পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার/ ও কি সূর্য নাকি স্বপনের চিতা/ ও কি পাখির কূজন নাকি হাহাকার’ (জটিলেশ্বর মুখোপাখ্যায়)। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের যাপিত জীবনের পরতে পরতে এই গানের কলিগুলো প্রবাহমান। দেশজুড়ে একই চিত্র। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘কর্মী’ নির্ভর রাজনৈতিক দল। তাদের কর্মী বেশি সমর্থক কম। অন্যদিকে বিএনপি হলো ‘সমর্থক’ নির্ভর রাজনৈতিক দল। প্রকাশ্যে কর্মীর সংখ্যা কম মনে হলেও জাতীয়তাবাদী এই দলটির দেশজুড়ে বহু সমর্থক রয়েছে; সাংগঠনিক কাঠামোয় পদ-পদবি না থাকায় তাদের খোঁজ কেউ রাখে না। গ্রাম-গঞ্জের বহু কর্মী সমর্থক রিক্সা-ভ্যান-সিএনজি, ট্যাক্সি চালিয়ে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
২০১৫ সাল থেকে হামলা-মামলার ভয়ে কত সমর্থক ঘরছাড়া তার লেখাজোখা নেই। পহেলা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মহাসমাবেশের পর থেকে কী তাদের জীবনে অন্ধকার কাটতে শুরু করছে? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বি. চৌধুরী-ড.কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়ার হাওয়ায় বিএনপির আকাশে কী নতুন সূর্য্যরে উদয় ঘটবে?
বছর খানের আগের কথা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে সরেজমিন রিপোর্ট করতে কক্সবাজার গেছি। উখিয়া, টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইখ্যাংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তমরুর নো ম্যান ল্যান্ডে রোহিঙ্গাদের যাপিত জীবনের দূর্বিসহ চিত্র দেখে চোখ ছলোছলো। প্রতিদিন ধারাবাহিক ভাবে ইনকিলাবে সচিত্র খবর ছাপা হচ্ছে। মন খারাপ। এক বন্ধু পরামর্শ দিয়ে বললো ‘রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে মন খারাপ, হিমছড়ির নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আসো মন ভাল হয়ে যাবে’।
হোটেল থেকে নেমে কিছুক্ষণ ঘুড়াঘুরি; অতপর বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের কলাতলি বীচ-এ সিএনজি খুঁজছি। যাব মেরিন রোড হয়ে হিমছড়ি। রাস্তার পাশে কয়েকটি সিএনজি দাঁড়িয়ে। এই যাবি? ‘স্যার কোথায় যাবেন?’ হিমছড়ি। মেরিন ড্রাইভ দিয়েই যাব। এক ঘন্টা পর ফিরে আসবো। কত নেবে? ‘আপনি যা ভাড়া তা-ই-ই দেবেন’। চলতে শুরু করলো সিএনজি। কয়েক মিনিট পর ‘স্যার এই এলাকায় আমি নতুন আসছি, ভালমতো সবকিছু চিনি না। আপনি চিনিয়ে নিয়ে যাবেন’। দূর ব্যাটা! চিনো না আগে বলবে না? ‘কোন সমস্যা নাই স্যার। খালি রাস্তাটা চিনিয়ে দিবেন’। সিএনজি’র তরুণ চালকের পরনে নীল জিন্স প্যান্ট আর ভি-গলার হলুদ হাফ হাতা গেঞ্জি। ইয়াং ছেলে, জিন্স পরতেই পারে। কিন্তু সিএনজি চালক এতো পরিচ্ছন্ন গোছানো পরিপাটি! মেরিন ড্রাইভ দিয়ে এগিয়ে চলছে সিএনজি। হঠাৎ প্রশ্ন প্রশ্ন ‘স্যার ঢাকা থেকে এসেছেন? ঢাকার খবর কী? রাজনীতির খবর কী? এই সরকার আর কতদিন থাকবে? এবার ভোট হবে তো! আমাদের জীবনের অন্ধকার ঘুচবে তো?’ কথাবার্তা চলছিল। কথোপকথনের এক পর্যায়ে তরুণ জানালো সে ছাত্রদল করে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি বাড়ি। শাহ সুলতান কলেজে পড়েছে। ছাত্রদল করায় তার নামে কয়েকটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে ঘরছাড়া। ঢাকায় সিএনজি চালিয়েছে দুই বছর। এক মাস থেকে কক্সবাজারে সিএনজি চালায়।
দুই. ঈদুল আজহার আগে বন্ধু অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিজান (ডিএল নেতা) ঢাকা থেকে পিক-আপ ভ্যানে কিছু মালামাল নিয়ে চাঁদপুর যান। পথে পিক-আপ চালক বাংলা সিনেমার গান শুরু করে দেয়। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প/ যা কিছু বলার যাও বলে যাও/ যা কিছু দেখার নাও দেখে নাও/ পাবে না সময় আর হয়তো’। ড্রাইভারের গান শুনে জানতে চান ‘কিরে তোর মনে এতো রঙ!’ প্যাসেঞ্জারের এমন প্রশ্ন শুনে ড্রাইভার নিজের জীবনের দুঃকের গল্প শোনান। বলেন, ‘ভাই আমি রাজধানী ঢাকা দক্ষিণের একটি থানার ছাত্রদলের সভাপতি। রাজনীতি করার কারণে আমাকে আজ পিক-আপ ভ্যান চালাতে হচ্ছে। পুলিশী গ্রেফতার আর মামলা মোকদ্দমার ভয়ে এলাকায় থাকি না প্রায় ৬ বছর। মাথার উপর অসংখ্য মামলা ঝুলছে। ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারি না। আয় রোজগারের সব পথ বন্ধ। বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া থেকে তাই পিকআপ চালিয়ে জীবন যাপন করি। এক এলাকায় আবার কয়েক মাসের বেশি থাকতে পারি না। অন্য যায়গায় চলে যাই। যাযাবর বলতে পারেন। আমাদের এই দুঃখের দিন শেষ হবে না ভাই’।
তিন. রমজান মাসে হাইকোট মাজার গেইটে রিকসায় উঠেছি। যাব টিকাটুলির ইনকিলাব অফিস। রিক্সাওয়ালা প্যাডেল মারছে বাকা হয়ে। ঠিকমতো চালাতে পারছে না। বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাস করি ‘কিরে রিক্সা চালাতে পারিস না?’ ‘স্যার নতুন তো’ জবাব দেয়। কতদিন থেকে রিক্সা চালাইস? জবাব আসে ‘এই তিন মাস’। বাড়ি কোথায়? ‘সিরাজগঞ্জ স্যার’। গন্তব্যে পৌঁছে রিক্সা থেকে নেমে অপরিপক্ক রিক্সাচালকের হাত থেকে বাঁচি। ভাড়া দেয়ার সময় পরামর্শের সুরে বলি ‘এভাবে রিক্সা চালালে কেউ তোর রিক্সায় উঠবে না’। ‘স্যার ব্যবসা করতাম। বিএনপি করি, সে জন্য ব্যবসা চলে গেছে। মামলায় জেলও খেটেছি। কয়েক মাস আগে নুতন মামলা খেয়ে গ্রেফতারের ভয়ে এখন বাড়ি ছাড়া। কিছুদিন এখানে সেখানে ঘুরে ঢাকায় রিক্সা চালানো শুরু করেছি’ টাকা হাতে নিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে জবাব দেয় রিকশাচালক। এই হলো বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের চালচিত্র।
এখানে ছোট্ট তিনটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরা হলো। ক্ষমতাসীনদের নিষ্ঠুরতায় দেশজুড়েই প্রায় অভিন্ন অবস্থা। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত পেশাগত কারণে দেশের ৪০টি জেলা ঘুরেছি। গ্রাম গঞ্জের মেঠোপথে মাইলের পর মাইল হেঁটেছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, বিভিন্ন রাজনীতি দল এবং বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থার খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেছি। দেখেছি জেলা-উপজেলা-পৌরসভা-ইউনিয়ন পর্যায়ের হাটবাজার-গ্রাম সর্বত্রই বিএনপির এতো বিপুল সংখ্যক সমর্থক এবং কর্মী রয়েছে যার প্রকাশ মিডিয়ায় খবরে কখনো প্রকাশ-প্রচার হয়নি। হাজার হাজার কর্মী সমর্থক রয়েছেন তারা হামলা মামলার শিকার হয়ে ঘরছাড়া; কেউ স্থানীয় সরকার দলীয়দের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছেন; ঝামেলা এড়াতে কেউ নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য সিঁকেয় তুলে পালিয়ে যাযাবর জীবন যাপন করছেন। এবং বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদলের কর্মী সমর্থক এমন বিপুল সংখ্যা তরুণ-যুবক বছরের পর বছর ধরে বাড়ি ছাড়া হয়ে দূর দূরান্তের শহরে গিয়ে কেউ রিক্সা চালাচ্ছেন, কেউ সিএনজি, কেউ পিকআপ ভ্যান চালাচ্ছেন। ‘পাঞ্জেরি’ কবিতায় কবি ফররুখ আহমেদ লিখেছেন, ‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি/ এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে/ সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে/ তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে/ অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি’। বিএনপির নেতাদের জীবনে সেতারা-হেলাল উঠবে তো? বছরের পর বছর ধরে দূর্বিসহ যাতনার অন্ধকার রাত এবার কাটবে তো? ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।