Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কালিয়াকৈরের আতঙ্ক মুচি জসিমের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:৫৭ পিএম

গাজীপুরে ১৭ মামলার পলাতক আসামি ও কালিয়াকৈরের মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক জসিম ইকবাল ওরফে ‘মুচি জসিমের’ (৩৮) গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার সকালে জেলার কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের ভুলেশ্বর এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
কাপাসিয়া থানার ওসি মো. আবু বকর ছিদ্দিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ১৭ মামলার পলাতক আসামি জসিম দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। সম্প্রতি কিছু দিন ধরে পলাতক ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বলে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশ জসিমকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি।

এদিকে জসিম গ্রেফতারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে কালিয়াকৈর এলাকায় স্থানীয়রা আনন্দ মিছিল বের করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। মুচি জসিম নিহতের খবরে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

অপরদিকে জসিম ইকবাল ওরফে মুচি জসিম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নাকি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ওই এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। পুলিশ সেখানে গেলে টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দু’দল সন্ত্রাসীর মধ্যে ওই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

কে এই মুচি জসিম?

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে জসিম ইকবাল ১৫ থেকে ২০ বছর আগে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় এসে জুতা তৈরির একটি কারখানায় পিয়ন পদে চাকরি নেন। এর আগে কিছুদিন টোকাইয়ের কাজও করেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেই জুতা বানিয়ে ওই কোম্পানিতে সরবরাহ করতে শুরু করেন তিনি। এজন্য এলাকায় মুচি জসিম নামে তার পরিচিতি রয়েছে।

তিনি সরকারি বন বিভাগের ৩০০ বিঘা জায়গা দখল করে বন কেটে গড়ে তুলেছেন নতুন এক গ্রাম। আর এতেই সেই জসিম ইকবাল আজ শতকোটি টাকার মালিক। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তিনি ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্ক।

জানা গেছে, একটি হত্যা মামলায় পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে গিয়ে গোটা জীবনটাই বদলে নিয়েছেন জসিম। তার কাছে যেন কেউই নিরাপদ নয়। স্বার্থের পরিপন্থী হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর হামলে পড়তেন তিনি। একে একে ১৭টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি হওয়া সত্তেও প্রকাশ্যেই তিনি ঘুরে বেড়াতেন।

তার কুকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। বাদ যাননি সরকারি কর্মকর্তাও।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের আশীর্বাদপুষ্ট জসিম ইকবালের রয়েছে শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী। কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বনের অন্তত ৩০০ বিঘা জমি দখল করে পৃথক বেশ কয়েকটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি।

২০১৫ সালের ২১ আগস্ট চন্দ্রায় জাতির পিতা কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলামকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আর এই হত্যার ঘটনায় কপাল খুলে যায় মুচি জসিমের।

রফিকুল হত্যার আসামিদের ধরিয়ে দিতে থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। অল্প সময়ের ব্যবধানে পুলিশের বিশ্বস্ততা অর্জনের সুযোগে হত্যা মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে এলাকার মানুষজনকে জিম্মি করে ফেলেন জসিম। তার সহযোগিতায় কালিয়াকৈর থানার পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানে না এমন মানুষজনকেও ধরে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে আর জসিম মধ্যস্থতা করে তাদের ছাড়িয়ে আনতেন। আর থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ করে টাকা আদায় করতেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মরদেহ উদ্ধার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ