পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জোট-মহাজোটের সমীকরণের জটিলতা বাড়ছে। জোট মহাজোটে পরিণত হবে কিনা তা নিয়ে আওয়ামী লীগ শরিকদের নানা মত থাকলেও তাদের লক্ষ্য চাহিদা মত নির্দিষ্ট আসনগুলোতে জোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করা। আওয়ামী লীগ থেকে ৭০টি আসন শরিকদের জন্য ছাড়ের খবরে জোটের এমপি প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ বেড়েছে বহুগুণ। যেভাবেই হোক দল জোট থেকে যে কয়টি আসন মনোনয়ন পাবে তার মধ্য থেকে নিজের আসনটি নিশ্চিত করতে জোর তদবির-লবিং চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এ নিয়ে দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দারস্ত হবার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন জোটের এমপি প্রার্থীরা। সূত্র জানায়, কোন কোন আসন নিয়ে জোটের মনোনয়নে দেন-দরবার হবে তা প্রকাশ করছে দলগুলো। তাহলে যেসব আসনে জোটের মনোনয়ন নিয়ে কথা হবে না সেসব আসনের দলের প্রার্থীরা মাঠে থাকবেন না। তবে বর্তমান এমপিদের আসন সহকারে অন্যদের আসন নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানা যায়।
এদিকে কয়েকজন শরিক এমপির এলাকায় অবস্থান নাজুক। সে সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়নের চেষ্টা করছে। তবে শরিকরা এ নিয়ে ছাড় দিতে নারাজ। তাদের মতে, আওয়ামী লীগেরও অনেক এমপির অবস্থা নাজুক কিন্তু নৌকার মনোনয়ন পেলে ঠিকই পাস করবে তারা। শরিকদের অবস্থাও একই। তাই চিন্তার কিছু নেই। শরিক দলগুলোর সূত্র জানায়, প্রায় শতাধিক আসনে জোটের মনোনয়ন চায় দলগুলো। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু) ১৫০টি আসনে প্রস্তুতি নিলেও জোটের মনোনয়ন চাইবে ৩০টি আসন, ওয়াকার্স পার্টি ৭০টি আসনে প্রস্তুতি নিয়ে ১৫টি আসন, বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া) ২০ আসনের প্রস্তুতির বিপরীতে ১০টি। এছাড়া সাম্যবাদি দল ৬টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ৫টি, গণতন্ত্রী পার্টি ৩০টি, গণআজাদী লীগ ৫টি ও তরিকত ফেডারেশন ৩০টি আসনের প্রার্থীর তালিকা আওয়ামী লীগের কাছে দিয়েছেন।
এছাড়া জাতীয় পার্টি (জেপি) ৩০০ আসনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছে। এদিকে জোটের বাইরের দল নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি বাংলাদেশ জাতীয় জোটের ব্যানারে আওয়ামী লীগের কাছে ৫০টি আসন দাবি করেছে। ইসলামিক ফ্রন্টও কয়েকটি আসন দাবি করছে আওয়ামী লীগের কাছে।
তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জোট থেকে দলগুলো কয়টি আসন পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। গতবার ৬০ আসন চেয়ে শরিকরা পেয়েছে ১৫টি আসন। এবারও চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি নিয়ে সন্দিহান দলগুলো। তবে দলগুলোর এমপি প্রার্থীরা চাচ্ছেন যে কয়টি আসনই ছাড় পান না কেন সে আসনটি যেন তার আসনটি হয়। এভাবে যথেস্ট লবিং-তদবির করছেন তারা।
এ বিষয়ে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার ইনকিলাবকে বলেন, কোন কোন আসনে জোটের মনোনয়ন চাওয়া হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। কারণ তাহলে অন্যরা কাজ করবে না। বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রচার সম্পাদক কামরুল আহসানও একই কথা জানান। এছাড়া অন্যান্য দলের প্রার্থী কম হওয়ায় দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের আসনে জোটের মনোনয়ন নিয়েই ব্যস্ত।
এদিকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বার বার বলা হচ্ছে উইনেবল ক্যান্ডিডেট ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। সেজন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দেন-দরবারের পাশাপাশি শরিকরা তাদের এমপি প্রার্থীদের এলাকায় বেশি সক্রিয় হতে বলছে। নিয়মিত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহনের তাগিদ দেয়া হচ্ছে কেন্দ্র থেকে।
যাতে করে দল থেকে সেসব প্রার্থীদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরে আওয়ামী লীগের কাছে জোটের মনোনয়ন চাইতে পারে। এবং স্থানীয় এমপির নানা দুর্বলতা তুলে ধরে তার চাইতে শরিক প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বেশি এবং আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন পেলে জয়লাভ করতে পারবে সে বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই নির্দিষ্ট আসনগুলোর গ্রিন সিগনাল চাচ্ছে শরিকরা। কিন্তু শরিকদের চাহিদা মত আসন ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। এমনকি কোন নির্দিষ্ট আসনে মনোনয়নের গ্রিন সিগনাল দিতেও চায় না ক্ষমতাসীনরা।
১ সেপ্টেম্বর শনিবার ধানমÐিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচনে শরিকদের ৬০ থেকে ৭০টি আসন ছাড় দেয়া হবে। শরিকরা বলছে, জাতীয় পার্টিসহ এত আসন।
তবে এ আসন গুলোর মধ্যে নিজের আসন বাগিয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। জাসদ থেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে ১৫০ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ত্রিশটি জোটের মনোনয়নের জন্য দাবি করলেও কয়টি পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই প্রার্থীদের মধ্যেও অস্থিরতা রয়েছে। প্রার্থীরা চান তার আসনটিই যেন জোটের মনোনয়ন পান।
ঢাকা-৫ আসনে জাসদের (ইনু) সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা পূর্বের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হয়েছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কথায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মেয়র সাঈদ খোকনকে সমর্থন দেন। দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে ঢাকা-৫ আসনে তার প্রচারণার অনুমতি নিয়েছেন। আশা করেন, জোটের মনোনয়ন পাবেন।
ঢাকা-৫ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী করতে ইচ্ছুক দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুস সবুর আসুদকে। এ ব্যাপারে আবদুস সবুর আসুদ ইনকিলাবকে বলেন, তিনি এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। স্থানীয় মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। এই আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে আশ্ব্স্ত করেছেন।
ময়মনসিংহ-৬ আওয়ামী লীগ এমপি মুসলিম উদ্দিনের আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাসদের ময়মনসিংহ মহানগরের আহবায়ক এবং ময়মনসিংহ পৌরসভার কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। এমপি মুসলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা তদন্তাধীন। স্থানীয় আওয়ামী লীগও নেই তার পাশে। তার বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বক্তব্য ‘তিনিও এমপি, তার বউ-ছেলে-মেয়েও এমপি। তাদের ক্ষমতার দাপটে আওয়ামী লীগ দিশেহারা।’ এ অবস্থায় সহজেই মিন্টু জোটের মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন বলে ধারণা করছেন জাসদ নেতারা। এ ব্যাপারে মিন্টু বলেন, এ আসনের জনগণ এমপির দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারের কারণে অতিষ্ট। স্থানীয় আওয়ামী লীগও এমপির দ্বারা নির্যাতিত হয়ে এখন তার পাশে। জোটের মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে বিশ্বাস করেন।
ঢাকা-১৭ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পাশাপাশি বিএনএ চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং জাসদের সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার নির্বাচন করতে আগ্রহী।
জাসদের (ইনু) মনোনয়ন পেয়ে ঢাকা-১৫ আসনে মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন চাইছেন। পারিবারিকভাবে এলাকার রাজনীতিতে পরিচিত এই নেতার বড় ভাই জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে জাসদের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখেন সুমন।
যশোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম। দলের ও জোটের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি রণজিৎ কুমার রায়ের স্থানে জোটের মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও জেলা সভাপতি ইকবাল কবীর জাহিদ।
মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের স্বতন্ত্র এমপি মকবুল হোসেনের আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নূর হোসেন বকুল। তিনি জোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
দিনাজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি মনোরঞ্জনশীল গোপালের স্থানে মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আব্দুল হক। এমপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে নিজ দলেরই একটি অংশ। এছাড়া তার নানা দুর্নীতি, অপকর্মের অভিযোগ দলের নেতাদের। ফলে সংগঠনে কোন্দল ও এমপির বিতর্কের কারণে জোটের মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আব্দুল হক।
কুমিল্লা-৮ অথবা ৯ থেকে জোটের মনোনয়ন চান তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরি। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, জোটের মনোনয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন জোটের সঙ্গে আছি। আশা করি মনোনয়ন পাব।
বাংলাদেশ জাসদ- সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া নড়াইল ১ অথবা-২ এর মনোনয়ন চাচ্ছেন। সাম্যবাদি দলের দিলিপ বড়–য়া চাচ্ছেন চট্টগ্রাম-১ আসনের মনোনয়ন।
গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ৩০টি আসনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আগামী নির্বাচনের জন্য। তিনি গাজীপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান। এ আসনে জোটের মনোনয়ন পাবেন বলে আত্মবিশ্বসী।
জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বর্তমান সংসদে বিভিন্ন আসনে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ১৫ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৬, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৫, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ২, জাতীয় পার্টির (জেপি) ২ জন। এর বাইরে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্য ৩৪ জন। ####
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।