Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কমবে বাণিজ্য ঘাটতি
ঢাকা আসছেন ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী


কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও, ভারতে পণ্য রফতানিতে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। রফতানির চেয়ে ভারত থেকে আমদানি ১০ গুণ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারত থেকে প্রায় ৬শ’ কোটি ডলারের পণ্য কেনে। বিপরীতে দেশটিতে রফতানি হয় মাত্র ৬০ থেকে ৭০ কোটি ডলারের পণ্য।
এ ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিশেষজ্ঞদের নানা পরামর্শ ও আলোচনায় চলমান আছে। এরমধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ থেকে ভারতে আরও বেশি পন্য আমদানিসহ দেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়ানো।
অবশ্য এনিয়ে ভারতও কম চিন্তিত নয়। মাত্র কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে সহায়তা করছে চীন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে চীন। তবে চীনের এই বিনিয়োগে উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী ভারত। পদ্মসেতুর চীনের বিনিয়োগের উদ্বৃত্ত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল এবং মালদ্বীপেও চীনের বিনিয়োগ দৃশ্যমান। তবে ভৌগলিকভাবে তিন দিক দিয়ে বাংলাদেশকে ঘিরে রাখা ভারতের জন্য এটি একটি সতর্ক সংকেত। দিল্লীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম মিত্র ঢাকা।
এই অবস্থার মধ্যে ভারত বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করার সিন্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ভারতীয় উদ্যোক্তারা বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় দেশের অবকাঠামো খাত উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখতে চায় বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। এ লক্ষ্যে চলতি মাসে দেশটির বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর নেতুত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসছে। ওই সময়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি অমীমাংসিত বেশকিছু ইস্যু নিয়ে জিটুজি পর্যায়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, সুরেশ প্রভুর এই সফরে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জমি বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনা হবে। চলতি বছরের মে মাসে ভারত সফরের সময়ে এসব অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনাকালে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য জমি বরাদ্দের বিষয়টিও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ বছর একাধিকবার ভারত সফর করেছেন। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সফরে সম্ভাব্য আরও কর্মসূচীগুলোর মধ্যে রয়েছে- টেক্সটেক ইন্ডিয়া শীর্ষক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে আলোচনা, দু’দেশের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে সেমিনার, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে কর, কর্মসংস্থান ও শ্রমসংক্রান্ত নিয়মনীতি নিয়ে আলোচনা এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিটুবি আলোচনা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, চলতি সেপ্টেম্বরেই ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ আসছেন এটি নিশ্চিত। ইতোমধ্যে ভারতের হাইকমিশন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তার এই সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ভারতীয় উদ্যোক্তারা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করতে চান। মূলত বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাই করতে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফরে আসছে। এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেসব বাধা ও সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে এবার আলোচনা করা হবে। আশা করা হচ্ছে, প্রতিবেশী এই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ থাকবে এবারের সফরে।
জানা গেছে, ভারতীয় ঋণে দেশের বড় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত আট বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসি চুক্তির আওতায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করা হয়। তৃতীয় এলওসির আওতায় গত বছর আরও সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ভারত থেকে আট বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে। যা দিয়ে ইতোমধ্যে দেশের বড় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে এলওসি চুক্তির আওতায় ভারতের কাছ থেকে এক শতাংশ সুদে আগামী ২০ বছরে ঋণের টাকা পরিশোধের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। ফলে বড় অঙ্কের ঋণের এই টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওয়া গেলে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বাড়বে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি দূর হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ইতোমধ্যে ভারতীয় এই ঋণের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ভারতীয় এই ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। ভারতীয় ঋণে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। একই সঙ্গে রফতানি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, ঋণ চুক্তির পাশাপাশি তিন বিষয় সামনে রেখে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আঞ্চলিক যোগাযোগ, রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা চাই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দেশে বেশি বিনিয়োগ করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভারতীয় কোম্পানির জন্য তিনটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন করা হয়েছে। তাই ভারতীয় কোম্পানি আসতে পারে। ভারত বিভিন্ন দেশে অনেক বিনিয়োগ করছে। আমরা আশা করব এবার বাংলাদেশেও বিনিয়োগ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ