পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুরের বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে লাল, সাদা আর বাদামী রঙের শাপলা সবার চোখ জুড়াচ্ছে। বরিশালের আগৈলঝাড়া, গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মধ্যবর্তী বিশাল বিল এলাকা আদিকাল থেকেই শাপলার জন্য বিখ্যাত। এ এলাকায় ‘সাতলা-বাগদা সেচ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষের জন্য শাপলাই ছিল ক্ষুধা নিবারণের অন্যতম খাদ্য। বছরে ৮-১০ মাস পানি থাকায় কোন খাদ্য ফসল উৎপাদন হত না। মাছ আর শাপলাই ছিল এলাকাবাসীর জীবিকা। অভাব ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
নব্বই দশকে সরকারি অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘সাতলা-বাগদা সেচ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের ফলে এলাকায় রবি ফসল হিসেবে বোরো ধানসহ শীতকালীন সবজির আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এলাকাবাসীর জীবন-জীবিকারও কিছু পরিবর্তন ঘটে। সামাজিক নিরাপত্তাও উন্নত হতে থাকে। তবে সময়ের ব্যবধানে সেচ প্রকল্পের বেড়ী বাঁধসহ পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো সমূহ পুরানো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় এ সেচ প্রকল্পের কার্যকরিতাও অনেকাংশে বিনষ্ট হয়েছে। ফলে প্রায় ১শ’ বর্গ কিলোমিটারের সেচ প্রকল্পটির অনেক এলাকাতেই পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যা গোটা এলাকার স্বাস্থ্য সমস্যাসহ পরিবেশগত ভারসাম্যও বিনষ্ট করছে। তবে স¤প্রতি প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সাতলা-বাগদা সেচ প্রকল্প পুণর্বাসন’ নামে একটি ডিপিপি একনেক-এর চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে।
ফলে বরিশাল-গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুর জেলার অন্তত ৭টি উপজেলার আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় আবারো ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হতে যাচ্ছে। সাতলা ও বাগদা দুটি আলাদা ইউনিয়ন হিসেবে ভৌগলিকভাবে চিহ্নিত। এ দুটি ইউনিয়নের সাতলা বিল ও বাগদা বিলে এখন দিগন্ত জুড়ে বাহারি শাপলার দৃশ্য যেকোন মানুষের নয়ন জুড়াচ্ছে। বরিশাল মহানগরী ছাড়াও দূর থেকে নারী-পুরুষই সাতলা ও বাগদা’র বিলে লাল-সাদা ও বাদামী রঙের শাপলা দেখতে আসছেন। তবে লাল শাপলার আধিক্য দূর থেকে দেখে মনে হয় দিগন্ত বিস্তৃত লাল কার্পেট বিছানো রয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা বয়সী মানুষ এখানে ডিঙি নৌকা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাতলা ও বাগদা বিলে শাপলা ফুলের রাজ্যে নিজেদের হারিয়ে ফেলছেন। বর্ষার শেষভাগ থেকে হেমন্তের মধ্যভাগ পর্যন্ত সাতলা-বগদা’র বিলে মাইলের পর মাইল জুড়ে শাপলার সমারোহ এক ভিন্ন দৃশ্যের অবতারণা ঘটাচ্ছে। নয়াকান্দি, বাগদা, খাজুরিয়া, চাঁদ ত্রিশীরা, বারপাইকা, পয়সার হাট, আমবৈলা, নাঘির পাড়সহ আস্কর গ্রামগুলোতে শাপলার ব্যাপক সমারোহ। এসব এলাকার বহু মানুষ ও পরিবার শাপলা তুলে বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করছে। পনের থেকে ২০টি শাপলার প্রতি আঁটি ৩-৫ টাকা বিক্রি হয়। তারা প্রতিদিন গড়ে ৩-৪শ’ টাকা পর্যন্ত আয় করে।
ক্যালসিয়াম ও আয়রণ সমৃদ্ধ শাপলার পুষ্টিগুণও অন্য অনেক সবজির চেয়ে বেশী বলে কৃষিবিদগণ জানিয়েছেন। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১শ’ গ্রাম শাপলায় রয়েছে ১ দশমিক ৩ গ্রাম খনিজ, ১দশমিক ১ গ্রাম আঁশ, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ মিলিগ্রাম, ক্যলোরি প্রোটিন ৩ দশমিক ১ গ্রাম, শর্করা ৩১ দশমিক ৭ গ্রাম, ও ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। শালুকও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। শালুক থেকে পুষ্টিকর খৈ’ও তৈরী হয়। সাতলা-বাগদা সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এলাকার বেশীরভাগ মানুষই এ শাপলা-শালুক খেয়ে জীবন যাপন করতে বাধ্য হত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।