পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ এবং ভারতের নাকি গলায় গলায় বন্ধুত্ব। গলায় গলায় এতোই খাতির যে বন্ধুত্বের সাথে বাংলাদেশ ভারতের কাছে নিজের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে। ভারতকে কি দেয়নি বাংলাদেশ? ৬৭ বছর ধরে সে করিডোর চেয়ে আসছিল। সেটি এই সরকার দিয়ে দিয়েছে। ১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর থেকে ভারত-চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চাচ্ছিল। ৬৭ বছর পর সেটিও দিয়ে দিয়েছে এই সরকার। বিগত ৭ বছর ধরে সরকার গ্যাস বা পানিভিত্তিক বড় কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেনি। না করে দেশের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনকে বড় লোক করার জন্য কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট বসিয়েছে। আর ভারতকে খুশি করার জন্য ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। পাশের প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরায় দেড় হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি বিশাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের তিতাস নদীকে দ্বিখ-িত করা হয়েছিল। ত্রিপুরার সেই পালাটোনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারি যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পরিবহন করার অনুমতি দিয়েছে এই সরকার। সেই ভারি যন্ত্রপাতি পরিবহন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট রাস্তাঘাট নষ্ট হয়েছে। তারপরেও ভারতীয় বন্ধুত্ব বজায় রেখেছে এই সরকার। এগুলো ছাড়াও ভারত যখন যা চেয়েছে বাংলাদেশ তখন তাই দিয়েছে। বাংলাদেশের নিকট থেকে পেতে পেতে ভারতের এমন একটি অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, এখন আর বাংলাদেশের নিকট থেকে তার চাওয়ার কিছুই নেই। ভারতকে তো সব দেয়া হলো, কিন্তু বাংলাদেশের যে ভারতের নিকট থেকে অনেক কিছু পাওয়ার ছিলো। সাড়ে ৭ বছর পার হয়ে গেল, বাংলাদেশ ভারতের কাছে থেকে কিছুই পায়নি। নতুন করে পাওয়া তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর গঙ্গার পানি নিয়ে ভারতের সাথে যে চুক্তি করে, চুক্তি মোতাবেক সেই পানিও এখন বাংলাদেশ পুরাপুরি পাচ্ছে না। বরং যতই দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশের প্রাপ্য পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে প্রাপ্য পানি থেকে বঞ্চিত করার জন্য ভারত নতুন করে উদ্যোগ নিচ্ছে। গতকাল পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, ভারত হিমালয় থেকে উৎপন্ন সারদা নদীর পানি ভারতের সাবরমতি নদীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ভারত-নেপাল নদী সংযোগ প্রকল্পের অধীনে উজানের পানি সরিয়ে নিচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই নদী প্রকল্পের অধীনে মহাখালী এবং যমুনা নামে পরিচিত সারদা নদীর পানি সংযোগ খালের মাধ্যমে সাবর মতি নদীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাট উর্বরা হবে। বাংলাদেশ এই ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে। বাংলাদেশ এই ব্যাপারে ভারতের নিকট লিখিত পত্রে এই মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, সারদা থেকে পানি সাবরমতিতে সরিয়ে নেওয়া হলে গঙ্গার পানিপ্রবাহ হ্রাস পাবে। ফলে বাংলাদেশ আরো পানি বঞ্চিত হবে।
চিঠিতে আরো বলা হয় যে, উচ্চ অববাহিকা থেকে যদি পানি সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে বাংলা-ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ বিঘিœত হবে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এই মর্মে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, পদ্মায় বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে যে পানিপ্রবাহ রয়েছে সেটি এযাবত কালের মধ্যে সবচেয়ে কম পানি। ভারত মুখে বলছে এক, আর কাজে করছে তার সম্পূর্ণ উল্টাটা। ভারত অতীতেও বলেছিলো এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তার বিগত ঢাকা সফরকালে আশ্বাস দিয়ে ছিলেন যে, বাংলাদেশের সাথে আলোচনা না করে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে ভারত একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। এই ধরনের মিষ্টি কথা ভারত বছরের পর বছর ধরে শুনিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের পদ্মা, তিস্তা ধরলাসহ অসংখ্য নদী শুষ্ক ও বিরান হয়েছে। ছোট ছোট নদীগুলোর কথা তো পরের কথা, খোদ পদ্মাতেই পানির অভাবে শুধু চরই পড়েনি, সেখানে এখন ধান চাষও হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ন্যায্য আশ্বাস দেয়া হচ্ছে বার বার। কিন্তু গজলডোবা থেকে পানি প্রত্যাহার চলছে তো চলছেই। পানির অভাবে তিস্তা ও গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের ভবিষ্যৎও অন্ধকার। শুধু কৃষিতে নয়, শিল্পেও মিঠা পানির প্রয়োজন। সেখানেও এখন মিঠা পানির অভাব দেখা দিয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ এখন সম্পূর্ণ অন্ধকারে। এই সরকার দুটি মেয়াদে এই পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে। ভারতের সাথে পানি সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা তো দূরের কথা দেশের পার্লামেন্টেও পানির সমস্যা নিয়ে একবারও আলোচনা হয়নি।
এসব কারণে জনগণ প্রত্যাশা করে যে, উজান থেকে পানি প্রত্যাহার সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার যতদ্রুত সম্ভব ভারতের নিকট থেকে রিপোর্ট আনবে। অত:পর সেই রিপোর্ট নিয়ে সারাদেশে প্রকাশ্যে আলোচনা শুরু হবে। এসব আলোচনার সূত্র ধরে জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত হবে উন্মুক্ত অধিবেশন। মনে রাখতে হবে, পানি সমস্যা বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা। এমন জাতীয় সমস্যা সমাধানে জনগণকে দূরে সরিয়ে রাখা নয়, বরং তাদেরকেও এব্যাপারে সক্রিয়ভাবে জড়িত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।