুন