পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারর্পাসন খালেদা জিয়া। এ কারণে তাঁকে আদালতে হাজির করতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বিশেষ এই আদালতের বিচারককে চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি আদালতে আর আসবেন না। বিষয়টি অবহিত করার পর মামলার বিচারকার্যক্রম আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত মুলতবি করেছেন বিচারক। খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য এ দিন রেখেছেন আদালত। একই সঙ্গে এ দিন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে কি না, সে বিষয়েও শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আজ।
গতকাল বুধবার রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত অস্থায়ী ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান আদালতে যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। তবে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় কাস্টডি ওয়ারেন্ট পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিনের কার্যক্রমে খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী অনুপস্থিত থাকলেও দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে দুজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন এবং খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কারা অভ্যন্তরে স্থাপিত আদালতে কেন তাঁদের আপত্তি সেই সম্পর্কিত ১০টি কারণ উল্লেখ করেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে র্র্ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল। খালেদা জিয়ার পক্ষে সানাউল্লাহ মিয়া, জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে আসেন আদালতের কর্মচারীরা। এরপর কারাফটকে তিন দফা তল্লাশি করে মোবাইল ফোন জমা রাখা পর সাংবাদিকরা উপস্থিত হন। বেলা ১১টার দিকে বিচারক আদালতের খাস কামরায় আসেন। এরপর খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু না আসায় এর মধ্যে দুপুর সোয়া ১২টায় বিচারক এজলাসে উঠে শুনানি শুরু করেন। বিচারকার্যক্রম সোয়া ১টা পর্যন্ত চলে। এরপর মুলতবি ঘোষণা করেন বিচারক। এসময় বিচারক বলেন, আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে। এতে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি আর আদালতে আসবেন না। এ অবস্থায় প্রধান আসামির অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে কি না, সে ব্যাপারে আইনগত ব্যাখ্যা হাজির করার জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন আদালত।
শুনানিতে যা হল: আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে শুরুতে খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে বলেন, এ আদালত প্রকাশ্য আদালত নন। সংবিধানপরিপন্থী। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানোর আবেদন করেন। তিনি আরো বলেন, এই আদালত বসানো নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এবং খালেদার চিকিৎসা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। বেগম জিয়ার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আর এই আদালত করার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপ করা হয়নি। এ অবস্থায় কারাগারের ভেতরে আদালত বসানো যায় কি-না এখন যেহেতু তার কাছে আইনজীবীরা গিয়েছেন, তিনি একটি সিদ্ধান্ত দেবেন।
অপর আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আদালতকে বলেন, এ আদালত গুহার মতো। এখানে ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া যায় না। যেকোনো সময় যে-কারও সাফোকেশন হতে পারে। এ আদালত সংবিধানপরিপন্থী।
এক মাসের জন্য আদালতের কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে আমিনুল বলেন, এমন আদালত তিনি তাঁর পেশাগত জীবনে দেখেননি। আইনজীবী, সাংবাদিকদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সাধারণ মানুষের আদালতে ঢোকার কোনো সুযোগনেই। এটি কোনোভাবে প্রকাশ্য আদালত হতে পারে না। এ ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপ চান আইনজীবী আমিনুল। তবে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, আইন মেনে এ আদালত গঠিত হয়েছে। খালেদা জিয়ার সুবিধার জন্য এখানে আদালত বসেছেন। একদিকে খালেদার আইনজীবীরা বলছেন, এ আদালত প্রকাশ্য আদালত নন, সংবিধানপরিপন্থী। অথচ এ আদালতে আবার জামিন চাচ্ছেন।
মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, খালেদা জিয়া বলছেন, তিনি আদালতে আসবেন না। তিনি বিচারকাজে সহায়তা করছেন না। তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে এখানে আদালত বসেছেন। তাঁকে হুইলচেয়ারে করে আনা হচ্ছে। এর জবাবে খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। তাঁদের চারজন সিনিয়র আইনজীবী কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। দলের মহাসচিব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তখন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন বলেন, বারবার বলা হচ্ছে খালেদা অসুস্থ। উনি (খালেদা) কিসের অসুস্থ। উনি আদালতে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সবাই দেখেছে। দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যের একপর্যায়ে বিচারক খালেদার আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চাননি, তা কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আপনরা আবার জামিন চেয়েছেন। খালেদার জামিন মেয়াদ বাড়িয়ে আইনি ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য খালেদার আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়ে বিচারক এজলাস ছাড়েন।
কারা আদালত নিয়ে আইনজীবীদের ১০টি আপত্তি: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকার বকসিবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত আধাপাকা টিনসেড ভবনকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয় এবং ওই স্থানে মামলা পরিচালনার জন্য ড. আখতারুজ্জামানকে স্পেশাল জজ নিয়োগপূর্বক গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আদালত কক্ষটি ১২ ফিট বাই ২৪ ফিট আয়তনের। এই ছোট্ট কক্ষে বিচারকের আসন, আইনজীবীদের বসার স্থান, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, সাক্ষী ও বিচার প্রার্থীদের বসার স্থানসহ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি সবার একত্রে আদালত কক্ষে অবস্থান বিচার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ কোনোভাবে সম্ভব নয়। এরূপ একটা কক্ষকে কোনোভাবেই উন্মুক্ত আদালত বলার অবকাশ নেই। বেআইনিভাবে গঠিত অত্র আদালত ও বিচারিক কার্যক্রম স্থানান্তর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতি মহোদয় বরাবরে একটি আবেদন পেশ করা হয়েছে। এরূপ অবস্থায় আইন সম্মত আদালত প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অত্র মামলার কার্যক্রম ন্যায়বিচারের স্বার্থে স্থগিত রাখা আবশ্যক।
আইনজীবীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি: খালেদা জিয়ার আদালত স্থানান্তর, মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আইনজীবী সমিতিরগুলোতে দুই দিনের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। আগামী ১৬ ও ১৯ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে এই দুই কর্মসূচি পালন করা হবে। বুধবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে বিএনপির আইনজীবীদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সময় তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সময় খালেদা জিয়ার আদালত স্থানান্তর, মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম । এ সময় নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে থাকা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা। আইয়ুব আলী আশ্রাফীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, কামরুল ইসলাম সজল, মো. আলী, আবেদ রাজা, আনিছুর রহমান খান, মাসুদ রানাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আরিফা জেসমিন, আয়েশা আক্তারসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।