ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে (ইস্ট কোস্ট) ধেয়ে আসছে ‘দানবীয়’ ঘূর্ণিঝড় (হারিকেন) ফ্লোরেন্স। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে এটি আঘাত হানতে পারে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আর এ সময়ের মধ্যেই লাখ লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ঘূর্ণিঝড়টি তৃতীয় মাত্রায় (ক্যাটাগরি) অবনমিত হয়েছে, যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ মাইল (১৯৫ কিলোমিটার)। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এটা এখনো অত্যন্ত ভয়ংকর অবস্থায় আছে। খবর বিবিসির।
নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে ১৭ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সাউথ ক্যারোলাইনার চারটি সড়ককে একমুখী করা হয়েছে, যাতে সরিয়ে নেওয়ার কাজটা ত্বরান্বিত হয়।
বুধবার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ক্যারোলাইনা, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড ও ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘ক্যারোলাইনা উপকূলের বেশির ভাগ অংশে যে জলোচ্ছ্বাস হবে, তা হয়তো এর আগে কখনো হয়নি।’
ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির কর্মকর্তা জেফ বায়ার্ড বলেন, ‘ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অভ্যন্তরীণ বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা আমি বলার মতো ভাষা পাচ্ছি না। ক্যারোলাইনা উপকূলের অবস্থা মাইক টাইসনের ঘুষি মারার মতো।’
নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর রয় কুপার বলেন, ‘দুর্যোগ আমাদের দোরগোড়ায় এসেছে এবং লাখো ভবন হয়তো প্লাবিত হবে।’ তিনি এ হারিকেনকে ‘দানব’ হিসেবে উল্লেখ করেন। বুধবার সকালে সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতা দেখা গেছে ৮৩ ফুট।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান কোরলজিক বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ১৭০ বিলিয়ন (১৭ হাজার কোটি) ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হবে। সাত লাখ ৫৯ হাজার ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নর্থ ক্যারোলাইনার কৃষিখামারগুলো থেকে গবাদিপশু সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ১৯৯৯ সালে হারিকেন ফ্লয়েডের আঘাতের পর সৃষ্ট বন্যায় লাখো পশু ও মুরগি মারা গেছিল।
সাউথ ক্যারোলাইনার কারা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জানান, নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ বাধ্যতামূলক হলেও প্রায় এক হাজার বন্দিকে সরানো হবে না। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তাদের জন্য এই জায়গাটিই নিরাপদ।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ‘বের হয়ে যান, এটা নিয়ে খেলবেন না।’ তিনি বলেন, ‘এটা অনেক বড় (হারিকেন)।’
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ২০ থেকে ৪০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং ১৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হতে পারে।
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস পূর্বাভাসে বলেছে, সর্বনাশা আকস্মিক বন্যা হতে পারে। এ ছাড়া ক্যারোলাইনা ও অ্যাপালাচিয়ান্স পার্বত্য এলাকার নদীতে প্লাবন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের পরিচালক কেন গ্রাহাম সতর্ক করে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে ৪০ মাইল পর্যন্ত প্লাবিত হবে।