পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : সবুজ স্বাস্থ্যকর সুখি দুষণমুক্ত শিক্ষানগরী হিসাবে রাজশাহী নগরীকে গড়ে তোলার পেছনে যার অবদান সেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এখন চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সুরম্যনগর ভবন থাকলেও তা অভিভাবকহীন। নেই নগর পিতা। নেই গুরুত্বপূর্ণ পদ সমূহে কর্মকর্তা। সব দায়িত্বপ্রাপ্ত আর ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। নির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দক হোসেন বুলবুল মামলার জালে নগর ভবন ছাড়া। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন নিযাম উল আযিম। কর্পোরেশনের মূল প্রশাসনিক পদগুলোও ফাঁকা। সচিব মাহবুবুর রহমান একাই অন্য দুইজনের দায়িত্ব পালন করছেন। যার ফলে কাজকর্মে হারিয়েছে গতিশীলতা। কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সচল থাকলেও তহবিলের অভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। কর্পোরেশনের অর্থ সংকটও প্রকট। সরকারের বিশেষ বরাদ্দ বন্ধ। অনুদান ও থোক বরাদ্দ খুব সামান্য। কর্পোরেশনের যে আয় তা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। প্রতিমাসে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে হিমসীম খেতে হয়। ভাগ ভাগ করে মাস জুড়ে চলে বেতন ভাতার কার্যক্রম। অনেক সময় অন্য তহবিলে হাত দিতে হয়। এরপর বেতন ভাতা বৃদ্ধির চাপ সামলাতে একেবারে কুপোকাত অবস্থা। সরকারের থোক বরাদ্দ নেই। বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যালিটি ডেভলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) ঋণের এর টাকায় বরাবর সিটি কর্পোরেশন নগরীর উন্নয়ন মুলক কাজ করে আসছে। এবারো এমনটি হবে বলে সব শর্ত মেনে সার্ভিস চার্জ ও ম্যাচিং ফান্ড বাবদ প্রায় আট কোটি টাকা জমা দেয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রাস্তাঘাট ড্রেন বাজার উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজের দরপত্র আহবান করে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ করে বিশ্বব্যাংক বেঁকে বসে। ঋণের অর্থ ছাড়তো দুরে থাক ম্যাচিং ফান্ড ও সার্ভিস চার্জের টাকা পর্যন্ত আটকে গেছে। এদিকে অর্থের অভাবে নতুন রাস্তাঘাটতো দুরে থাক পুরাতনগুলো সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এরপর এবারের প্রবল বর্ষণ আরো ভোগান্তিতে ফেলেছে নগরবাসীকে। উন্নয়ন ও সংস্কার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী। বিব্রতকর অবস্থায় দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র আর কাউন্সিলররা। ভোগান্তিতে পড়া মানুষ নানা রকম বাঁকা কথা বলছেন। বিশেষ করে কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডবাসীকে আস্ব্স্ত করেছিলেন বিএমডিএফ প্রকল্পের কাজের আশায়। সেটি না হওয়ায় তারাও বিব্রত। ঝকঝকে তক তকে নগরী এখন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প তৈরী করে অর্থের অভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। উন্নয়ন বরাদ্দ না থাকলেও বন্ধ নেই কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন আর জরুরী সেবা বিভাগগুলোর কাজ। আর প্রতিমাসের বেতন ভাতা আর জরুরী সেবার অর্থ যোগান দিতে হিমসীম খাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা। জানাগেছে কর্পোরেশনের জনবল তিন হাজার। এরমধ্যে আড়াই হাজার দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী। সব মিলিয়ে মাসে বেতন লাগে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে আয় হয় বছরে আড়াই কোটি টাকার মত। অন্যান্য সব মিলিয়ে বছরে আয় ত্রিশ কোটির বেশী নয়। আয় দিয়ে বেতন ভাতা পরিশোধ করা যায়না। আবার অপ্রয়োজনীয় জনবলও কম নয়। গিজ গিজ করছে নগর ভবনের প্রতিটি তলা। দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগের ফলে ধীরে ধীরে মাথাভারী হয়ে উঠেছে নগর ভবন।
কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য সাবেক মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এরমধ্যে ছিল কর্পোরেশনের গুরুত্তপুর্ণ স্থানের জমিগুলোর উপর ডেভলপারদের সাথে শেয়ার ভিত্তিক বহুতল ভবন করে আয় বৃদ্ধি করা। সে মোতাবেক নগরীর চৌদ্দটি পয়েন্টে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। সাত আটটির কাজও শুরু হয়। এরমধ্যে অন্যতম হলো নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার এলাকায় পুরাতন পৌরভবন ভেঙে সেখানে সিটি সেন্টার নামে বহুতল ভবন তৈরী। নগর ভবনের পাশেই দারুচিনি প্লাজা ও স্বপ্নচূড়ার কাজও শুরু হয়। মুড়ি পট্টির বৈশাখী মার্কেট। নগর ভবন সংলগ্ন স্বপ্নচূড়ায় পরিকল্পনা ছিল সিটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। সেখানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অস্থায়ী কার্যালয় করার কথ ছিল। অন্যান্য ভবনগুলোতে ছিল নানা পরিকল্পনা। মেয়র নির্বাচনে লিটন নির্বাচিত না হবার সাথে সাথে সব প্রকল্প প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ে। সিটি সেন্টারের কাজ চলছে ধীর গতিতে। স্বপ্নচূড়া ভবনের বেশকটি তলা তৈরী হলেও এখন যেন তা পরিত্যক্ত। দারুচিনি প্লাজার কাজের গতিশ্লথ। কবে শেষ হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা কেউ জানেনা। মুড়িপট্টির বৈশাখী মার্কেটের জন্য সেখানকার ব্যবসায়ীদের খুব অল্প সময়ের জন্য বিকল্প হিসাবে লোকনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাস্ততম রাস্তায় দোকান বানিয়ে পাঠানো হয়। ব্যবসায়ীর সংখ্যা অর্ধশতের কম হলেও এখন রাস্তার দু’ধারজুড়ে শতাধিক দোকান ঘর বসে গেছে। মুড়িপট্টির ব্যবসায়ীদের মধ্যে জনা চারেক সেখানে ব্যবসা করছেন। সেখানে এখন ফটোকপি আর কম্পিউটারের ব্যবসা জমজমাট। রাস্তা হারিয়েছে অস্বিত্ব। বেড়েছে ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের। বৈশাখী মার্কেটের কাজের গতিও মন্থর। কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত নয়। আর হলেও সেই রাস্তা আদৌ উম্মুক্ত হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
এদিকে নগরীর ফুটপাত ড্রেন বাজারের দোকানের সামনের রাস্তা সবকিছুতে চলছে দখল। অনেকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়তনের চেয়ে বড় অংশ দখল করেছে ড্রেন আর রাস্তার। এসব সামনের ড্রেন যা ফুটপাত হিসাবে ব্যবহার করার কথা ছিল। সেগুলো সামনের ব্যবসায়ীদের পেটে গেছে। কোন ফুটপাত আর খালি নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযিম শুরুতে নিউ মার্কেটের প্রধান ফটকের সামনের অবৈধ দোকানগুলো গুড়িয়ে দেন। শুরু করেন ফুটপাত অবৈধ দখল মুক্ত করার। কিন্তু এনিয়ে নিজ দলের একটা অংশের বিরাগভাজন হন। কোথাও দলের নাম ভাঙিয়ে চলে দখল। সেখানে হানা দিয়ে খুব একটা স্বস্তি নেই। ব্যাটারি চালিত রিক্সা অটোরিক্সার নিয়ন্ত্রণে শক্ত কিছু পদক্ষেপ নিতে গেলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পিছু হটতে বাধ্য হন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক নগরীর হোল্ডিং ট্যাক্স পুন মুল্যায়নের কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। এনিয়ে ঘেরাও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন মামলা আর আপীল চলছে। সবদিক দিয়ে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছেন। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থ ও সরকারের বিশেষ বরাদ্দ বন্ধ চাপটা আরো বাড়িয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম ইনকিলাবকে বলেন, দায়িত্ব নেবার পর থেকেই অবৈধ দখল মুক্ত অটো, ব্যাটারি রিক্সা নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ নিলেও বিশেষ চাপের কারণে তা সফল হয়নি। ডেভলপারদেরও চাপ দিচ্ছি ভবনগুলো নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য। তারাও খুব একটা গা করছেন না। কর্পোরেশনের আয় তেমন নয়। তারপর বেড়েছে বেতন। সরকারের অনুদানও পর্যাপ্ত নয়। যার ফলে নগরীর উন্নয়ন কাজ থমকে যাচ্ছে। এতো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আমরা স্বাস্থ্য সেবা বৃক্ষরোপন টিকাদান কর্মসূচি ও দুষণমুক্ত নগরী গড়তে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়েছি। টিকাদান কর্মসূচিতে সাত বারের মত চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। দেশি বিদেশি মহলও আমাদের প্রশংসা করছে। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আনুকূল্য আশাকরি। আমি সততার ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।