পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কাজ অসমাপ্ত রেখেই শেষ করা হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেনের নির্মাণকাজ। বাকী কাজ শেষ করতে ‘অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ’-শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। দুই প্রকল্প মিলে চার লেনের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর আগেই চার লেনের এই মহাসড়কের ব্যয় বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে ছিল। অসম্পন্ন অবস্থায় আগামী ১৩ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কটি।
৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। শুরুতে এর ব্যয় ছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে আরও ৬০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। চলতি বছর জুনের মধ্যে এটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি নির্ধারিত সময়ে কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ।
তবে এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ। একই সাথে ভুল পরিকল্পনা সংশোধনে নতুন বেশকিছু অংশ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে প্রকল্পটিতে। এতে করে নির্মাণব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সওজ সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। মূলত এ কারণেই অসমাপ্ত রেখেই শেষ করা হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন নির্মাণকাজ। বাকি কাজ শেষ করতে নেওয়া হচ্ছে আরেকটি প্রকল্প। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে স¤প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বিষয়টি উঠে আসে। এতে জানানো হয়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
ওই বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্পটির আওতায় যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার ও পাঁচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর দুই পাশে সাড়ে পাঁচ মিটার প্রশস্ত সার্ভিস সড়ক ও মাঝে পাঁচ মিটারবিশিষ্ট মিডিয়ান রয়েছে। এছাড়া ২৯টি ছোট ও মাঝারি সেতু, ৫৪টি কালভার্ট, চারটি রেলওয়ে ওভারপাস, পাঁচটি ফ্লাইওভার, ২০টি আন্ডারপাস, দুটি ইন্টারচেঞ্জ ও দুটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। তবে বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বাড়ায় পরে তা ৬০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। পরবর্তিতে কাজের পরিধি ও পরিমাণ বৃদ্ধি, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে প্রকল্পটির ব্যয় ১০ হাজার ৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়। চলতি বছর ৬ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বেড়ে ১০ হাজার ৯৯৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
সূত্র জানায়, গত ১৮ আগস্ট উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে তা ফেরত দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ডিপিপিতে নতুন কাজ বা অঙ্গ যেভাবে আছে তা আলাদাভাবে বাস্তবায়নের জন্য পৃথক প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ অবস্থায় প্রথম প্রকল্পটির ব্যয় ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৯২ কোটি ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর বাকি কাজ শেষ করার জন্য নতুন প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ১১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার পলন নির্মাণ প্রকল্পটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রকল্পটির প্রাথমিক পরিকল্পনায় ভুল ছিল। এ কারণে নির্মাণ শুরুর দুই বছরের মাথায় দ্বিতীয় দফায় ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চার লেনের এ মহাসড়কের কাজ অনেক স্থানেই দৃশ্যমান। বিশেষ করে মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে ফ্লাইওভারগুলোর পিলারের কাজ শেষ করে কোনটার বেসমেন্টের আবার কোনটার ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এ ছাড়া নীচের সার্ভিস সড়কগুলোর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। মহাসড়কের ঢাকার অংশে জুরাইন থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এর সাথে জুরাইন রেলগেইটে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেনের এই মহাসড়ক হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক। ২০১৬ সালে সংসদীয় কমিটিতে জমা দেওয়া সওজের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয় ৬০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল হয়ে এলেঙ্গা চার লেনে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয় ৪৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনে কিলোমিটারপ্রতি গড় ব্যয় ১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পে ব্যয় ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এতে আরও বলা হয়, ইউরোপে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ২৮ কোটি টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ব্যয় ১০ কোটি টাকা। আর চীনে তা গড়ে ১৩ কোটি টাকা। অথচ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হবে ১৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ কারণে বলা যায়, ঢাকা-মাওয়া চার লেন মহাসড়কটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।