Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

লক্ষীপুর আঞ্চলিক অফিস : | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

লক্ষীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মনগড়া বিল দেয়া নতুন সংযোগ ফি বাবদ অবৈধভাবে টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এলাকার চিহ্নিত লোকদের সাথে সখ্যতা গড়ে সংযোগের নামে আদায় করছে অতিরিক্ত টাকা। এছাড়া চলতি মাসেও গ্রাহকদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন গুণ বিল বেশী আদায় করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যুতের যে সংযোগ বিনাম‚ল্যে পাওয়ার কথা, তার জন্যও গুনতে হচ্ছে অর্থ।
গ্রাহকের ব্যবহৃত ইউনিট না দেখেই অতিরিক্ত বিল করা এবং বিল নিয়ে অভিযোগ করতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের। এ অবস্থায় জেলা সদর উপজেলাসহ রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর উপজেলা, রায়পুর পৌর শহরসহ প্রতিটি ইউনিয়নের আশপাশের মানুষ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অতিরিক্ত তিন গুণ বিলের কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
লক্ষীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রায়পুর জোনাল অফিসের একটি স‚ত্র জানিয়েছে, রায়পুর উপজেলায় আবাসিক সংযোগ রয়েছে ৪৬ হাজার ৪৭০টি, বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে ৪ হাজার ৮২৬টি। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৯১টি, মসজিদ-মন্দিরে ৮৭৩টি, সেবামূলক কাজে ৬৭টি, কারখানাসহ বেঙ্গল সু ফ্যাক্টরিতে তিনটি এবং মার্কেটে একটি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ৫৫ হাজার।
এদিকে, সমিতির মাঠপর্যায়ে জনবল রয়েছে ২৬ জন। ফলে অনেক কর্মকর্তাই মিটারের ইউনিট না দেখে মনগড়া ইউনিট বসিয়ে দেন। ফলে গ্রাহকদের ঘাড়ে এসে পড়ে বাড়তি বিলের চাপ। স¤প্রতি বেশি বিল তৈরি করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতেই রোষানলে পড়েন রায়পুর জোনাল অফিসের মিটার রিডার আলমগীর হোসেন। তখন গ্রাহক কপিতে যে বেশি বিল দেখানো হয়েছে, তা কম্পিউটারের ভুল জানিয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসির কাছে ক্ষমা চান তিনি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রায়পুর জোনাল অফিসের ইসি সুলতান আহাম্মেদ জানান, এ মাসে একই বিল দু’বার দেওয়াসহ রিডিংয়ের চেয়ে বেশি বিল আসা সংক্রান্ত বেশকিছু সমস্যার সমাধান করেছেন তিনি। এ জন্য কম্পিউটার অপারেটরকে সর্তক করে নোটিশও দেওয়া হয়েছে। সুলতান আহাম্মেদ বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল করে। এ জন্য গ্রাহকদের অভিযোগ তাকে জানাতে অনুরোধ করেন তিনি। তবে এসবের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকবল কম থাকাকেই দায়ি করেন তিনি।
অন্যদিকে, গত কয়েক মাস ধরে চলছে রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশীর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড সিকদারকান্দি এলাকায় চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নতুন সংযোগ দেওয়ার কাজ। এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি পৌঁছাতেই পল্লী বিদ্যুতের কয়েকজন কর্মকর্তা পরিদর্শনে যান। সেখানে তারা দ্রুত সংযোগ পেতে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ গোলাম হোসেন লাতু ও তার ছেলে শাহাদাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গ্রামবাসীকে পরামর্শ দেন। এরপর থেকে তারা পল্লী বিদ্যুতের রায়পুর জোনাল শাখা ডিজিএমসহ কর্মকর্তা কর্মচারী খরচ বাবত ১৭৩ জন নতুন গ্রাহকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা তুলতে থাকেন লাতু ও তার ছেলে।
নতুন সংযোগে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকারও করেন গ্রাম পুলিশ সদস্য গোলাম হোসেন লাতু ও তার ছেলে শাহাদাত হোসেন। তারা জানান, বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় থাকায় গ্রামের মানুষকে নতুন সংযোগ পেতে সহযোগিতা করছেন তারা।
পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেতে আগ্রহী শামছুল সিকদার জানান, এ পর্যন্ত তিনি চার হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও দুই হাজার টাকা দিতে হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে। শিল্পী আকতার নামে আরেক গ্রাহক জানান, নতুন সংযোগের জন্য তিনি জমা দেন তিন হাজার টাকা। একই কথা জানালেন আরও কয়েকজন। তারা প্রত্যেকেই দেড় থেকে তিন হাজার টাকা করে জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল সিকদার জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিনাম‚ল্যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছেন। অথচ সিকাদার কান্দি এলাকায় সেই বিনাম‚ল্যের বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে পদে পদে টাকা নেয়া হচ্ছে। এর বিচার দাবি করেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রায়পুর জোনাল অফিসের ডিজিএম শেখ মানোয়ার মোরশেদ রায়পুরে যোগ দেওয়ার পর থেকে নতুন সংযোগ নিতে দালালের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে খুঁটি, সংযোগ ফ্রি বাবদ বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করা হচ্ছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ মানোয়ার মোরশেদ। বরং এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে এলাকার বদনাম হবে উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহজাহান কবীর জানান, নতুন সংযোগের বিনিময়ে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি সমিতির নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সরকারের দেওয়া বিনাম‚ল্যের বিদ্যুৎ সংযোগের বিনিময়ে কেউ অর্থ নিলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’ অতিরিক্ত বিল আদায়ের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পল্লী বিদ্যুৎ

২০ জানুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ