Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যমুনা-সুরমায় বিপদসীমা অতিক্রম

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৮:০০ এএম

চীন-ভারতে স¤প্রতি অতি বর্ষণের কারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় যমুনা নদ এবং সিলেটের সুরমা নদীর পানি গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তাছাড়া গত দুদিনে দেশের অভ্যন্তরে বিশেষ করে উত্তর জনপদ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে যমুনা ও সুরমার পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। আজকের (শুক্রবার) মধ্যে উত্তর জনপদের বগুড়া জেলা এবং উত্তর-পূর্বে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ এবং রাজবাড়ী জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি (দশ দিনের কম) বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।
প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল অবধি আরো বিস্তৃত হচ্ছে ভয়াবহ নদীভাঙন। নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা, বসতঘর, হাট-বাজার, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, রাস্তাঘাট, ফল-ফসলি জমিসহ একের পর এক পাড়া-জনপদ। পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে মানুষের জানমালের ঝুঁকি ও বিপদ বেড়ে গেছে। নদীভাঙনের মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে অনেক জায়গা। নদ-নদীপাড়ের হাজারো মানুষ শঙ্কা-উৎকণ্ঠায় দিন গুজরান করছেন।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, উজানের পানি আসার কারণে উত্তরের যমুনা নদ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট-সুনামগঞ্জে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা ও সুরমা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আপাতত বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। দেশের ৯৪টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৭৪টিতে পানি বৃদ্ধি এবং ১৮টিতে হ্রাস পায়। গত বুধবার ৬৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ২৭টিতে হ্রাস পায়। গত মঙ্গলবার ৫৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি এবং ৩২টিতে হ্রাস পায়। এভাবে গত ৩-৪ দিনে প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, উত্তর জনপদের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় যমুনা নদের পানি ৬টি পয়েন্টে একযোগে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে যমুনা বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার এক সেমি উর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে অপর ৫টি পয়েন্টেও।
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া এবং চিলমারী পয়েন্টে আরও বেড়ে গেছে। চিলমারীতে বিপদসীমার ৪৬ সেমি নিচে প্রবাহিত হয়। উত্তরের জনপদে তিস্তা, ধরলা, ঘাগট নদীতে পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে বানের পানির চাপ কমাতে ভারত তিস্তায় গজলডোবা ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দেয়ায় বাড়ছে পানি। তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেমি নিচে রয়েছে।
অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীতে পানির সমতল ধীরে ধীরে বাড়ছে। উজানে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির কারণে ভাটিতে পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাচ্ছে। পদ্মা গোয়ালন্দে বিপদসীমার ২৭ সেমি নিচে প্রবাহিত হয়। এ অবস্থায় ভাটির দিকে বিভিন্ন স্থানে পদ্মার ভাঙন দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মেঘনা অববাহিকায় সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাটে বিপদসীমার ২১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পাউবোর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে গতকাল পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আগামী দশ দিনের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সতমল বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার বাহাদুরাবাদ ও অন্যান্য স্টেশনে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে। পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ স্টেশনে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। রাজবাড়ী জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোর পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উজানভাগে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এরমধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের জলপাইগুড়িতে ৮৩ মিমি, চেরাপুঞ্জিতে ১২৬ মিমি।
দেশের অভ্যন্তরে এ সময়ে উল্লেখযোগ্য বর্ষণ হয়, লালাখালে ২৪৬ মিমি, ছাতক ১৬৫ মিমি, কানাইঘাট ১৩৫ মিমি, সুনামগঞ্জে ১৩০ মিমি, জাফলংয়ে ১১৮ মিমি, সিলেটে ১১২ মিমি, বগুড়ায় ১২০ মিমি।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা উভয় নদ-নদী অববাহিকার উৎপত্তিস্থল তিব্বতসহ চীন, ভারত, নেপাল এবং হিমালয় পাদদেশে টানা ভারী বর্ষণের কারণে উজানের ঢলের পানি নামছে ভারত হয়ে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অতিক্রম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ