পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভূমিদস্যুরা ৩০ বছরে খেয়েছে ৫২ পাহাড়-টিলা
নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট
অক্ষত পাহাড় নেই নির্বিকার সিডিএ
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের শোভা পাহাড়-টিলার সারি। এক সময় সাগর নদী হ্রদের চারপাশে নয়ন জুড়ানো সবুজ পাহাড় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতো। ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য সুরক্ষায় অপরিহার্য চাটগাঁর পাহাড় টিলারাশি। কিন্তু বছরের পর বছর পাহাড়খেকো ভূমিদস্যুরা চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে ন্যাড়া বানিয়ে একে একে ধ্বংসলীলায় মেতে আছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে গত ত্রিশ বছরে এভাবে কমপক্ষে ৫২টি পাহাড়-টিলা কেটে খুঁড়ে ধ্বংস করেছে ভূমিগ্রাসীরা। ওদের পেছনে আছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। বর্তমানে চট্টগ্রামে আর কোনো অক্ষত পাহাড় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অন্যদিকে পাহাড় প্রকৃতি সুরক্ষা ও নাগরিক সেবা প্রদানে মূলত দায়বদ্ধ সরকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নাকের ডগায় অবাধে চলছে পাহাড় ধ্বংস আর ভূমি দখল-বেদখলের প্রতিযোগিতা। অথচ নির্বিকার রয়েছে সিডিএ। পরিবেশ অধিদপ্তরও দায় এড়িয়ে চলছে। পাহাড় টিলার ধ্বংসলীলা দেখেও না দেখার ভান করছে।
চট্টগ্রামের সর্বত্র পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলে সেখানে রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে বসতঘর। হাজার হাজার নিম্ন আয়ের বিশেষত শ্রমজীবী পরিবারকে সেসব ঘর ভাড়ায় দিয়ে প্রতিনিয়ত মোটা অংকের টাকা তুলছে একটি সিন্ডিকেট। জীবনের চরম ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে পাহাড়ের পাদদেশে অগণিত মানুষ। ভরা বর্ষার সময় তাদেরকে অন্যত্র ‘নিরাপদ স্থানে’ সরিয়ে নেয়ার মহড়া ও কানামাছি খেলা চোখে পড়ে প্রতিবছর। কিন্তু বর্ষা শেষ না হতেই দরিদ্র পরিবারগুলো আবারো ফিরে যাচ্ছে সেসব মৃত্যুকূপে।
ভূমিদস্যুরা প্রশাসনের নাকের ডগায় দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পরিবেশ-প্রকৃতির ‘পেরেক’ হিসেবে বিবেচিত পাহাড়-টিলার সারি ধ্বংসের পরিণতিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিধস এবং প্রতিবছর তাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে ভূমিকম্প বলয় বা জোনে অবস্থিত চট্টগ্রামে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়ছে। বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ-দুর্বিপাকের প্রকোপও। কেননা পাহাড় কেটে ধসের সাথে সাথে ভূমির স্থিতিশীলতা বা স্বাভাবিক ভারসাম্য বিপন্ন হচ্ছে। উঁচুনিচু চট্টগ্রাম পরিণত হয়েছে ‘কৃত্রিম সমভূমিতে’। সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠির বস্তিঘর ছাড়াও গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক এলাকা, কল-কারখানা, দোকান-পাট।
মূলত চট্টগ্রামে নগরায়ন চলছে অপরিকল্পিতভাবে। পাহাড় কাটা বালু-মাটি বিক্রির জমজমাট ব্যবসা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান অতীতে চোখে পড়লেও এখন তাও নেই। এর সুবাদে কখনো সরবে কখনো নীরবে পাহাড় কাটা হচ্ছে। চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসটি গড়ে উঠেছে পাহাড় কেটে। একের দেখাদেখি অন্যরাও যেন পাহাড় কাটার প্রতিয়োগিতায় নেমেছে। নগরীর ছাড়িয়ে চট্টগ্রাম জেলায়ও বিস্তৃত হয়েছে পাহাড় ধ্বংসলীলা। বেদখলে থাকা পাহাড়গুলোকে ঘিরে মাদকের কারবারসহ নানামুখী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও এর আশপাশে অন্তত ১৮টি পাহাড়ের পাদদেশে বিপজ্জনক অবস্থায় বসবাস করছে এক লাখেরও বেশি মানুষ। অত্যধিক ঝুঁকিতে রয়েছে মতিঝর্ণা, কুসুমবাগ, খুলশী পাহাড়, বাটালি হিল, জয়পাহাড়, হামজারবাগ নবীনগর, বার্মা কলোনী, গোল পাহাড়, দেবপাহাড়, বায়েজিদ, বিশ্ববিদ্যলয় সংলগ্ন পাহাড়, জালালাবাদ পাহাড়, জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়, নাছিরাবাদ পাহাড়, এনায়েত বাজার পাহাড়, জামতলা পাহাড় টিলার কিনারে বসবাসরত লোকজন।
ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন পাহাড় ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, ওয়াসা, রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থা পাহাড়ের মালিক। হতদরিদ্র জনগোষ্ঠিকে অসৎ চক্রটি পাহাড়ের ঢালে বসবাসের ইন্ধন জোগায়। কোনমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেয়ার বিনিময়ে অভাবী লোকজনের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা উসুল করছে সংঘবদ্ধ চক্র। পাহাড় টিলা কাটা ও দখলের অবৈধ বাণিজ্যে লাখ লাখ টাকা হাতবদল হচ্ছে প্রতিদিনই। ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে পাহাড় টিলা কাটা হচ্ছে।
বিগত ১১ জুন’০৭ইং চট্টগ্রামে ভয়াল সেই পাহাড় ধস ট্র্যাজেডির পরই সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এমএ মতিনের নিবিড় তদারকিতে এবং তৎকালীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এএমএন সিদ্দিকের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি পাহাড় ধসের পেছনে ২৮টি কারণ চিহ্নিত করে। পাহাড় ধস রোধে সরকারের কাছে ৩৬ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়।
যাতে বলা হয়- পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন, পাহাড় কাটা বন্ধে ও পাহাড় সুরক্ষায় কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ, যেসব পাহাড় ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে সেগুলোতে গাইডওয়াল নির্মাণ, পানি নিষ্কাশনে ড্রেন নির্মাণ, ন্যাড়া হয়ে পড়া পাহাড়গুলোতে বনায়ন করা, নির্বিচারে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, পাহাড়ি এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নিষিদ্ধ করা, পাহাড়ি এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হাউজিং প্রকল্প অনুমোদন নিষিদ্ধ করা, বিভিন্ন সমিতির নামে পাহাড় লিজ নিয়ে বা দখল করে যারা পাহাড় ধ্বংস করেছে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন-বিধিতে ব্যবস্থা নেয়া ইত্যাদি।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে সমন্বয় ও উদ্যোগের অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বেড়াজালে সুপারিশমালা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের সাথে থাই সরকারের যৌথ কারিগরি সহায়তায় পাহাড়ধস রোধে জাদুকরি ঘাস বা বিন্না ঘাস রোপণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প সমগ্র নগরীতে সম্প্রসারণের কথা জানান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ স্থপতি আশিক ইমরান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, অবাধে দখলের কারণে পাহাড়গুলো ধ্বংসপ্রায়। পাহাড় সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। অন্যথায় চট্টগ্রামের ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য আরও বিপন্ন হবে। এর জন্য সকল সরকারী-বেসরকারী মহল এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।