পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনের জনসভায় ব্যাপক উপস্থিতির পর হঠাৎ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় বেড়ে গেছে। গত কয়েকদিনেই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্তত ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে পুরোনো মামলা সচল করার পাশাপাশি নতুন করে নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগ এনে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে সারাদেশে নতুন করে প্রায় ১৯শ’ (১৮৯৬ জন) জনকে আসামী করে মামলা দেয়া হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, ১ সেপ্টেম্বর দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় বড় জনসভায় জন স্রোত দেখে সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। বিএনপির প্রতি মানুষের সমর্থন ও আস্থা দেখে সরকার আরও রুদ্রমূর্তি রূপ ধারণ করেছে। ওই জনসভার পর থেকে দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় বেড়ে গেছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত কয়েক দিনে প্রায় ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, সরকার আতঙ্কে ভুগছে। গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যা, দুর্নীতি, দুঃশাসনের কাদায় আটকে পড়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে মরণ কামড় দিচ্ছে। পুরোনো মামলা চালু করা এবং নাশকতার অভিযোগ এনে দেশব্যাপি মামলা জড়ানো হয়েছে নেতাকর্মীদের। অভিযোগের ধরণ একই রকম। সুতরাং মামলাগুলি যে পরিকল্পিত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের পর সরকার মনে করছে, দলটি সংগঠিত হচ্ছে। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেকোনো সময় নেমে পড়তে পারে। এ কারণে বিএনপি যাতে সংগঠিত হতে না পারে, সে জন্য বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
দীর্ঘ দিন পর গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে জনসভা করেছে দলটি। দলের এই জনসভায় বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে একটি বড় ধরণের শোডাউন এবং সরকারকে বার্তা দিয়েছে রাজপথের এই প্রধান বিরোধীদল। ঢাকার মতো সারাদেশেই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। অনেক দিন পর এই কর্মসূচিকে ঘিরে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা অনেকটা জেগে উঠেছেন।
জানা গেছে, দলটির নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচনের আগে একটি স্বল্পমেয়াদি আন্দোলনে নামা। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামতে সাংগঠনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে পুলিশ সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে। বিশেষ করে ১ সেপ্টেম্বর দলটির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর গণহারে গ্রেফতার ও মামলা দেয়া শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিএনপির নেতারা জানান, গত শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৮ জন, সুনামগঞ্জে ৩২, কুষ্টিয়ায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী মিলিয়ে ৫৮, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ১৪ জন, ঢাকায় ১জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
হটাৎ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজিপি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বর্তমানে পুরো দেশজুড়ে পুলিশের নিয়মিত অভিযানের পাশপাশি বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যার কারণে কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে টার্গেট করে গ্রেফতারের বিষয়টি ঠিক নয়। এছাড়া, প্রতিটি মামলা ও গ্রেফতারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর বিএনপিকে টার্গেট করে গ্রেফতার বাড়ানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বছরের সব সময় সমানতালে মামলা ও গ্রেফতার হয় না। এটি অবস্থাভেদে বাড়ে-কমে। বর্তমানে নিয়মিত অভিযান ছাড়াও মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান, অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যার কারণে অন্য সময়ের তুলনায় গ্রেফতারের সংখ্যাটি একটু বেশি বলে মনে হচ্ছে। তবে কাউকে হয়রানি বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে ৪ শতাধিক বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নতুন করে মামলা দেয়া হয়েছে প্রায় ১৯শ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় ২টি মামলায় ৫৫জন, রাজধানীর কদমতলীতে ২টি মামলায় ৫৫জন, শ্যামপুরে ৯৮, ডেমরায় ১০৫, ওয়ারীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ ২২৫জন, সূত্রাপুরে ১৩, যাত্রাবাড়ীতে ৯৯, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরবসহ ৩০জন, বগুড়ায় দুটি মামলায় ৩৫জন, ময়মনসিংহের ভালুকা ও ত্রিশাল উপজেলায় ১৪, হালুয়াঘাটে ৪৫, ধোবাউরা উপজেলায় ৪৩, তারাকান্দা, উশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর, শেরপুর সদর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুরে ৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ।
এছাড়া ময়মনসিংহে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৫৫জনের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক মামলা দায়ের করেছে। একইসময়ে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলায় মামলা করা হয়েছে বিএনপির ১৫৭ জনের বিরুদ্ধে, নড়াইলে ৩৫জন, নওগাঁয়ের আত্রাই উপজেলায় ৩১জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০০-৪০০ জন, ঝিনাইদহে ১০১জন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ্যাড. তৈমুর আলম খন্দকারসহ ৫৭, পিরোজপুরে ১০, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ৩৫জন, এবং সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় বিএনপির ৪৫৬জন নেতাকর্মীকে আসামী করে মামলা করেছে পুলিশ। এছাড়া রাজশাহীতে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ চাঁদকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছে। বাগেরহাটে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পোস্টার লাগানোর অপরাধে শতাধিক নেতাকর্মী ঘরছাড়া হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী, গণবিরোধী, অত্যাচারী সরকারকে ক্ষমতা হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে। সাধারণত নির্বাচনের আগে যেখানে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়া হয়, সেখানে নতুন করে গ্রেফতার করা হচ্ছে, মামলা দেয়া হচেছ। এ থেকে পরিষ্কার সরকার ৫ জানুয়ারির চেয়ে আরও খারাপ নির্বাচন করতে চায়। যে নির্বাচনে তারা বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে চায় না। তবে সরকার যতই নির্যাতন করুক, কৌশল গ্রহণ করুক তারা পরাজিত হবেই। দলের অন্যতম এই সিনিয়র নেতা বলেন, সরকার ভেবেছিল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভা হবে ক্ষুদ্র ও বিশৃঙ্খল। এতো মানুষ হবে তারা ভাবেনি। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হামলা, মামলা, ভয়-ভীতি প্রদর্শনের পরও জন স্রোত দেখে সরকার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এজন্য এখন নতুন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার করছে, মামলা দিচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকায় আমরা একটা ভালো জনসভা করলাম। সারা দেশেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘিরে কর্মী-সমর্থকেরা সক্রিয় হয়েছে। সরকার এটাকে ভয় পায়। সেই ভয় থেকে গ্রেপ্তার শুরু করেছে। এর উদ্দেশ্য বিএনপিকে বাইরে রেখে আরেকটি নীলনকশার নির্বাচন করা। কিন্তু সেটা জনগণ হতে দেবে না।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।