Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

উজানের ঢলে অকাল বন্যার পদধ্বনি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

দেশের নদ-নদীর প্রধান দুই অববাহিকা গঙ্গা-পদ্মা এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় আবারো পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাদ্র মাসের শেষ পর্যায়ে এসে প্রধান নদ-নদীতে নতুন করে পানি বৃদ্ধির কারণে অকালেই দেখা দিয়েছে বন্যার পদধ্বনি। সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুসারে যমুনা নদ বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থানে রয়েছে। গঙ্গা-পদ্মা এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনা উভয় নদ-নদী অববাহিকার উৎপত্তিস্থল তিব্বতসহ চীন, ভারত, নেপালসহ হিমালয় অববাহিকায় সাম্প্রতিক টানা অতি বর্ষণের কারণে ঢলের তোড়ে পানি নামছে ভারত হয়ে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। গত প্রায় এক সপ্তাহে প্রধান নদ-নদীগুলোর পানির সমতল ফুঁসে থাকলেও বিপদসীমার নিচে প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় ছিল। অন্যদিকে উজানের ঢল-বানের কারণে ভাটিতে দেশের উত্তর জনপদ থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ব্যাপক আকারে অব্যাহত রয়েছে নদীভাঙন। উজানে-ভাটিতে যদি বর্ষণ অব্যাহত থাকে তাহলে পানিবৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
গতকাল (বুধবার) পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা যায়, উত্তর জনপদে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া এবং চিলমারী এই দুটি পয়েন্টে একদিনের ব্যবধানেই যথাক্রমে ৩৯ ও ২৯ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্র চিলমারীতে বিপদসীমার ৫৯ সেমি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
একই অববাহিকায় যমুনা নদে ৬টি পয়েন্টে একযোগে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনায় স্থানভেদে একদিনেই ২৮ থেকে ৪৮ সেমি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে যমুনা বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ২১ সেমি নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। নদের পানি বেড়ে গিয়ে ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেমি নিচে এবং বাহাদুরাবাদে ৪০ সেমি নিচে এসে গেছে। সর্ব উত্তরের জনপদে তিস্তা, ধরলা, ঘাগট নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীতেও পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজানে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধির প্রভাবে একই অববাহিকায় ভাটিতে পদ্মা নদীতে পানি আরও বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বিকেল পর্যন্ত পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪ সেমি নিচে প্রবাহিত হয়। গঙ্গা-পদ্মা রাজশাহীতে বিপদসীমার ১৩৩ সেমি নিচে প্রবাহিত হয়।
এদিকে পাউবো পূর্বাভাসে জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের এবং গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পদ্মা নদীর পানির সমতল বর্তমান প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হতে পারে।
আপার মেঘনা অববাহিকায় সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানিও বৃদ্ধির দিকেই রয়েছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। বিগত ৪৮ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ভারতের উজানের ঢলে ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। গতকাল সুরমা কানাইঘাটে বিপদসীমার ৫০ সেমি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গতকাল দেশের ৯৪টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি এবং ২৭টিতে হ্রাস পায়। গত মঙ্গলবার ৫৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি এবং ৩২টিতে হ্রাস পায়। এদিকে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উজানভাগে ভারী বর্ষণের রেকর্ড হচ্ছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের ধুবড়িতে ১৭১ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ৯১ মিমি, চেরাপুঞ্জিতে ৬২ মিমি এবং তেজপুরে ৫২ মিমি। ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে এ সময়ে উল্লেখযোগ্য বর্ষণ রেকর্ড করা হয়েছে- লালাখালে ২১০ মিমি, ছাতক ও সুনামগঞ্জে ১১০ মিমি করে, ডালিয়ায় ৯৫ মিমি, কুড়িগ্রামে ৭৩ মিমি। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ